সূত্রগুলো জানিয়েছে, ফ্রান্সের ওবারথুর টেকনোলজিসের সঙ্গে ৯ কোটি ব্ল্যাংক স্মার্টকার্ড তৈরি করে দিতে ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি চুক্তি করে ইসি। যার মেয়াদ ছিল ১৮ মাস।
বর্তমানে দেশে ভোটার রয়েছে ১০ কোটি ১৭ লাখের বেশি। এ হিসেবে এখনই আরও ১ কোটি ১৭ লাখের বেশি নাগরিকের স্মার্টকার্ড তৈরি করা প্রয়োজন। তবে তহবিল না থাকায় আপাতত তাদের স্মার্টকার্ড পরবর্তীতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই ভোটাররাসহ আগামীতে যারা ভোটার হবেন, তাদের স্মার্টকার্ড কীভাবে সহজে দেওয়া যায়, তা নির্ধারণে সম্প্রতি একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করেছে সংস্থাটি। যে কমিটিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ এনামুল কবীরও রয়েছে।
কয়েক মাস ধরে যাচাই-বাছাইয়ের পর ওই কমিটি একটি সুপারিশ দিয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে স্মার্টকার্ড প্রস্তুত করে দেওয়ার কাজে সম্পৃক্ত করার বিষয়টি উঠে এসেছে। টেকনিক্যাল কমিটির ওই সব সুপারিশের একটি অনুলিপি বাংলানিউজের হাতে এসেও পৌঁছেছে।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, স্মার্টকার্ডের গুরুত্ব ও প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে কমিটি মনে করে এই কার্ড বাংলাদেশে থেকে ক্রয় করা যেতে পারে। যেহেতু এনআইডি দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং এই তথ্য যথেষ্ট সংবেদনশীল, তাই তথ্যের সুরক্ষা ও বিশুদ্ধতা বজায় রাখতে দেশের প্রস্তুতকৃত কার্ড ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে করে দেশীয় প্রতিষ্ঠনকে সম্পৃক্ত করা হবে এবং বিদেশ নির্ভরতা কমবে। বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) যেহেতু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান, তাই বিএমটিএফ এর বর্তমান অবকাঠামো নিশ্চিত সুবিধা ও পূর্বের কাজের সফলতা বিবেচনা করে দেখা যায়, বিএমটিএফ এই কার্ড প্রস্তুত করতে সক্ষম।
এছাড়া বিএমটিএফ পূর্বে আরো সরকারি কাজ যেমন-ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন, ভেহিক্যাল রেজিস্ট্রেশন প্লেট, ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, কারা কর্তৃপক্ষের জন্য ওয়েব বেইজড প্রিজনার ভ্যান ইত্যাদি প্রস্তুত করে এবং দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে।
এদিকে ওবারথুরের সাথে চু্ক্তি বিশ্লেষণে করে কমিটি দেখতে পায়, তারা প্রতি কার্ড তৈরি করতে ব্যয় হচ্ছে ১ দশমিক ৫০১৫ ডলার। আর বিএমটিএফ যা ১ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলারে দিতে পারবে বলে জানিয়েছে।
তাই জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে স্মার্টকার্ড বিদেশ থেকে আমদানি না করে, কার্ডের গুণগত মান অক্ষুন্ন রেখে যৌক্তিক হারে মূল্য নির্ধারণপূর্বক বিএমটিএফ-এর মতো স্বনামধন্য দেশীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কার্ড ক্রয় করার ব্যাপারে কমিটি সুপরিশ করে।
আর এই সুপারিশের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতিমধ্যে স্মার্টকার্ড প্রকল্প বা আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফল এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্প পরিচালককে নির্দেশনাও দিয়েছে ইসি সচিবালয়।
এ বিষয়ে ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেছেন, আমরা সবকিছু চিন্তা ভাবনা করে দেখছি। নতুন যারা ভোটার হয়েছেন, তাদের কার্ড দিতে হবে। আবার এখন যারা কার্ড পাচ্ছেন, তাদের অনেকের কার্ডেও ভুল আছে। তারা আবেদন করলেও আবার সংশোধিত স্মার্টকার্ড দিতে হবে। আর তা করতে হবে ওই ৯ কোটির বাইরে। তাই নতুন করে অর্থের যোগান দিতে হবে। আর তা সরকারি তহবিল থেকেই যোগান দেওয়া যাবে। এক্ষেত্রে দেশের কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান কার্ড প্রস্তুত করে দিলে সেটা অবশ্যই ভালো।
স্মার্টকার্ড ব্ল্যাংক কিনে নিয়ে তাতে আবার নগারিকের তথ্য কাস্টোমাইজেশন করে ইসি। বর্তমানে মোট ১০টি মেশিনে কার্ডে তথ্য ইনপুট দেওয়ার কাজ হয়। দশটি মেশিন দিনে দেড় লাখ স্মার্টকার্ড কাস্টোমাইজেশন করছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০২ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৭
ইইউডি/এমজেএফ