নিয়ম অনুযায়ী ফ্লাইটের নির্দিষ্ট সময়ের ৬ ঘন্টা আগে হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশনের কাজ শুরু হয় রাজধানীর আশকোনার হজ ক্যাম্পে। সে হিসাবে বিমানের বিজি ৫০৪৫ ফ্লাইটটির যাত্রীদের ইমিগ্রেশন শুরু হওয়ার কথা দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে।
এবার হারুন-উর-রশীদ ছোটেন এভারনিউ হজ এজেন্সির প্রতিনিধিদের কাছে। এজেন্সির প্রতিনিধিরা দুপুর আড়াইটায়ও তাকে জানান, ফ্লাইটটি যথাসময়েই ঢাকা ছেড়ে যাবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই টিকেট দেয়া হবে। কিন্তু দুপুর পৌনে তিনটায় এভারনিউ হজ এজেন্সির কর্মকর্তারা তাকে জানান, ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু এখন কোথায় যাবেন হারুন-উর-রশীদ? থাকবেনই বা কোথায়। সন্ধ্যায়ই ফ্লাইট ভেবে টাকাও নিয়ে আসেননি খুব একটা। খাবেন কী!
একইভাবে বিজি ৫০৪৫ ফ্লাইটটিতে হজে যাওয়ার কথা ছিলো ময়মনসিয়হের মো: মুজিবুর রহমানের। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বাড়ি থেকে সবার কাছে বিদায় নিয়ে এলাম। এজেন্সি থেকে তো এই ফ্লাইটের সময়ই দেয়া হয়েছিল! এখন তারা বলছে, বিমান নাকি তাদের কিছু জানায়নি।
এভারনিউ হজ এজেন্সির কর্মকর্তা আবদুল আলীম বাংলানিউজকে দুপুর তিনটায় বলেন, ফ্লাইট যে স্থগিত করা হয়েছে সেকথা বিমান আমাদের জানায়নি। এখন এতো যাত্রী আসছেন তারা কোথায় যাবেন!তাদের থাকা খাওয়ার সব কিছুর ব্যবস্থা বিমানেরই করা উচিত। কিন্তু বিমান তা করবে না। এই দায় তো আমাদেরও না। দায় পুরোটাই বিমানের।
তবে হজ ফ্লাইট বাতিলের বিষয়ে আগেই এজেন্সিগুলোকে জানানো হয়েছে বলে দাবি করেন বিমানের মুখপাত্র শাকিল মেরাজ।
তিনি বাংলানিউজকে বলেছেন, যেসব এজেন্সি এ ধরনের অভিযোগ করছে তা মোটেই সত্য নয়। পুরোপুরি ভিত্তিহীন। ফ্লাইট যে স্থগিত হয়েছে তা আমরা এজেন্টদের আগেই জানিয়ে দিয়েছি। তারা যদি তা মানতে না চান তাহলে আমাদের কীইবা করার আছে! আমরা সব কিছু নিয়মের মধ্যে থেকেই করছি।
এভাবেই চলছে দু’পক্ষের রশি টানাটানি। এ বলছে ওর দোষ, ও বলছে এর। এভাবেই ফ্লাইট শিডিউল বিপর্যয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও হজ এজেন্সিগুলোর সমন্বয়হীনতার গ্যাঁড়াকলে পড়ে নাজেহাল হচ্ছে হজযাত্রীরা। ভুল বা ব্যর্থতার দায় কোনো পক্ষই নিতে রাজি নয়।
চলতি বছরের হজ ফ্লাইটের ক্ষেত্রে বিমানে এ পর্যন্ত ১২টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। আর তিনটি ফ্লাইট স্থগিত হয়েছে। এর মধ্যে রোববার স্থগিত হওয়া বিজি ৫০৪৫ ফ্লাইটটি ৯ আগস্ট ভোর পাঁচটায় যাত্রা করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে বিমান।
অন্যদিকে যাত্রীদের এ ধরনের হয়রানি রোধে সমন্বিত একটি টিম থাকা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বাংলাদেশ হজযাত্রী কল্যাণ পরিষদ।
সংগঠনটির সভাপতি ড. আবদুল্লাহ আল নাসের বাংলানিউজকে বলেন, বিমান, হজ এজেন্সি, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মধ্যে শুরু থেকেই চলছে সম্বনয়হীনতা ও পারস্পরিক দোষারোপের খেলা। কিন্তু এর ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ হজ যাত্রীদের। সরকারের উচিত সব পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সমন্বিত টিম গঠন করা। এর ফলে কাজ যেমন সুসমন্বিত হবে, তেমনি জটিলতাও দূর হবে অনেকাংশে।
বাংলাদেশ সময়:১৬৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৭
ইউএম/জেএম