ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৯৮ রোহিঙ্গার নাম কর্তনের নির্দেশ

মদতদাতা বদির বিষয় চেপে যাচ্ছে ইসি

ইকরাম-উদ দৌলা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০০ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৫
মদতদাতা বদির বিষয় চেপে যাচ্ছে ইসি

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো তালিকা অনুযায়ী, ৩শ’ ৮৯ রোহিঙ্গার মধ্যে ৯৮ জনকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইতোমধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র অণুবিভাগের মহাপরিচালককে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ৩২ রোহিঙ্গার পরিচয় জানতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও নির্দেশ দিয়েছে ইসি।
 
তবে আওয়ামী লীগের এমপি আব্দুর রহমান বদিসহ রোহিঙ্গাদের মদতদাতা হিসেবে অভিযুক্ত ৫১ ব্যক্তির বিষয়টি চেপে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
 
২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে ২৬ পৃষ্ঠার একটি চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, কক্সবাজার জেলায় ৩শ’ ৮৯ রোহিঙ্গা ভোটার তালিকা অন্তর্ভ‍ুক্ত হয়েছে। এছাড়া বান্দরবান জেলায় ৪৯ রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে। এসব রোহিঙ্গাদের মদদদাতা হিসেবে এমপি বদিসহ ৫১ ব্যক্তির তালিকা জুড়ে দিয়ে ওই চিঠিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
 
এরপর কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে তদন্ত করে দ্রুত প্রতিবেদন পাঠাতে বলে ইসি। সে মোতাবেক গত ০৭ এপ্রিল কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও ছবিসহ ভোটার তালিকার জেলা সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক মো. আলী হোসেন ইসিতে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠান। এতে ১শ’ ৮৪ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে বাংলাদেশি হিসেবে। ৯৮ জনকে রোহিঙ্গা হিসেবে চিহ্নিত করে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

এছাড়া ৭৪ জন ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হননি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ৩২ জনের পূর্বপুরুষ রোহিঙ্গা ছিলেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। একজনের বিষয়ে কোনো মতামত দেওয়া হয়নি।
 
তবে মদতদাতাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে কোনো মন্তব্যই করা হয়নি তদন্ত প্রতিবেদনে। নির্বাচন কমিশনও সে প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই ৯৮ জনের নাম কর্তন করছে। এছাড়া ৩২ জনের নাগরিকত্বে খোঁজ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে। তবে মদদদাতাদের সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেনি।
 
মঙ্গলবার (০৫ মে) ইসির জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মাহফুজা আক্তার নির্দেশনা দু’টি পাঠিয়েছেন।
 
এ বিষয়ে ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এছাড়া এ মুহূর্তে আমি অফিসের বাইরে। তাই আপাতত কোনো মন্তব্য করা যাচ্ছে না।
 
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো চিঠিতে কক্সবাজার সদরে ৪২ জন, টেকনাফে ৭২ জন, উখিয়ায় ছয় জন, মহেশখালীতে ১শ’ ১৩ জন, চকরিয়ায় ৫৫ জন, কতুবদিয়ায় দুই জন ও রামুতে ৯৯ জন রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভ‍ুক্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ৪৯ জন বান্দরবানে ভোটার হতে চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
 
ওই চিঠি অনুযায়ী, এমপি বদি ছাড়াও দুই জেলার বেশ কয়েকজন উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের রোহিঙ্গাদের মদতদাতা হিসেবে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তালিকায় রয়েছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাও। এছাড়া বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ স্কুল ও মাদ্রাসা শিক্ষকের নামও সেই তালিকায় স্থান পেয়েছে।

মদদাতাদের মধ্যে কক্সবাজারের ৪৬ জনের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে খোদ সরকারি দলের এমপি আবদুর রহমান বদির নাম। এছাড়া বান্দরবানে অভিযুক্ত পাঁচ জনের মধ্যে সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাইনুল হকের নাম রয়েছে।
 
বর্তমানে দেশে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের তথ্য রয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে।
 
২০০৮ সালের ভোটার তালিকা শুরু করার সময় রোহিঙ্গা সন্দেহে প্রায় ৫০ হাজার আবেদনপত্র বাতিল করে কমিশন। এরপর ২০১০ সালের হালনাগাদের সময় ১৭ হাজার আবেদনপত্র বাতিল করে।

সর্বশেষ ভোটার তালিকা হলানাগাদ হয়েছে ২০১৪ সালের ১৫ মে থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত।
 
বাংলাদেশ সময়: ০১০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৫
ইইউডি/এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।