বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর বারিধারায় ভারতীয় হাইকমিশনের ইন্ডিয়া হাউজ কমপ্লেক্সে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাও এমনটি জানালেন।
হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফর দুই দেশের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, তার এই সফর আরও অনন্য হতে যাচ্ছে কারণ, ভারতের রাষ্ট্রপতি তাকে রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। প্রণব মুখার্জির এটা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিরল সম্মান প্রদর্শন। তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনার মাধ্যমে স্বাগত জানানো হবে। তার জন্য থাকবে বিশেষ রাষ্ট্রীয় ভোজ।
দ্বিপাক্ষিক আলোচনার বিষয়গুলো নিয়ে হর্ষ বর্ধন বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ অনেক কমন বিষয় শেয়ার করে। দুই দেশই লাভবান হয় এরকম বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনায় স্থান পাবে- হাইটেকনোলজি, স্পেস, আইটি, ইলেক্ট্রনিক্স, সিকিউরিটি ও সিভিল নিউক্লিয়ার এনার্জি। আলোচনায় যে বিষয়গুলো এগুবে সেগুলো নিয়ে চুক্তি হবে।
উন্নয়ন কার্যক্রমের বিষয়গুলো নিয়ে তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদার হয়ে অবকাঠামোর উন্নয়ন করবে। এর মধ্যে থাকবে- বন্দর, বিমানবন্দর, সড়ক, রেল ও অন্যান্য সুবিধাগুলো।
‘আমাদের উদ্দেশ্যই হবে বাংলাদেশের উন্নয়নে যেসব বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি সাহায্য করবে সেগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া। উপমহাদেশে আমরা একটি অর্থনৈতিক আন্তঃসংযোগের মধ্যে রয়েছি। সেই জায়গা থেকে বাংলাদেশের সঙ্গেও ভারতের অর্থনৈতিক আন্তঃসংযোগ রয়েছে। ’
এ বিষয়ে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক আন্তঃসংযোগের কারণে ভারতের যেমন বাংলাদেশকে ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়, তেমনি বাংলাদেশেরও ভারতকে ছাড়া। এটি ভাইস-ভার্সা। পারস্পরিক সুবিধার জায়গা নিশ্চিত করে আমাদের এগুতে হবে। সাব-রিজিওনাল কোঅপারেশনের মাধ্যমে এটি অর্জন সম্ভব হবে।
সফরে আমরা সেসব বিষয় ফোকাস করবো যেগুলো আমাদের উন্নয়নে সাহায্য করবে, তিনি যোগ করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের হয়তো ধারণা, আসন্ন সফরে শুধু প্রতিরক্ষা বিষয়ে কথা হবে। মোটেও এমনটি নয়। এই খাতে এর মধ্যেই আমরা পরস্পরকে সহযোগিতা করে চলেছি।
পারস্পরিক সহযোগিতার জায়গাগুলো দেখিয়ে তিনি বলেন, রেকর্ড সংখ্যক বাংলাদেশি সামরিক কর্মকর্তা ভারতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। পাশাপাশি ভারতীয় সেনা কর্মকর্তারাও বাংলাদেশে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। দুই দেশের আর্মি, নেভি ও এয়ার ফোর্সের কর্মকর্তারা যৌথ অনুশীলনে অংশ নিচ্ছেন। এটি একটি দ্বিপাক্ষিক নিয়মিত বিষয়।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, প্রথমবারের মতো আমরা হিউম্যানেটেরিয়ান অ্যাসিসট্যান্স অ্যান্ড ডিজাস্টার রিলিফ (এইচএডিআর) কার্যক্রম হাতে নিচ্ছি। এয়ার ফোর্সকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করা যায়, এইচএডিআর সেই বিষয়টি নিয়ে কাজও নিশ্চিত করবে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বাংলাদেশের অনেকে রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয়গুলোকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে বা নেতিবাচক মন্তব্য করে। আমরা বলতে চাই, সেগুলো ভুল। ইতিবাচক অনেক পদক্ষেপ রয়েছে যা দুই দেশের উন্নয়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। শুধু কিছু সংখ্যক সাধারণ মানুষ নয়, এক শ্রেণির সংবাদমাধ্যমও এগুলো নিশ্চিত না হয়ে উৎসাহিত করে।
