কোনোকিছু না ভেবেই নৌকায় ওঠা। উঠে জানা গেলো ঘাটে দাঁড়ানো বড় নৌকাটির গন্তব্য কুড়িগ্রামের উলিপুরের বজরা গ্রাম।
কিন্তু কষ্ট দেখে বন্যাকবলিত বজরা গ্রামের হাজেরার সহানুভূতির বাণী শুনে সে কষ্ট দূর হয়ে গেলো। কষ্টের ভিতরও কত সাবলীল তারা। কত সরল এখনও এলাকার মানুষ। নৌকা ওঠা অব্দি কোথায় যাবো, কীভাবে গেলে কষ্ট হবে না সব বলতে থাকলেন। ঘরের চাল ছোঁয়া পানি এ কদিনেই সয়ে গেছে তাদের।
শ্যামারপাট চান্দরবাজার, জিগাবাড়ি গ্রামগুলো পানির নিচে। ডুবে গেছে এলাকার সব কাঁচা পাকা রাস্তা। গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম এখন নৌকা। নৌকা থেকে নেমেই পা ডুবাতে হয় পানিতে।
কামরুন্নেসা, গৃহবধূ; বাবার বাড়ি দহবন্দ থেকে শ্বশুরবাড়ি এলেন নৌকায় করে। বাবার বাড়িতে পানি। নিজের কষ্টের মধ্যে দেখতে গিয়েছিলেন বাবাকে। তারা বাড়িতে মাচা তৈরি করে থাকেন। সামান্য উচুঁ জায়গায় থাকছে গবাদিপশু।
মাঝি লিয়াকত আলীর বাড়ি জিগাবাড়ি। ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় দিন কাটছে স্কুলঘরে। কোনো ত্রাণ পাননি এখনও। তবে নিজে নৌকা চালিয়ে পেটের ভাত যোগাড় করলেও পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজনের কষ্টে ব্যথিত তিনি।
ঘাঘট থেকে একটু পরেই নৌকা চলা শুরু করলো মাথা পানিতে ডুবে থাকা ফসলের গাছের উপর দিয়ে। লিয়াকত ও জামিল জানালেন, এসব জায়গায় ধান, গম, পাট, বাদাম, কলা প্রভৃতি ফসল ছিলো। এই পাঁচদিনের বন্যায় সব শেষ। কোথাও কোথাও পাট গাছের মাথা আর কয়েকটি বাড়িসহ কলাঘাছ ঘেরা দ্বীপ গ্রাম ছাড়া চারদিকে কিছুই দেখা মেলে না।
‘পাকা প্রাইমারি স্কুলটিও দাঁড়িয়ে গলাপানিতে। এসব জায়াগায় এখন ৬ থেকে ১০ ফুট পানি,’ বলেন লিয়াকত।
শ্যামারপাট চান্দরবাজার গ্রামের যেখানে ছোট খেলার মাঠ ছিল, সেখান দিয়ে রেইনট্রি আর বাঁশকঞ্চি ঠেলে এগিয়ে চললো নৌকা। চরের ফসলি ক্ষেত পেরিয়ে আধাঘণ্টায় পৌঁছালো মূল তিস্তায়। এখান থেকে একটি শাখা আবার মিশেছে ব্রহ্মপুত্রে।
তিস্তার ওপার কুড়িগ্রামের উলিপুরের বজরা ইউনিয়নের অবস্থা আরও করুণ। মূল ঘাটপারের রাস্তা ডুবে থাকায় নতুন জায়গায় ভিড়ছে নৌকা। ফসল পানিতে ডুবে সব শেষ এখানকার নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর। পানি আরও বাড়লে কি হবে সে চিন্তায় মশগুল বন্যা কবলিত মানুষগুলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৭
এএ/এমএ