তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘দেশ যখন জঙ্গিবাদের ঝুঁকিতে থাকে, তখন দরকার আলোকিত সমাজের। আলোকিত মানুষেরা সে সমাজ গঠন করেন।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘আলোকিত মানুষ গড়া বা আলোকিত মানুষের জ্ঞান নির্ভর সমাজ একটি চেতনার বিষয়। পরিবার থেকে এর উদ্ভব ও চর্চা না হলে কাউকে জোর করে গ্রন্থাগারে নেওয়া বা বই পড়ানো যায় না। এজন্য অভিভাবকদেরই মূল দায়িত্ব পালন করতে হয়’।
‘কিন্তু আমাদের অভিভাবকরা সপ্তাহে একটি দিনও বাচ্চাদের গ্রন্থাগারে নিয়ে যেতে রাজি নন। এ সময়টি তারা কোচিং সেন্টারের জন্য বরাদ্দ রাখেন’।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের সরকারি ৭০টি গণগ্রন্থাগার দেখ-ভালের দায়িত্ব জাতীয় গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের আর বেসরকারি লাইব্রেরিগুলোকে সহায়তা করে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। ২০১৫-১৬ সালে জাতীয় গণগ্রন্থাগার অধিদফতর বই কেনা, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বাবদ সরকারি বরাদ্দ পেয়েছিল ১৯ কোটি ১৫ লাখ সাত হাজার টাকা। ২০১৬-১৭ সালে এ বরাদ্দ আরো বাড়লেও বই কেনা বাবদ অধিদফতর ব্যয় ধরেছে আড়াই কোটি টাকা। আসন্ন বাজেটে তারা বরাদ্দ চেয়েছে ২২ কোটি ৫৫ লাখ আট হাজার টাকা।
অন্যদিকে বেসরকারি লাইব্রেরিগুলোকে সহায়তা বাবদ জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকারি বরাদ্দ পেয়েছে চার কোটি ৫০ লাখ টাকা। বর্তমানে সহায়তা চাওয়া লাইব্রেরির আবেদন যাচাই-বাছাই চলছে। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বরাদ্দ পেয়েছিল তিন কোটি টাকা।
সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরি তো আছে। কিন্তু বই পড়ার পাঠক নেই। মন্ত্রণালয়ের বাজেট প্রতি বছরই বাড়াচ্ছি। স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। অভিভাবকদের প্রতি বাচ্চাদের লাইব্রেরিমুখী করার আহবান জানাচ্ছি। তারা শিক্ষার্থী ও বাচ্চাদের উৎসাহ দেন না। কিন্তু তাদের সহযোগিতা লাগবে’।
তিনি বলেন, ‘গ্রন্থাগার তো কেবল ইট-কাঠের সুরম্য অবকাঠামো নয়, লাখ লাখ বইয়ের সারি সারি তাকও নয়। এটি একটি পাঠাগারও। সেখানে পাঠক ও নিয়মিত সদস্য থাকতে হবে। তাই এ ক্ষেত্রে বাজেট বিষয় না, চাহিদা থাকতে হবে। চাহিদা না থাকলে যোগানের প্রশ্নও অপ্রয়োজনীয়। আমরা যদি ছেলে-মেয়েদের বই পড়ায় উৎসাহ দিতে না পারি, তাহলে বরাদ্দ বাড়িয়ে কি লাভ হবে?’
সরকার বসে নেই। নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ‘আলোকিত মানুষ গড়া’ প্রকল্পে মন্ত্রণালয় থেকে ১৩ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জাতীয় গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের মহাপরিচালক আশিস কুমার সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা মানুষের মধ্যে হৃদ্যতা কমে যাওয়ায় এবং জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে তাদের পাঠাভ্যাস কমে যাওয়াকে চিহ্নিত করেছি। এক্ষেত্রে আমাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরও গত অর্থবছরে আমরা ৮৬ হাজার বই কিনেছি। পাঠকদের পাঠাভ্যাস গড়তে কাজ করছি’।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, ২০১৫-১৬ বছরে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের কাছে অনুদানের আবেদন জানায় এক হাজার ১৫৫টি বেসরকারি লাইব্রেরি। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সাতশ’ ৪৭টি লাইব্রেরিকে এক কোটি ৮৪ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়। ‘ক’ শ্রেণীর লাইব্রেরিকে ৪০ হাজার টাকা, ‘খ’ শ্রেণীর লাইব্রেরিকে ২৯ হাজার ৫৭০ টাকা ও ‘গ’ শ্রেণীর লাইব্রেরিকে দেওয়া হয়েছে ২১ হাজার টাকা করে।
মোট বরাদ্দের ২০ শতাংশ টাকা মন্ত্রী ও সচিবের জন্য বরাদ্দ থাকায় তারাও বিভিন্ন লাইব্রেরিতে বন্টন করেছেন।
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘বরাদ্দ মূল বিষয় নয়। আসল বিষয় পাঠক তৈরি। পাঠক তৈরি হলে চাহিদা তৈরি হবে। চাহিদা না থাকলে বরাদ্দ দিয়ে কি হয়!’
তিনি জানান, বরাদ্দের অর্ধেক টাকায় নির্ধারিত কমিটির বাছাই করা বই কিনে লাইব্রেরিগুলোতে সরবরাহ করা হয়। বাকি টাকা দেওয়া হয়, লাইব্রেরি পরিচালনার জন্য।
আরও খবর...
** জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে বই আছে, পাঠক নেই!
** ‘জনবল ও অর্থ সংকটে’ বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগার
** খুলনা বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের দুর্দশা চরমে
** ময়মনসিংহের আলোর পাঠশালায় দু’দিন তালা!
** বরিশাল গণগ্রন্থাগারের সেমিনার কক্ষও বেহাল!
** গরুর অভ্যর্থনা মৌলভীবাজার গণগ্রন্থাগারে!
** ফেনীর পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে জম্পেশ আড্ডা
** মানিকগঞ্জ সরকারি গণগ্রন্থাগার কুকুরের বিচরণক্ষেত্র!
** সপ্তাহে ৩ দিনই ছুটি দিনাজপুর পাবলিক লাইব্রেরিতে!
** কুষ্টিয়া পাবলিক লাইব্রেরির হালচাল
** পাঠকের খোরাক সাতক্ষীরা পাবলিক লাইব্রেরিতে
বাংলাদেশ সময়: ১২১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৭
আরএম/এএসআর