হাসপাতাল থেকে নিউইয়র্ক প্রবাসী অপর আবৃত্তিকার মিথুন আহমেদ বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ওপেন হার্ট সার্জারি ব্যর্থ হবার পর চার দিন লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় কাজী আরিফকে।
এদিকে দেশে ও নিউইয়র্কে কিছু সংবাদমাধ্যম আগেভাগেই কাজী আরিফকে মৃত ঘোষণা করে খবর প্রকাশ করায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। কাজী আরিফের শয্যাপাশে থাকা ঘনিষ্ঠজনেরা এর সমালোচনা করেছেন।
শনিবার সকালে মিথুন আহমেদ বলেন, আমাদের আসলে এটুকু অপেক্ষা করলেই ভালো হতো। আমরা জানি কাজী আরিফকে বাঁচানো যাবে না, তারপরেও শেষ প্রত্যাশা সবার থাকে, আর চিকিৎসকের ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করাই ভালো।
আগেও মিথুন আহমেদ বলেছিলেন, যারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন তারা নিঃসন্দেহে ভুল করছেন। কাজী আরিফকে কোনওভাবেই মৃত ঘোষণা করা হয়নি, কিংবা তিনি এখনও মারা যাননি। তার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত জটিল এবং তাকে লাইফ সাপোর্টেই রাখা হয়েছে।
বাংলানিউজকে পাঠানো একটি এসএমএস বার্তায় মিথুন বলেন, ‘অতিকষ্ট ও বেদনা নিয়ে জানাচ্ছি যে বরেণ্য আবৃত্তিকার, মুক্তিযোদ্ধা ও স্থপতি, আমাদের সকলের অতি প্রিয়জন কাজী আরিফ লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। ’
এদিকে, কাজী আরিফকে মৃত ঘোষণার পর নিউইয়র্কে তথা দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। নিউইয়র্কে হাসপাতালে ভিড় করেছেন কমিউনিটির অনেকেই।
নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশি কমিউনিটির পরিচিত মুখ সংবাদকর্মী আকবর হায়দর কিরণ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, কাজী আরিফকে দেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মৃত্যুর আগে তিনি এমন ইচ্ছার কথাই জানিয়ে গেছেন বলে জানান আকবর হায়দার।
তিনি জানান, কথাটি নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক সেখানকার সাপ্তাহিক বাঙালী পত্রিকার সম্পাদক কৌশিক আহমেদকে বলে গেছেন কাজী আরিফ। শনিবার প্রকাশিত বাঙালী পত্রিকায় বিষয়টি উল্লেখ করে লিখেছেন কৌশিক আহমেদ নিজেই।
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবৃত্তিশিল্পী কাজী আরিফের হার্টের একটি বাল্ব অকেজো এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্টারি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেলে চিকিৎসকরা তার বাল্ব পুনঃস্থাপন ও বাইপাস সার্জারির সিদ্ধান্ত নেন।
গত মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) হার্টের বাল্ব পুনঃস্থাপন এবং আর্টারিতে বাইপাস সার্জারি করার সময়েই তার ফুসফুসে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়। যা চিৎসকদের পক্ষে দ্রুত সারিয়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এ কারণেই তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
কাজী আরিফের জন্ম ৩১ অক্টোবর ১৯৫২ সালে ফরিদপুর রাজবাড়ীতে। তবে বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রাম শহরে। এখানেই তার পড়াশোনা, রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্য এসব কিছুরই হাতেখড়ি হয়। তিনি একাধারে একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, আবৃত্তিকার, লেখক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও একজন স্থপতি।
তিনি ১৯৭১ সালে ‘১ নম্বর সেক্টর’ এর মেজর রফিকের কমান্ডে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। এরপর যুদ্ধ শেষে বুয়েটে পড়াশোনা শুরু করেন আর সাথে সমান তালে এগিয়ে যেতে থাকে তার শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততা।
বাংলাদেশ সময়: ২৩১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৭
এমজেএফ/এমএমকে