ঢাকা: মো. মতিউর রহমান। বয়স প্রায় ৭৭।
শুধু মতিউর রহমানই নন, তার মতো অনেক প্রবীণ স্মার্টকার্ড নিতে এসেছেন। কিন্তু তাদের জন্য নেই আলাদা কোনো ব্যবস্থা। এই গরমের মধ্যেই সাধারণ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে। লাইনে দাঁড়িয়ে টোকেন নিয়ে যখন অপারেটরদের বুথে প্রবেশ করছেন, আঙুলের ছাপ বা চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি দিতে সেখানেও তারা কোনো অগ্রাধিকার পাচ্ছেন না।
প্রবীণদের জন্য না হয় কোনো অগ্রাধিকার নেই। কিন্তু শারিরীক প্রতিবন্ধীদের জন্যও কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
মতিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের যুগ্ম সচিব হিসেবে তিনি ১৯৯৬ সালে অবসর নিয়েছেন। আমরা তো বয়সে প্রবীণ। তাই আমাদের যেন হয়রানি না করা হয়।
কথা বলতে বলতে সরকারের সাবেক এ আমলা হাঁপিয়ে উঠছিলেন। পরে অপারেটদের বসার জায়গায় তাকে বসানোর ব্যবস্থা করা হয়। বাংলানিউজের হস্তক্ষেপে এ সময় রমনা থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবা আক্তার হেনা এসে তার স্মার্টকার্ড দ্রুত দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
কিন্তু মতিউর রহমান তো আর একা নন। কয়জনকে এমন সুবিধা করে দেবেন।
মনিরুজ্জামান খানও দাঁড়িয়ে থেকে থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, ৬০ এর উপরে যাদের বয়স তাদের জন্য আলাদা বুথ বা কাউন্টার করা উচিত।
নিলুফার খানের বয়স ৬২ বছর। মেয়েকে সঙ্গে নিয়েই এসেছেন। তিনি বলেন, এভাবে স্মার্টকার্ড নেওয়া কষ্টকর। বয়স্ক, প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো।
পৃথিবীর সব উন্নত সভ্য দেশেই পিছিয়ে পড়াদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। প্রবীণ বা সিনিয়র সিটিজেনদের যেকোনো সেবা আগে দেওয়া হয়। সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ও সিনিয়র সিটিজেনদের কার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের একি অবস্থা! এমন মন্তব্য করলেন নুরুল হুদা।
কাজে যেমন অবজ্ঞা করা হচ্ছে, তেমনি মন্তব্যের বেলাতেও ন্যূনতম সম্মান দেওয়া হচ্ছে না প্রবীণদের।
ঢাকা জেলার দায়িত্বে থাকা ইসির উপ-সচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তা মো. শাহ আলম এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, বয়স্ক বা প্রবীণ কিংবা প্রতিবন্ধীদের জন্য কোনো সুবিধা নাই। এভাবেই স্মার্টকার্ড নিলে নিবে, না নিলে নাই। ওনাদের এখন স্মার্টকার্ড নেওয়ার দরকারই বা কি!
এই বলে তিনি প্রতিবেদককে পাল্টা জিজ্ঞেস করেন, কি করতে হবে বলেন, পরামর্শ দেন। প্রতিবেদক আলাদা কোনো বুথ তাদের জন্য করা যেত না? এমনটি বলার পর শাহ আলম আবারো বলেন, কোনো কিছু হবে না। এভাবেই চলবে।
গত ৩ অক্টোবর থেকে ডিএনসিসির ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটারদের উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং ডিএসসিসি'র ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটারদের সিদ্বেশ্বরী গার্লস কলেজে ক্যাম্প করা হয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার (০৫ অক্টোবর) উত্তরার ক্যাম্পে
বাদশার টেক, দলিপাড়া, আহালিয়ার ভোটারদের কার্ড দেওয়া হচ্ছে। আর রমনার ক্যাম্পে, বেইলি স্কয়ার ও বেইলি রোড এবং মগবাজার ইস্পাহানী কলোনির ভোটারদের কার্ড বিতরণ হচ্ছে।
আগামী ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত উত্তরা এবং রমনা থানায় প্রথম পর্যায়ের স্মার্টকার্ড বিতরণ চলবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৬
ইইউডি/জেডএস