শেরপুর, বগুড়া থেকে: জ্যামের ধকল কাটিয়ে যখন রাজধানী পার হচ্ছে আমাদের বাস, ততক্ষণে যাত্রীরা ঘুমে বিভোর। রাত খুব বেশি না হলেও যাত্রা দীর্ঘ।
টানা চার ঘণ্টার মতো চলার পর শনিবার (৩০ জুলাই) দিনগত রাত ৪টায় গাড়ি এসে থামলো বগুড়ার শেরপুরে।
বাসের সুপারভাইজার ডাকতে শুরু করলেন, ভাইসব ওঠেন। সময় ২৫ মিনিট। এরমধ্যেই খাওয়া, দাওয়া সব। মনে পড়ে গেলো সেহরির কথা। এভাবেই তো মাইকে রোজাদারদের জাগানো হয় পুরো রমজান জুড়ে।
তবে দুই ডাকের বেশি দিতে হলো না। প্রায় সবারই জানা কোনো হোটেল বা রেস্তোরাঁর সামনেই হয়তো দাঁড়িয়েছে গাড়ি। চোখে ঘুম নিয়েও তাই নামলেন সবাই।
সহকর্মী স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট দীপু মালাকার ডাকছেন নিচে যাব কি না। প্রথমে না করে দিলেও নামতে হলো। কান্ট্রি এডিটর শিমুল সুলতানা নেমেই বললেন-ও ফুড ভিলেজ। এখানে কি ফেরার সময়ও থামবে গাড়ি? বললাম এ পরিবহনে এলে নিশ্চিত থামবে। তার ঝটপট উত্তর, তাহলে গামছা কেনা যাবে। এখানে সিরাজগঞ্জের গামছা পাওয়া যাবে। এ অঞ্চলের গামছার যে বিশাল কদর রয়েছে, সে কথা বাংলানিউজে প্রকাশ হওয়ার খবর তার আগেই জানা।
বাইরের দিক থেকে ফুড ভিলেজের আকার দেখে অবাকই হতে হলো। বেশ বড়।
ভেতরে ডান দিকেই কয়েকটি কাউন্টার। একটি ভারী খাবারের, একটি দই আর অন্যটি হরেক রকমের মিষ্টির।
ভেতরে পুরো ফ্লোরজুড়েই বিছানো টেবিল। পাশেই কয়েকটি টয়লেট। তবে কেবল পর্দা টাঙানো। সেখান থেকে বেরিয়েই যাত্রীরা গোগ্রাসে গিলছেন ভাত, পরোটা, রুটি ইত্যাদি। সঙ্গে ফ্রি হিসেবে টেনে নিচ্ছেন টয়লেট থেকে আসা উৎকট দুর্গন্ধও!
এ নিয়ে অবশ্য তাদের কোনো অভিযোগ নেই। ক্ষুধার কাছে যে পূর্ণিমার চাঁদও ঝলসানো রুটি, তার প্রমাণই হয়তো রাখছেন সবাই। এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেও ব্যবসা কিন্তু রমরমাই। কিন্তু সেবার মান ততটুকুই নিচে, যতটুকু এর মুনাফা।
বারবার জিজ্ঞাসের পরেও দীপু মালাকারকে, খাব কি না তার কোনো উত্তর দেওয়া গেলো না। অবশেষে দই খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্দিষ্ট কাউন্টারে পা বাড়ালাম। পাশ থেকেই এক যাত্রী বিরক্তির সবটুকু ঢেলে দিয়ে বললেন, এটা কি হোটেল না লঙ্গরখানা! লরঙ্গখানাতেও এতো অব্যবস্থাপনা আর দুর্গন্ধ থাকে না!
খাওয়ার রুচি হলো না কোনোভাবেই। ক্ষুধার টানে যারা খাচ্ছেন তারাও খুব সন্তুষ্ট নয়। খাবারের মান যেমন নিম্নমানের তেমন দামও বেশি। বাস মালিকদের যোগসাজশে একেচেটিয়া ব্যবসা করে যাচ্ছে ফুড ফিলেজ। অথচ সেবার কোনো দেখা নেই। এদের বিরুদ্ধে বেশি অযাচিত বিল করারও অভিযোগ রয়েছে।
হোটেল ম্যানেজারের আসনে যে লোকটি বসে আছেন, তিনি বিল নিতেই ব্যস্ত। কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হতে হলো। সময় নেই তার। অবশেষে তিনজনই বের হয়ে এলাম বাইরে।
বাঁ পাশের চত্বরের মতন জায়গায় বেশ ক’টি মুদির দোকান। কোনোটি আবার গামছার। ওটাই আমাদের লক্ষ্য হবে সেটা আগেই বলা হয়েছে। দোকানিকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই এগুলো কিসের তৈরি গামছা? ঘুমের আড়মোড়া ভেঙে তার জবাব, সুতার!
সঙ্গত কারণেই তার সঙ্গে কথায় আর খুব একটা এগোনো গেলো না। আমরা বাসে চেপে যার যার আসনে আসীন হলাম। ডানে-বায়ে দুলকি চালে আবার চলতে শুরু করলো গাড়ি।
বাংলাদেশ সময়: ০৬১৮ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৬
ইইউডি/এএ