স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপ) নির্ভর রাইড শেয়ার ত্রুটিযুক্ত দুর্বল অ্যাপ দিয়ে দেয়া যাবে না- বলে খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে। নীতিমালাটি উন্মুক্ত করে দিয়ে এখন চলছে নাগরিক মতামত গ্রহণ।
এ অবস্থায় রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকের অভিযোগ দেখা গেছে। ঢাকায় এখন অ্যাপ দিয়ে ট্যাক্সি সার্ভিস দিচ্ছে ‘উবার’। অ্যাপ ব্যবহার করে মোটরসাইকেল রাইড শেয়ার করছে ‘পাঠাও’ ‘স্যাম’ ‘বাই-কারস’ ‘আমার রাইড’ ‘ঢাকা মটো’ ‘ইয়েস বাইক’।
নীতিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় যে যার মতো করেই ভাড়া আদায় করছে। আবার যারা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে এতে কাজ করছেন তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ‘পার্সেন্টেজ’ নিয়ে নিচ্ছে অ্যাপ প্রতিষ্ঠানগুলো।
খসড়া নীতিমালায় ভাড়া সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের ভাড়ার হার আপাতত ডিরেগুলেটেড থাকবে। তবে যাত্রী অসন্তোষ সৃষ্টি হলে সরকার ভাড়া নির্ধারণ করে দেবে। ’
এখন যাত্রী নয় যারা রাইড শেয়ার করে ফ্রিলান্সার হিসেবে কাজ করছেন তারাই অনসন্তোষ প্রকাশ শুরু করেছেন।
এই পার্সেন্টেজ নেয়া নিয়ে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ উঠেছে ‘পাঠাও’-এর বিরুদ্ধে। শুধু অতিরিক্ত পার্সেন্টেজই নয় যারা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে মোটরসাইকেল নিয়ে রাইড শেয়ার করছেন তাদের অনেকের পাওনা টাকা দিচ্ছে না পাঠাও-এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে বেশ কয়েকজন বাইকারের।
আবার পাঠাও-তে একজন নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন-এমন অভিযোগের পর সেই বাইকারকে ব্লক করে দেয়া হয়েছে। নীতিমালা না হওয়ায় এর বাইরে আর কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। তবে এরকম ঘটনা প্রায়ই ঘটছে বলে- ফেসবুকে পোস্ট দেখা যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকায় পাঠাও রাইডার সংখ্যা এক হাজারের কিছু বেশি। শুরুতে কয়েকজন তরুণ উদ্যোক্তা পাঠাও সার্ভিস চালু করেন। তারপর গত ফেব্রুয়ারি থেকে তারাই অ্যাপ দিয়ে মোটরসাইকেল সেবা নিয়ে আসেন। যেখানে প্রায় একশো জনের মতো নিজস্ব মোটরসাইকেল চালক ও বাকি ফ্রিল্যান্সার নামিয়ে শুরু হয় সেবাটি।
তার আগে গত বছরের ২২ নভেম্বর ঢাকায় যাত্রা শুরু করে বিশ্বের অন্যতম বড় অন-ডিমান্ড রাইড শেয়ারিং কোম্পানি উবার। অ্যাপে প্রাইভেট কার খুঁজে গন্তব্যে যেতে অ্যাপটির ব্যবহার জনপ্রিয়তা পায়। তার পরই এ জাতীয় সেবাগুলোর বৈধতা দিতে তৎপর হয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। তার কয়েক মাস পরে বিআরটিএ খসড়া একটি নীতিমালা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। মন্ত্রণালয় তাদের ওয়েবসাইটে নীতিমালা উন্মুক্ত করে দিয়ে মতামত গ্রহণ করছে। এরপরই আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের মাধ্যমে নীতিমালা অনুমোদন হবে।
তবে ‘উবার’ আসার আগেই ঢাকায় শেয়ারে মোটরসাইকেল চলাচলের অ্যাপ ‘শেয়ার এ মোটরসাইকেল’ (স্যাম) চালু হয়। তবে রাইড শেয়ার নিয়ে বিআরটিএর নীতিমালার অপেক্ষায় ততটা জোরেশোরে তারা চালু করতে পারেনি। সেবার মান ও প্রযু্ক্তিগত নিরাপত্তার দিক দিয়ে অন্যান্য অ্যাপ থেকেও তাদের মান উন্নত হলেও জনপ্রিয়তায় পাঠাও থেকে পিছিয়ে পড়ে তারা।
