২০০৮ সালে নির্বাচন না করতে পারা এবং ১৪ সালে অংশগ্রহণ না করায় এলাকা থেকে একটু বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তিনি। তাই নেতাকর্মীদের ভাষায় মাঠ-ঘাট চষে বেড়ানো ‘পা-ফাটা’ নেতা চান তারা।
তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দলের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ান না নাদিম মোস্তফা। আসেন না এলাকায়। কমিটি দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেন নিজের মতামত। মূল্যায়ন করেন না ত্যাগী নেতাদের। অঙ্গ সংগঠনগুলোর কমিটি না থাকা নিয়েও রয়েছে ক্ষোভ। আবার ২০০৮ সালে বিএনপির টিকিটে নির্বাচন করা অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম। ২ লাখ ৪৩ হাজার ভোটের মধ্যে ১ লাখ ৮ হাজার ভোট পেয়েও হারেন তিনি। রাজনৈতিক পরিবারের এই নেতার ভাই সাত্তার মন্ডল দুই বারের এমপি। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে থাকা এই নেতার রয়েছে কিছু অনুসারী। আবার নতুন মুখ হিসেবে ঢাকার ছাত্রনেতা অপেক্ষাকৃত তরুণ আবু বকর সিদ্দিকও ভিতরে ভিতরে চালাচ্ছেন গণসংযোগ। তবে রাজশাহীর রাজনীতিতে ‘বড়’ ও সাহসী নেতা হিসেবে পরিচিত নাদিম মোস্তফা এমপি থাকাকালীন এলাকায় যে কাজ করেছেন তার সুফল ভোগ করছেন এখনও। এলাকায় না এলেও তার সমর্থক তৃণমূলের সাধারণ মানুষ পছন্দের প্রার্থীর তালিকায় প্রথম দিকে রাখেন নাদিম মোস্তফাকে।
দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা স্বীকার করেছেন এই মুহূর্তে দলের অবস্থা কিছুটা অগোছালো। রয়েছে কিছু সাংগঠনিক দুর্বলতা। দল গুছিয়ে নির্বাচনে গেলে মনোনয়নের বড় দাবিদার হবেন সেই নাদিম মোস্তফাই। তবে তাকে বহিরাগত দাবি করে এলাকার মানুষকে চাইছেন দলের একাংশের নেতাকর্মীরা। বিগত ১০ বছরে বিভিন্নভাবে বঞ্চিত নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ নাদিম মোস্তফার ওপর। তাদের দাবি, দুর্গাপুর-পুঠিয়ায় ধানের শীষ প্রতীক গুরুত্বপূর্ণ। তারা আর বহিরাগত প্রার্থী চান না। এলাকা থেকেই চান পদপ্রার্থী। সিরাজগঞ্জ থেকে এখানে এসে এমপি হয়েছেন। আর এখন যাদের পদ-পদবী দিয়েছেন তারা সবাই ‘হাইব্রিড’ নেতা।
অসন্তোষ কাটিয়ে নির্বাচনের আগে দল এক হতে না পারলে জেতা কঠিন হবে যেকোনো প্রার্থীর জন্য।
পুঠিয়ার যুবদল নেতা নাসির উদ্দিন এ আসনে একাধিক গ্রুপের কথা স্বীকার করে বলেন, এখানে গ্রুপিং রয়েছে। আমরা নজরুল স্যারের সঙ্গে আছি। বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম জুম্মা স্যারের গ্রুপ থেকে নির্বাচিত। স্যারকে মনোনয়ন দিলে আমরা আশাবাদী।
অধ্যক্ষ নজরুলের ছেলে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সেন্ট্রালের সহ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার রাজন বলেন, বিএনপির রাজনীতিবিদরা এখন এসি রুমে। পথে না নামলে রাজনীতি হয় না। আমি বিশ্বাস করি ১০ হাজার লোক রাস্তায় নামলে পুলিশ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। কিন্তু গুটিয়ে ঘরে বসে আছে। এটা ক্ষতির কারণ।
নাদিম মোস্তফার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক ব্যবসায়ীর হাতে চলে গেছে পুঠিয়ার রাজনীতি। তাদের ফায়দা উঠিয়ে নিয়ে চলে গেছে। তারপর পাবলিকের সঙ্গে নেই। দুর্গাপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে কথা হয় বেশ কয়েকজন তৃণমূলের নেতার সঙ্গে। রাজনৈতিক সহাবস্থানটা একটু স্বাভাবিক হওয়ায় একসঙ্গে পাওয়া গেলো দুর্গাপুর উপজেলা যুবদলের সাবেক সভপতি মো. হাতেম আলী, পৌর যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান, ঝালুকা ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি মো. ইলিয়াস আলী, পৌর ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মঈনুল হকসহ কয়েকজন নেতাকে।
