ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কৃষ্ণচূড়াতলে শাওন, মাধবিলতাতলে মওদুদ! 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪২ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০১৭
কৃষ্ণচূড়াতলে শাওন, মাধবিলতাতলে মওদুদ!  বায়েঁর ছবি: সুরকার আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ। ডানে: অতীতে উচ্ছেদকারী মওদুদ এখন নিজেই উচ্ছেদের শিকার!

ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ আইনি লড়াইয়ে হেরে বাড়িছাড়া। বললেন, ‍ফুটপাতেই থাকবো রাতে। কিন্তু ১৯৮২ সালে এই রাজনীতিবিদ আইনজীবী মওদুদই বাড়ি ছাড়া করেছিলেন একটি পরিবারকে।

তার মতো সেদিন ওদেরকেও এক নোটিশে বের করে দেয়া হয়েছিলো। বাসা থেকে বাইরে ছুড়ে ফেলা হয়েছিল একের পর এক আসবাব।

সেদিন ওই বাসার কিশোরী মেয়েটিকে তার মা পাশের কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসিয়ে রেখেছিলেন।

অমর সুরকার আলতাফ মাহমুদের পরিবারকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছিলেন মওমুদ, এবার নিজেই উচ্ছেদ হলেনসেই মেয়েটি স্বাধীনতাযুদ্ধের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’- গানের অমর সুরকার আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ। তিন যুগ পর এখন মওদুদের বাড়ি উচ্ছেদ আর আর বাড়ির সামনে মওদুদকে ‘গৃহহীন’ হয়ে মাধবীলতার তলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফেসবুকে সেই স্মৃতি টেনেছেন। সেদিনের ১৪ বছরের কিশোরীকে সপরিবারে উচ্ছেদের নায়ক ছিলেন মওদুদ আহমদ। – বাংলনিউজকে শাওন মাহমুদ নিজেই জানিয়েছেন একথা।
তিনি বলেন, সেদিনের সব উচ্ছেদের আইনি কাজে সক্রিয় ছিলেন মওদুদ।

ফেসবুকে নিজের আইডিতে শাওন মাহমুদ লিখেছেন, ‘অনেক শরীর খারাপের মধ্যেও এই ছবিটা আমাকে সকাল-সকাল সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিল। দেশ স্বাধীন হবার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শহীদ পরিবারদের বেশকিছু বাড়ি নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে উপহার দিয়েছিলেন। সেসবের মধ্যে আমাদের বাড়িটি ছিল ১ নং মালিবাগে।
 
'৮২ সালের ফেব্রুয়ারিতে একদিনের নোটিশে সে বাড়িটি থেকে আমাদের উচ্ছেদ করা হয়। একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে স্যুটকেসের ওপর মা বসিয়ে রেখেছিলেন আমায়। বসে বসে পুলিশের তাণ্ডব দেখেছিলাম সেদিন। দোতলা থেকে বাবার ব্যাগ ছুড়ে ফেলছিল ওরা। এলপি রেকর্ডগুলা চূর্ণ বিচূর্ণ করে ফেলছিল বারান্দা থেকে। নিচতলার সঙ্গীতস্কুলের হারমোনিয়াম, তবলা, তানপুরা উঠোনের এখান-ওখানে ছুড়ে ফেলছিল ওরা। জানতাম না রাতে কোথায় থাকবো সেদিন।
 
সেই উচ্ছেদ প্রকল্পের প্রধান উদোক্তা মওদুদকে স্যুট পরে তার উচ্ছেদ হওয়া বাসার সামনে মাধবীলতা গাছের নীচে দাঁড়িয়ে বলতে শুনলাম যে, তিনি রাতে ফুটপাতে থাকবেন। হা-হা-হা মওদুদ সাহেব, '৮২ সালের উচ্ছেদের কথা ভুলি নাই। ভুলবো না। ইটটি মারিলে পাটকেলটি খাইতে হয়। ওহ্ আরেকটা কথা, সেদিন আমরা যদিও জানতাম না, কোথায় থাকবো তারপরও ফুটপাতে থাকবার কথা ভাবিনি। প্রতিবেশীর খালি বাসাটা তাৎক্ষণিক ভাড়া নিয়ে নিয়েছিলাম আমরা।
 
আমি একশো বছর বাঁচবো।  হিসাব নিয়ে তারপর যাবো। ---- বৃহস্পতিবার সকালের দিকে ফেসবুকে এই স্ট্যাটাস দেন শাওন মাহমুদ।

তিনি আরও বলেছেন, মাইক ভাড়া করে হলেও ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয় এটা তিনি শোনাতে চান মওদুদকে।
 
আমেরিকা থেকে কৃষ্ণ রায় নামের একজন লিখেছেন। যিনি মওদুদের প্রতিষ্ঠিত স্কুলে অষ্টম শ্রেণী পযন্ত পড়েছিলেন। তার ফেসবুকে লেখা: 
‘আমার আক্ষেপ ও দুর্ভাগ্য যে আমি ছোটবেলায় মওদুদের বাড়ির সামনে তার করা স্কুলে ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়েছি ও দেখেছি এই লোকটাকে খুব কাছে থেকে। তার বাবা একজন খুব নাম করা ধর্মীয় ব্যক্তি ছিলেন ও তার বিশটি ছেলে হয়েছিল। জনশ্রুতি আছে যে, এই লোকটা তার বাবা ও মাকে শেষ বয়সে অনেক অবহেলা করেছিলেন...’ 

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৩ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০১৭
এসএ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।