আর বিভাগীয় শহর রাজশাহীর পদ্মাতীরে এসে মনে হয়েছে, রাজশাহীও তো পারে। তাহলে ঢাকা নয় কেন?
রাজশাহীর পদ্মা আর ঢাকার বুড়িগঙ্গার ভৌগোলিক অবস্থান-পারিপার্শ্বিক অবস্থার হয়তো বিস্তর ফারাক।
শুক্রবার (১১ আগস্ট) বিকেলে পদ্মাপাড়ে গিয়ে আরেকবার মনে হলো, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা। কলকাতাকে লন্ডন আর গঙ্গাপাড়কে টেম্পস্ নদীর পাড় বানাতে চেয়েছিলেন বলেই সেখানে আট কিলোমিটার পাড়জুড়ে অন্তত কিছু একটা করতে পেরেছেন। কলকাতাকে নীল সাদায় মুড়ে কিছুটা হলেও দিতে পেরেছেন পরিচ্ছন্নতার তকমা। হাজার হাজার মানুষ এখন গঙ্গাপাড়ে প্রাতঃভ্রমণ সারেন, বিকেল কাটাতে যান, ফুচকা-পাউভাজি খান, পশ্চিমতীরে সূর্যাস্ত দেখেন। প্রেমিক যুগল নদীর বিশালতার দিকে তাকিয়ে জীবনের মানে খোঁজেন আর রবীন্দ্রসঙ্গীতের মধুর সুর শোনেন পাখির কলতানে ডুবে। মন চাইলে নাও ভাসান গঙ্গায়।
পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি, গোছানো রাজশাহীর কারিগর সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বদলে দিয়েছেন শহরের মানুষের রুচিকে। ২০১২ সালের অক্টোবরে সবার জন্য খুলে দেওয়া এ বাঁধে শহরের লাখো মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস নিতে ছুটে যেতে পারেন। ঘণ্টায় ৫-৭শ’ টাকায় নদীতে ঘুরে বেড়াতে পারেন ইচ্ছেমতো। না, টেম্পস্ বা গঙ্গাতীর নয়, বাংলার পদ্মাকে লিটন সাজিয়েছেন বাংলার মতোই। কিছু সীমাবদ্ধতা হয়তো রয়েছে, কিন্তু শুরুটা করতে পেরেছেন তিনি- এটাই বা কম কি!
টি-বাঁধের দিকে পুলিশ লাইনের কাছে এসে শেষ হয়েছে বাঁধ। পাঁচ কিলোমিটারের শহররক্ষা বাঁধটিকে কেন্দ্র করে পদ্মাপাড় হয়ে উঠেছে শহরের প্রধান বিনোদনকেন্দ্র।
সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠেই নজরে পড়ে, বটগাছ লাগানো হয়েছে কয়েক মিটার পর পর। বড় বটগাছটির নিচে বসে দেখা যায় পদ্মার ভয়াল রূপ। বাঁধ ধরে এগোতে থাকলে পাড়ে লাগানো মন আকুল করা জারুল আর রাধাচূড়া চোখ আঁকড়ে ধরে। ফুলের সঙ্গে এখানে ফুলের মাখামাখি।
জারুল-রাধাচূড়ার ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে টগর, স্পাইডার লিলি, কাঠবেলি। নিচে সবুজ গাছে ঢাকা। পাড়ে রয়েছে আরও কিছু বড় গাছ। টি-বাঁধে লাগানো ছাতাগুলো দূর থেকে কক্সবাজারের কিটকটের মতো লাগে। আসলে সেগুলো চেয়ার-টেবিল পেতে ফুচকা, চটপটি খাওয়ার জায়গা। দর্শনার্থীরও কোনো কমতি নেই।
বাঁধের রাস্তায় আবার কিছুদূর পরপর সিমেন্টের পিলার বসানো। আটকানো রাস্তা, তবে বাইকের জন্য। এখানে বাইক চালানো নিষেধ। দু’তিন কিলোমিটার এগিয়ে বালুঘাটে লালন শাহ পার্ক এলাকায় রয়েছে মুক্তমঞ্চ। এখানে চলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, নদীর পাড়ে দক্ষিণা হাওয়া খেতে খেতে দেখে মন ভোলে দর্শনার্থীদেরও। মঞ্চের গোল গ্যালারি কোনো অনুষ্ঠান না থাকলেও থাকে পরিপূর্ণ।
আরেকটু এগিয়ে বড়কুঠি ফ্রি ওয়াই-ফাই জোন সবচেয়ে জমজমাট। এদিকটার আরও একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, পাড় ঘেঁষে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন ফল-ফসলের গাছ। কিছু জায়গা ফাঁকা করে মুখোমুখি বসানো হয়েছে চেয়ার-টেবিল। অন্য রেস্টুরেন্টও রয়েছে। নদীর পাড়ে প্রকৃতির একান্ত সান্নিধ্যে বসে খাওয়া-দাওয়ার মতো শান্তি আর কোথায় আছে!
আবার নদীতে ঘুরতে চাইলে রয়েছে নৌকা। ১৫ মিনিটে জনপ্রতি ২০ টাকা। ঘণ্টা হিসেবে ৫-৭শ’ টাকা।
নিরাপত্তায় থাকা পুলিশের কনস্টেবল মফিজুর রহমান জানালেন, রাজশাহী জেলার আগের পুলিশ সুপার (এসপি) নিসারুল আরিফ এদিকে বেশ দেখাশোনা করতেন। ফলে এখানে নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা নেই। বাঁধে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরা রাত দশটা পর্যন্ত থাকতে পারেন।
ঢাকা শহরে নিশ্বাসের বাধা না পেয়ে যাওয়ার জায়গা নেই। বিনোদনের জায়গার বড়ই অভাব। যা পূরণ করতে পারতো বুড়িগঙ্গা। কিন্তু অনেকবার বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বললেও তা রয়ে গেছে খাতা-কলমে। লন্ডন, কলকাতা না হোক, অন্তত রাজশাহীকে দেখেও কি কাজ শুরু করতে পারে না ঢাকা?
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৭
এএ/এএসআর
আরও পড়ুন
** ‘নির্বাচিত হলে গ্রামেও আনবো ডিজিটাল সুবিধা’
** এমপি হলে পুরো বেতন অসচ্ছল নেতাকর্মীদের দেব
** ভরসন্ধ্যায় নির্বাচনী উত্তাপ রাজশাহী মহানগর আ'লীগ অফিসে
** এই আমাদের বিমানবন্দর রেলস্টেশন!