তারা বলেন, সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফা মাঠে এসে দেখেন না কারা কাজ করছে দলের জন্য। যারা ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকেই পদ দেন। পদের জন্য টাকা নেওয়ার প্রমাণও আমরা দিতে পারবো। আমরা চাই নামিদ মোস্তফা বাদ দিয়ে যে কেউ প্রার্থী হোক। আবু বকর, ছাত্তার মন্ডল, অধ্যক্ষ নজরুল, গোলাম সাকলাইন যেই হোক কেন আমরা তাকে সাপোর্ট করবো।
নাদিম মোস্তফা বাদ দিয়ে যাকেই মনোনয়ন দিক তার জন্য যেকোনো মূল্যে দল গুছিয়ে আমরা খালেদা জিয়াকে এ আসনটি উপহার দিতে চান।
তাদের ক্ষোভের অবসান হতে না হতেই দুর্গাপুর সদরে গিয়ে পাওয়া যায় বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলের আরও কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে। দুর্গাপুর থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মো. সাইদুর রহমান মন্টু, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুম রানা, সাবেক সেক্রেটারি রঞ্জুসহ কথা হয় কয়েকজনের সঙ্গে।
সদরের এ নেতারা বলেন, দুর্গাপুরে সমসময় একটি ঝামেলা বাঁধিয়ে দিয়ে উনি রাজশাহী-ঢাকায় বসে থাকেন। ধানের শীষ যাকে দেবে তার জন্য আমাদের নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু আমরা পা-ফাটা নেতা চাই। যাবে মাঠে-ময়দানে সবসময় পাবো। এখন থানার যেসব কমিটি রয়েছে সেগুলো নাজিম মোস্তফার পকেট কমিটি। কয়েকজন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কোনো পদেই নেই। যারা দল করার মতো, প্রভাবশালী তাদের কোনো পদ এখানে নেই। উনি তো ১০ বছর এলাকায় আসেননি।
নাদিম মোস্তফার কারণেই এখানে বিএনপির কোনো কর্মসূচি নেই। আর তার পকেট কমিটি তো কোনো কাজই করে না। তাদের কাজ হলো বসে থাকা। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তিনি আঁতাত করে চলেন বলেও অভিযোগ তোলেন তারা।
দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আশরাফুল কবির বুলু বলেন, পুঠিয়া-দুর্গাপুরে ছাত্রদল, যুবদলকে ঠিকমতো কাজ করতে দেন না। রাজনীতিকে বাণিজ্যিকিকরণ করে দলটাকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে গেছেন। বিএনপির এই দুঃসময়ে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীর মতামত নিয়ে দল পরিচালনা করা।
দাপুটে নেতা নাদিম মোস্তফার বিরুদ্ধে যখন এতো অভিযোগ তখন তার ‘পকেট কমিটি’ খ্যাত কমিটির দুর্গাপুর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন,একটি স্বার্থান্বেষী মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসব অভিযোগ সত্য নয়।
এ বিষয়ে সাবেক এমপি নাজিম মোস্তফার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, পুঠিয়া-দুর্গাপুরে বিএনপির অবস্থান শক্ত করেছি আমি। এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ নেই একথা ঠিক নয়। আমার নামে ১৩টি মামলা রয়েছে। কীভাবে যাবো আমি। তবে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। কোনো কাজ করতে গেলে শতভাগ লোক তো নিজের পক্ষে পাওয়া যায় না। আমি বিশ্বাস করি নির্বাচনের আগে সবাই সব ভুলে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষেই কাজ করবে। কোনো কোন্দল থাকবে না।
সাধারণ মানুষের মধ্যেও নাজিম মোস্তফাকে নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একশ্রেণীর মানুষ নাদিম মোস্তফার কাজের জন্য তাকে এখনও পছন্দ করেন। আবার এক শ্রেণী মনে করেন নেতৃত্বে পরিবর্তমান আসা দরকার।
আবার নাদিম মোস্তফা প্রার্থী হলে লড়াইটা কঠিন হবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৭
এএ