অন্যদিকে, ফেসবুকে ব্যাপক ‘বুস্ট’ চালিয়ে পাঠাও ছড়িয়ে পড়ে। তবে পাঠাও অ্যাপ ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এর বাইকাররাই।
বাইকারদের অ্যাপটিতে নিয়মিত ত্রুটি নিয়ে জানালেও তা ঠিক করেনি কর্তৃপক্ষ। ভুল দূরত্ব ও ভুয়া ভাড়ার হিসেব আসে প্রায়ই। শুরুর দিকে একজন ফ্রিল্যান্স বাইকারের প্রাপ্ত ভাড়া থেকে ৩০ ভাগ কেটে নিতো পাঠাও। পরে বাইকারদের আপত্তির প্রেক্ষিতে তা কমিয়ে ২০ ভাগ কমিশন নিতে শুরু করে পাঠাও। কিন্তু তাতেও আপত্তি জানাচ্ছেন সব বাইকরারা। এসব আপত্তি কানে নিচ্ছে না পাঠাও। এ কারণে পুরাতন অনেক বাইকারদের বের করে দেয়া হয়েছে।
এদের মধ্যে অনেকেই পাঠাও-এর কাছে জনপ্রতি কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা করে পান। যেগুলো এখনও দিচ্ছে না পাঠাও।
এ বিষয়ে পাঠাও কর্তৃপক্ষের বক্তব্য চাইলে সরাসরি তারা কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তাদের নিযুক্ত পাবলিক রিলেশন বিভাগ থেকে লিখিতভাবে অভিযোগ সম্পর্কে বলা হয়, ‘আরও বেশি ব্যবহার উপযোগী এপ্লিকেশন তৈরি করতে পাঠাও পরিবার কাজ করছে। ’
‘আর পেমেন্ট প্রসেসটি চলমান এবং ক্রমানুসারে চালকদের ফি পরিশোধ এবং চালকদের কাছ থেকে বকেয়া পেমেন্ট আদায় করছেন তারা। তাদের কার্যক্রম স্বচ্ছতার সাথে অনলাইনে রেকর্ড রাখেন। এছাড়া কোনো ধরণের দুর্নীতি এবং অনিয়ম প্রশ্রয় দেন না- বলে লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়।
তবে পাঠাও রাইডারদের অভিযোগ-‘এস্টিমেট ফেয়ার দিয়ে চলছে পাঠাও। যার ফলে কেউ যদি কয়েক কিলোমিটার ঘুরে ওই একই গন্তব্যে যায় তাহলে ভাড়া শুরুতে যেটা দেখিয়েছিলো সেটাই আসে। যা এই অ্যাপটির একটি ভুল।
আর সেবা গ্রহীতা রাইডটি বাতিল করে দিলেও ‘পাঠাও’ রাইডটি ধরে নিয়ে চালকের ২০ ভাগ কমিশন কেটে নিচ্ছে। আবার প্রমো কোড ব্যবহারে সেবা গ্রহীতা যে ১০০ টাকার বোনাস পান তা থেকেও আবার ২০ ভাগ কমিশন কেটে নেয় পাঠাও। কিন্তু এখানে রাইডার কোন টাকা পাচ্ছে না।
আর প্রমো কোড ব্যবহার করে যে চালক বিনা টাকায় সেবাগ্রহীতাকে সেবা দেন সে টাকাগুলো চালকের একাউন্টে প্রায়ই দেয় না পাঠাও।
পাঠাও এর কাছে ৫ হাজার টাকা পান মোটরসাইকেল চালক রায়হান কবির। যিনি শুরুর দিকে পাঠাও রাইড করতেন। তার মতো আরও বহু মোটরসাইকেল চালক পাঠাওয়ের কাছে টাকা পান। দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলায় তাদেরকে ব্লক করে বের করে দেয়া হয়েছে।
আবার পাঠাও-এর ফেসবুক পেইজে কমেন্টে এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে, যেখানে রাইডারা বলেছেন, ‘পাঠাও অ্যাপটি ফিল্টারিং করে চালানো হয়। সেবা গ্রহীতার রিকোয়েস্ট প্রথমে পাঠাওয়ের কাছে যায়। সরাসরি তা পান না রাইডাররা। যে কারণে ফ্রিল্যান্সদের রেখে আগে বেতনভুক্ত ড্রাইভারদের রিকোয়েস্ট দেয়া হয় যে কারচুপি পদ্ধতি খসড়া নীতিমালারও বিরোধী।
পাঠাও-এর এসব অভিযোগের বিষয়ে বিআরটিএর বক্তব্য জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির সচিব মুহাম্মাদ শওকত আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘নীতিমালা না হলেও এমন অভিযোগে পাঠাও-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাবে। আর ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমে চিহ্নিত করে রাখলে পরবর্তীতে পাঠাও- কে লাইসেন্স দেয়া হবে না। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩১ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০১৭
এসএ/আরআই