ঢাকা: ‘কথাটা বিশ্বাস হলো না! এ মাসেই প্রমাণ পাবেন। ঢাকা জেলা কোটায় পুলিশে চাকরি নিতে হলে অনিয়ম আর তদবিরে কাজ হবে না।
একান্ত আলাপে বাংলানিউজকে এ কথাই বলছিলেন ঢাকার পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ মিজান শাফিউর রহমান।
চলতি মাসেই ঢাকা জেলা কোটায় পুলিশ কনস্টেবল পদে আরো ৬৯৬ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে সামনে রেখে নড়েচড়ে বসেছে সুযোগ সন্ধানীরা।
পুলিশে নিয়োগ দেওয়ার নাম করে লোভনীয় টোপ নিয়ে অনেকেই হাজির হচ্ছেন চাকরিপ্রার্থীদের কাছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও জনপ্রতিনিধিদের আঙিনায়
দৌড়ঝাঁপ বেড়েছে প্রতারক ও দুর্নীতিবাজ চক্রের।
এদিকে, পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ নিয়ে অনিয়ম আর দুর্নীতির কলঙ্ক চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে ঢাকা। সময়টাও বেশিদিন আগের নয়। ২০১১, ২০১২ ও ১৩ সালে কেবল ঢাকার ধামরাই উপজেলাতেই ভুয়া বাসিন্দা সাজিয়ে এক হাজার লোককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল কনস্টেবল পদে। এতে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। কৌশলে জায়েজ করে নেওয়া হয়েছে সেসব নিয়োগ।
আর ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় হাত-বদল হয়েছে মোটা অংকের অর্থ। সামান্য অর্থের বিনিময়ে ভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের কাছে জমি হস্তান্তর আর ফেরতের মতো ঘটনাও ঘটেছে। ওই প্রক্রিয়ায় প্রার্থীকে স্থায়ী বাসিন্দা সাজিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি আর অনিয়ম করা হয়েছে। যে প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে বিতর্কিত হয়েছেন রাজনৈতিক নেতা থেকে সংসদ সদস্য পর্যন্ত। বাদ পড়েননি সাংসদপত্নীও।
সেই আলোকেই বাংলানিউজ মুখোমুখি হয় পুলিশের ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তা শাহ মিজান শাফিউর রহমানের। ২০০১ সালে পুলিশে যোগদান করে দিনাজপুর জেলা, সিএমপি, র্যাব, এসবি ও যশোর জেলায় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা এই কর্মকর্তার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে রয়েছে দু'বার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে ‘জাতিসংঘ শান্তি পদক’ প্রাপ্তি।
পুলিশ সুপার হিসেবে লক্ষ্মীপুর জেলায় সন্ত্রাস ও গডফাদার দমনে অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার স্বাক্ষর রাখা শাহ মিজান শাফিউর রহমান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগে উপ পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব পালন করে এখন দেশের এক নম্বর জেলা ঢাকার এসপি।
এবারের নিয়োগ নিয়ে শাহ মিজান শাফিউর রহমান বলেন, ‘দেখুন আমার পূর্বসূরি বর্তমানে অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান স্যার ঢাকা জেলার স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্য থেকে নিয়োগ-প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত করতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছিলেন। মসজিদে-মসজিদে চালানো হয়েছে ব্যতিক্রমী প্রচার। জুমার নামাজের পর মসজিদে বলা হয়েছে,পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেতে ঘুষ লাগবে না। নিয়োগ হবে যোগ্যতার ভিত্তিতে। আমরা কিন্তু সেই পথেই হাঁটছি। আমরা প্রতিজ্ঞ পুলিশের ভাবমূর্তি বাড়াতে।
তিনি বলেন, ‘ভাবমূর্তি দেখাতে চাই। তদবির তো থাকবেই। মানুষ এটা করবেই। অনিয়ম হয় বলেই মানুষ এটা করে। আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। আমাদের কাজ অর্পিত দায়িত্ব পালন করা। অনিয়ম এড়িয়ে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যোগ্যদের স্থান করে দেওয়া। ’
তিনি আরো জানান, জেলার পাঁচটি উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা যারা এসএসসি পাশ করেছেন, জিপিএ- ২.৫ পেয়েছেন; তারা ব্যাংকে একশ টাকা দিয়ে ফর্ম সংগ্রহ করবেন। লাইনে দাঁড়াবেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেন। মৌখিক ও শারীরিক পরীক্ষায় উতরে গেলেই হলো। তবে খরচ বলতে চাকরির ফর্মের জন্য ওই একশ টাকাই বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৬
এসআর