অনেক দায়িত্বশীল সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকরাও বিষয়গুলো নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করছে। আমি বলতে চাই, তাদের খবরের সূত্র সম্পূর্ণ ‘কাল্পনিক’, যোগ করেন তিনি।
‘ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। আশা করছি, সফরে ভালো কিছুই হবে যেটা আমাদের দু’দেশকেই উপকৃত করবে। নিজ নিজ স্বার্থের বিষয়ে দুই দেশের অবস্থানই স্পষ্ট। প্রত্যেকেই তাদের সমঝোতার ভিত্তিতে যে সুবিধা পাবে সেটা নিয়েই এগোবে। আমরা সুবিধা দেবো, আমরা সুবিধা নেবো। এটাই প্রধান বিষয়। ’
হর্য বর্ধন শ্রিংলা বলেন, দীর্ঘদিনের সীমান্ত সমস্যার অনেকটা সমাধান হয়েছে। ২০১৫ সালে মোদীর বাংলাদেশ সফরের সময় স্থলসীমান্ত ও জলসীমা সুরক্ষা বিষয়ে দুই দেশের আলোচনা ফলপ্রসূ। দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী এখন যৌথভাবে সীমান্তের চোরাচালান, অপরাধ দমনে একসঙ্গে কাজ করছে। সমুদ্রসীমা নির্ধারণও ছিলো একটি যুগান্তকারী ঘটনা। সমুদ্রসীমায় দু’দেশের নেভি ও কোস্টগার্ড মিলেমিশে সমঝোতার ভিত্তিতে কাজ করছে।
তিনি জানান, সবশেষ প্রচুর সংখ্যক জেলে সাইক্লোনে আক্রান্ত হলে ১৫টি মরদেহসহ বাকিদের ভারতীয় নেভি উদ্ধার করে বাংলাদেশে পাঠায়। একইভাবে বাংলাদেশ অংশে আক্রান্তদের মরদেহ ও জীবিতদের উদ্ধার করে ভারতে পাঠিয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ হওয়ায়।
‘দু’দেশের উন্নয়নে কী করণীয় রয়েছে সে বিষয়টি সামনে রেখে আলোচনা হবে। নরেদ্র মোদীর প্রধান লক্ষ্য ভারতের জনগণের উন্নয়ন, শেখ হাসিনাও উন্নয়ন চান। সে কারণে শেখ হাসিনার ভারত সফরে দু’দেশের জনগণের উন্নয়নের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। ’হাইকমিশনার মনে করেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, জ্বালানি খাতের সহযোগিতা, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি বিনিময়ের ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হতে পারে এ সফরে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের মাধ্যমে যৌথ সহযোগিতা অন্যরকম এক উচ্চতায় পৌঁছে যাবে এবং এতে দু’দেশ উপকৃত হবে।
আসন্ন সফরে শেখ হাসিনা বেশকিছু ব্যবসায়িক আলোচনা ও অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
তিনি জানান, সফরের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ৮ এপ্রিল দিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে শীর্ষ বৈঠক করবেন দুই প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন ভারতের বিরোধীদলীয় নেত্রী ও কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। ওই দিনই এক অনুষ্ঠানে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর পরিবারের সদস্যদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেবেন শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, আমরা শুধু ভালো মিটিং-ই আশা করছি না, আমরা চাই- দুই প্রধানমন্ত্রী এমন কিছু সিদ্ধান্তে আসুন যাতে দুই দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণ সমাজ উপকৃত হবে।
আলমগীর হোসেন
এডিটর ইন চিফ
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলাদেশ সময়: ২০১৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৭
আরও পড়ুন
** বাংলাদেশের কিছু মিডিয়ার ভূমিকা নেতিবাচক