ঢাকা: দেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় বেড়েই চলছে রোহিঙ্গা ভোটার। ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় নানামুখী উদ্যোগ নিয়েও তা রোধ করতে পারছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
জানা যায়, স্থানীয় অসাধু চক্রের সহায়তায় প্রতিবার ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময়ই রোহিঙ্গারা নাম-পরিচয় পরিবর্তন করে ভোটার হচ্ছেন। তবে ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, যে প্রক্রিয়ায় হালনাগাদ কাজ চলে তাতে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু প্রতিবার এ কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার কয়েক মাসের মাথায় স্থানীয় লোকজনই ইসিতে রোহিঙ্গা ভোটার চিহ্নিত করে অভিযোগ পাঠান। আর তদন্ত করতে যেয়ে অনেক অভিযোগের সত্যতাও পায় সংস্থাটি।
ইসির উপ-সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়টি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। তাই এ নিয়ে কেবল নির্বাচন কমিশন একা কাজ করলে কোনো লাভ হবে না, হচ্ছেও না। এজন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, রোহিঙ্গাদের ঠেকাতে যত রকম জটিল প্রক্রিয়া গঠন করা দরকার, সবই করছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু প্রশাসন ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তা ছাড়া এদের মোকাবেলা করা যাবে না। অন্যদের সহায়তা না পাওয়ায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে অনেকটা অসহায় নির্বাচন কমিশন। তাই বেড়েই চলছে ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা সংযুক্তির ঘটনা।
২০১৫ সালজুড়ে দেশে সর্বশেষ ভোটার তালিকা হালনাগাদ হয়েছে। সে সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে বিশেষ কমিটি গঠন করে এবং বিশেষ ফরম ব্যবহার করে ভোটার তালিকা হালানাগাদ করেছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে কাউকে ভোটার হতে হলে বাবা, মা, চাচা, ফুফু, দাদা, দাদীসহ অন্য আত্মীয়দের তথ্যও দিতে হয়েছে। যা একজন রোহিঙ্গার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু এরপরও মায়ানমার থেকে আগত ওইসব রোহিঙ্গারা নানা কায়দায় ভোটর হচ্ছেন। আর এতে স্থানীয়রাই সহায়তা করছেন বলে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। ইতোমধ্যে অনেক রোহিঙ্গা ভোটার হয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবসহ মধ্য প্রাচ্যের অনেক দেশে অবস্থান করছেন।
সম্প্রতি কক্সবাজারের মহেশখালী কালারমারছড়া ইউনিয়নের মো. হানিফ নামের এক বাসিন্দা সেখানে অন্তত ১৫ জন রোহিঙ্গা ভোটার হয়েছেন বলে ইসিকে জানিয়েছেন। যাদের নাম ও ভোটার নম্বরও উল্লেখ আছে ওই ব্যক্তির দেওয়া চিঠিতে।
এদিকে টেকনাফের ৩ নম্বর সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মাহমুদা খাতুন নামের এক নারী বাসিন্দা, সেখানে ৩ জন মহিলাসহ অন্তত ২২ জন নারী রোহিঙ্গা ভোটার হয়েছেন বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদকে চিঠি দিয়েছেন।
সম্প্রতি ওই দুই ব্যক্তির অভিযোগ আমলে নিয়ে টেকনাফ, মহেশখালী ও কক্সবাজার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে তদন্ত করে মতামত পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। সংস্থাটির সিনিয়র সহকারী সচিব মাহফুজা আক্তার স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনার অনুলিপি কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকেও দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি ভীষণ জটিল একটি বিষয়। এদের কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। কেননা, তারা স্থানীয়দের সহায়তা নিয়েই ভোটার হতে আসে। এরপরও আমরা টের পেলে তাদের আর ভোটার করি না। কিংবা কেউ ভোটার হয়েছে বুঝতে পারলে, তাকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেই। এর বেশি কিছু নির্বাচন কমিশনের করার নেই। এজন্য সবার সহযোগিতা দরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৬
ইইউডি/আইএ