বাংলানিউজে শুক্রবার (০৩ নভেম্বর) ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিকুলের ভুলে ভরা বই শিক্ষার্থীদের হাতে’ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে উপজেলা প্রসাশনের টনক নড়ে। পুরো জেলাজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মো. মোবাশশেরুল ইসলামের নির্দেশে শনিবার (০৪ নভেম্বর) উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বইগুলো মোহাজিরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২৫০টি বই জব্দ করেন। বাকি ৫০টি পরে জব্দ করা হবে বলে জানান। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রথমে বাংলানিউজকে বলেছিলেন ৪০০টি বই ওই স্কুলে বিলি করা হয়েছিলো।
তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ এবং মোহাজিরাবাদ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর উপর ভুলে ভরা এবং তথ্যবিকৃতির অপচেষ্টামূলক বইটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণের দায় অন্যের উপর চাপাতে চাইছে।
সরেজমিন মোহাজিরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে গেলে দেখা যায় বিকুল চক্রবর্তীর ‘আপন আলোয় বিশ্বভুবন’ বইটির প্রচ্ছদ সম্পূর্ণ পরিবর্তিত। এর কাভার পেজের ভেতরে মোহাজিরাবাদ ম্যানেজিং কমিটির ১২ সদস্যদের ছবিসহ নাম প্রকাশ করা হয়েছে।
ভুলে ভরা বইটি কেন ২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের হাতে বিলি করা হলো এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধান শিক্ষক কামরুল হাসান বলেন, ‘বিকুল চক্রবর্তী আমার স্কুলে একদিন এসে আমাকে তার ‘আপন আলোয় বিশ্বভুবন’ বইটি দেখান এবং এ বিদ্যালয়ে বিতরণের জন্য অনুমতি চান। আমি দেখি যে এর ভেতরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর ছবি, শ্রীমঙ্গল সেন্ট মার্থাস বিদ্যালয়ের ছবি এবং খুলনার একটি বিদ্যালয়ের ছবিও রয়েছে। ’
তিনি আরো বলেন, ‘বিকুল চক্রবর্তীর অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমি এ বিষয়টি স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে কথা বলে বইটি আমার স্কুলে বিতরণ ব্যাপারে আমাদের সম্মতির কথা জানাই। বিকুল ২৩ অক্টোবর আমাকে ফোন দিয়ে জানান, যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ অন্যদের নিয়ে তিনি আগামীকাল ২৪ অক্টোবর আমার স্কুলে বইটি বিতরণে আসবেন। পরে ২৪ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ অন্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ১৪০টি বই বিতরণ করে গেলেন। ’
বঙ্গবন্ধুর উপর লেখা বইটি বিলি করার জন্য ইউএনও ও শিক্ষা কর্মকর্তাকে আপনি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এই বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক কামরুল হাসান বলেন, ‘এটি আদৌও সত্য নয়। আমি উনাদের আমন্ত্রণ জানাইনি। বিকুল চক্রবর্তী তাদের নিয়ে এসেছেন। এখন আমাদের উপর তারা দোষ চাপাতে চাইছে। ’
তবে প্রধান শিক্ষক কামরুল হাসানের এই অভিযোগ আবারো অস্বীকার করেছেন শ্রীমঙ্গল মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দীলিপ কুমার বর্ধন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মোহাজিরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর উপর ভুলে ভরা এবং তথ্যবিকৃতির অপচেষ্টামূলক বিকুলের এই বইটি ছাপাতে সহযোগিতা করেছে। তাদের ম্যানেজিং কমিটির ছবিও আছে ওই বইয়ে। আমার অনুমতি না নিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশে আমার নামটিও ভুল লিখেছে বইটির সর্বশেষ সংস্করণে।
এদিকে, শ্রীমঙ্গল শহরের অপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেন্ট মার্থাস বিদ্যালয়েও বিতরণ করা হয়েছে বিকুল চক্রবর্তীর এই ভুলে ভরা বইটি।
শনিবার বিকেলে সরেজমিন সেন্ট মার্থাস বিদ্যালয়ে গিয়ে কথা হয় বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সিস্টার রিক্তা গোমেজের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর উপর লেখা ‘আপন আলোয় বিশ্ব ভুবন’ বইটিকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা বিকুল চক্রবর্তীর অনুরোধে ৫০০ কপি বই গ্রহণ করি। কিছু বই ১০ টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিলি করাও হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর উপর রচিত এই ভুলে ভরা এবং তথ্যবিকৃতির অপচেষ্টামূলক বইটি প্রমাণস্বরূপ উপস্থাপন করলে সিস্টার রিক্তা গোমেজ বিস্ময় প্রকাশ করেন।
বঙ্গবন্ধুর উপর ভুলে ভরা এবং তথ্যবিকৃতির অপচেষ্টামূলক ‘আপন আলোয় বিশ্ব ভুবন’ বইটি সেন্ট মার্থাস বিদ্যালয় থেকে রোববার (৫ নভেম্বর) জব্দ করা হবে বলে শ্রীমঙ্গল মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দীলিপ কুমার বর্ধন জানান।
এদিকে, জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (০৩ নভেম্বর) রাত ১১টায় শ্রীমঙ্গল চৌমুহনা চত্বরে শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী লীগ ও পৌর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ এমপি বঙ্গবন্ধুর উপর রচিত ‘আপন আলোয় বিশ্ব ভুবন’ শীর্ষক বইটিতে ভুল, তথ্যবিকৃতির অপচেষ্টা এবং স্কুলের শিক্ষার্থীর মাঝে বিতরণ করায় বইটির সম্পাদক বিকুল চক্রবর্তীকে তিরস্কার করেন।
**বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিকুলের ভুলে ভরা বই শিক্ষার্থীদের হাতে
**‘আপন আলোয় বিশ্ব ভুবন’ বিকুলের চৌর্যবৃত্তি!
বাংলাদেশ সময়: ১৪০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৭
বিবিবি/বিএস