ঢাকা: রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে প্রথম শ্রেণির বিশ্রামাগারের সামনে প্লাটফর্মে বসে ট্রেনের অপেক্ষায় প্রায় দেড়ঘণ্টা পার। সন্ধ্যা ছ’টা থেকে অপেক্ষা, উদ্দেশ্য চিত্রা এক্সপ্রেসে খুলনা যাত্রা।
খোঁজ নিতে স্টেশন মাস্টারের রুমে গিয়ে সাক্ষাত পাওয়া গেলো না। স্টেশনে আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বরত আরএনবি (রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী) সদস্যের কাছে কোন রুম থেকে ট্রেন ছাড়ার ঘোষণা দেওয়া হয় জানতে চাওয়া হলো। স্টেশনের মূল ফটকের বাম পাশের একটি কক্ষ দেখিয়ে দিলেন তারা।
ছোট্ট একটা রুম। টেবিলে ছড়ানো-ছিটানো টিকিট। মুখের সামনে মাইক নিয়ে চেয়ারে বসে টিসি মামুন। কোনো রকমে মাইকে একবার ঘোষণা দিয়েই চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়েন। যেন দায় সেরে বাঁচলেন। তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্টেশন মাস্টার মাহফুজা আক্তার।
টিসি মামুন উঠে পড়লে মাহফুজা আক্তার আরেকবার ঘোষণা দেন। মাইকে ট্রেন ছাড়ার ঘোষণা সব জায়গায় পৌঁছায় কীনা? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্লার্টফর্মের সব জায়গায় মাইকের আওয়াজ শোনার কথা। তবে মাইকগুলোর লাইনে প্রবলেম থাকতে পারে। কালকে (শনিবার) চেক করে দেখতে হবে। ’
পুরো প্লাটফর্মে কয়টি মাইক লাগানো রয়েছে প্রশ্নে স্টেশন মাস্টার মাহফুজা ভ্রু কুঁচকে গায়ের চাদর ঠিক করতে করতে বলেন, কয়েকদিন আগে ২০টি মাইক আনা হয়েছে। সবগুলো লাগানোর কথা।
‘সবগুলোই লাগানো আছে’- পাল্টা প্রশ্নে একটু দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে তিনি বলেন, ১৫টা তো হবেই। পরোক্ষণেই আবার বলেন, এর মধ্যে দশ-বারোটার লাইন মনে হয় ঠিক আছে। বাকিগুলো দেখতে হবে।
ওই রুমে থাকতে থাকতেই দেখা যায়, গন্তব্যের ট্রেনের হদিস ও কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেন কখন ছাড়া হবে তা জানতে বেশ কয়েকজন যাত্রী ছুটে এসেছেন। এ সময় তাদের উদ্দেশ্যে স্টেশন মাস্টারের বার্তা, যেখানে বসে অাছেন সেখানেই থাকেন, মাইকে ঘোষণা করা হবে।
এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে এক যাত্রী বলেন, আমি যেখানে বসেছি, সেখানে একবারও মাইকের আওয়াজ পেলাম না। পরে ওই যাত্রীকে গেটের কাছাকাছি থাকার পরামর্শ দেন স্টেশন মাস্টার।
বিমানবন্দর রেলস্টেশনের প্লাটফর্ম ঘুরে দেখা যায়, স্টেশনের মূল গেটের কাছাকাছি কয়েকটি মাইক লাগানো রয়েছে। গেট থেকে হাতের বামপাশে কয়েক কদম হাঁটলেই চিফ স্টেশন ইন্সপেক্টরের রুম। এরপরেই প্লাটফর্মের বিশাল জায়গায় আর কোনো মাইক দৃষ্টিগোচরে এলো না। এছাড়া পুরো প্লাটফর্মে একটি মাত্র ডিজিটাল স্ক্রিনে ঢাকা থেকে ট্রেন ছাড়ার সময় দেখানো হচ্ছে। সেটাকে ঘিরে যাত্রীদের বেশ জটলাও দেখা যায়।
এ স্থানে দাঁড়িয়ে চিত্রা এক্সপ্রেসের যাত্রী আকাশ বলেন, যেখানে বসে অাছি, সেখানে আমি কোনো ঘোষণা শুনতে পাচ্ছি না। এজন্য বারবার খোঁজ নিতে স্টেশন মাস্টারের রুমে যাচ্ছি, আর ডিজিটাল স্ক্রিনের সামনে অাসছি। ভয় লাগছে, কখন ট্রেন চলে আসে, বেশি সময় তো দাঁড়ায় না।
তবে ঈদের সময় পুরো প্লাটফর্মে একজন লোককে মাইক নিয়ে ঘোষণা করতে দেখেছেন বলেও জানান এ যাত্রী।
আর হুইসেল বাঁজিয়ে গন্তব্যের ট্রেন বিমানবন্দর স্টেশনে হাজির হওয়ায় ছুটতে হলো এ প্রতিবেদককে।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৬
এমসি/জেডএস