নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নির্বাচন ভবনে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এমন কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আগামীতে নির্বাচনে ইভিএম বা যন্ত্রে ভোটগ্রহণ করা যাবে।
তিনি বলেন. ‘বর্তমানে যে নষ্ট ইভিএম আছে, আমরা তেমন কোনো ভোটযন্ত্র প্রস্তুত করতে চাই না। এমন একটি যন্ত্র প্রস্তুত করতে চাই, যা হ্যাক করা যাবে না, ম্যানিপুলেট (ফলাফল কারসাজি) করা যাবে না, ব্যাটারি বেকআপ ভালো থাকবে। ’
এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ২০১০ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের প্রচলন করে। কিন্তু ২০১৩ সালের ১৫ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় একটি কেন্দ্রে একটি ইভিএম মেশিন বিকল হয়ে পড়ে। সেই যন্ত্রটি এখনো ঠিক করতে পারেনি কমিশন।
সচিব বলেন, ‘আমরা এমন কোনো যন্ত্র প্রস্তুত করতে চাই, যা ওইরকম নষ্ট হয়ে যায়। ’
‘ভোটগ্রহণ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যন্ত্রটি ত্রুটিমুক্ত রাখতে হবে। এমন হবে যে-সকাল আটটায় ভোটগ্রহণের পূর্বে ওপেন হবে না। আবার বিকেল চারটা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া নষ্ট হলেও ভোটপ্রদানের তথ্যের বেকআপ থাকবে। কাজেই এসব বিষয় নিশ্চিত হলেই তা নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে। ’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, সংসদ নির্বাচনের জন্য ৪০ হাজার ৫শ’র বেশি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এজন্য অন্তত দুই লাখ ইভিএম বা ভোটযন্ত্র প্রস্তুত করতে হবে। ইটস নট অ্যা মেটার অব জোক। এতো ভোটযন্ত্র তৈরির জন্য অনেক সময় এবং অর্থেরও প্রয়োজন। তাই সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেই কেবল নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে। আর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহার করতে হলে অনেক পরীক্ষামূলক ব্যবহার করে যন্ত্রটি ত্রুটিমুক্ত বলে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। এছাড়া ভোটারদেরও ব্যবহার বিধি শেখাতে হবে। তাই এই সময়ের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম বা ভোটযন্ত্র ব্যবহার করা অসম্ভব।
তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল যুগে যন্ত্রে ভোট নেওয়ার দিকে আমাদের যেতেই হবে। আর ই-ভোটিংয়ের বিষয়টি আরো পরে আসবে। কেননা, যে যেখানেই থাকুক, সেখান থেকেই যেন ভোট দিতে পারেন, এই ব্যবস্থার দিকেও আমাদের যেতেই হবে। প্রযুক্তির ব্যবহারকে পাশ কাটানো যাবে না। তবে যন্ত্রে ভোট নেওয়ার জন্য ভোটার, রাজনৈতিক দল সবাইকেই আগে আস্থায় আনতে হবে। ’
ইভিএমের মতো অন্য কোনো ভোটযন্ত্র যদি তৈরি করা হয়, সেটি কি দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠানই তৈরি করবে- এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘আমরা এজন্য আন্তর্জাতিক টেন্ডার দেবো। দেশের কোনো প্রতিষ্ঠান পারলে কাজ করবে, সমস্যা কোথায়?’
২০১০ সালের ইভিএম প্রস্তুতের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কাজ নিয়েছিল। কিন্তু রাজশাহী সিটি নির্বাচনে ইভিএম নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণ খুঁজে বের করা বা তা সমাধানে বুয়েট অস্বীকৃতি জানায়। ফলে সে সময়ের তৈরি করা ভোটযন্ত্রগুলো বাতিল অবস্থায় রয়েছে। প্রায় ৬ কোটি টাকা রাষ্ট্রের গচ্ছা গেছে এর পেছনে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৭
ইইউডি/জেডএস