ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সম্পাদনা করা বিকুল চক্রবর্তীর বই নিয়ে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। বইটি প্রকাশ থেকে বিপণন পর্যন্ত ক্রমাগত মিথ্যাচারিতা ও ভাওতাবাজি করেছেন বিকুল।
***বিকুলের ভুলে ভরা বই জব্দ করেছে প্রশাসন
বিকুল চক্রবর্তী বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত জীবনী বইটির নাম দিয়েছেন ‘আপন আলোয় বিশ্বভুবন’। যেটি অসংখ্য ভুলে ভরা। আর সেই বানান, বাক্য, তথ্য, নাম ভুলের বইটি কিছু স্কুলের শিক্ষক কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করছেন টাকার বিনিময়ে। বিকুলের প্ররোচণায় বিষয় হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে শিক্ষকরা নিজেরা না পড়ে শিক্ষার্থীদের ভালো ভালো কথা শুনিয়ে তাদের কাছে ১০ টাকা করে বিক্রি করেছেন।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিকুলের ভুলে ভরা বই শিক্ষার্থীদের হাতে’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন বাংলানিউজে প্রকাশিত হলে টনক নড়ে উপজেলা প্রশাসনের। পুরো জেলাজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়।
সোমবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে সেন্ট মার্থাস স্কুলে বিক্রির উদ্দেশ্যে বিতরণ করা ৭৫০টির মধ্যে ৪৭৭টি বই জব্দ করেছে শ্রীমঙ্গল মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস। অবশিষ্ট ২৪৩টি বইও জব্দ করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে ১০ টাকা করে বিক্রি করেছেন। যার পিছনে রয়েছে বিকুল চক্রবর্তীর ইন্ধন।
এর আগে গত শনিবার (৪ নভেম্বর) মোহাজিরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২৫০টি বই জব্দ করা হয়।
***‘আপন আলোয় বিশ্ব ভুবন’ বিকুলের চৌর্যবৃত্তি!
শ্রীমঙ্গল সেন্ট মার্থাস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মেরি মার্গারেট বাংলানিউজকে বলেন, গত আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে ৭৫০টি বই বিকুল চক্রবর্তী আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১০ টাকার বিনিময়ে বিলি করতে বলেছিলেন। কিছু বই আমরা তার কথা মতো ১০ টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করেছি।
বঙ্গবন্ধু নিয়ে ভুলেভরা বইয়ের ভোল পাল্টে চালাকি বিকুলের
বঙ্গবন্ধুর মতো মহান ব্যক্তির উপর ভুল ভরা এসব বই শিক্ষার্থীদের হাতে কীভাবে তুলে দিলেন- প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আসলে সত্যি কথা বলতে কি বইটি আমরা পড়িনি। ‘বঙ্গবন্ধু’ নামটি দেখে শ্রদ্ধাবনত হয়ে বইটি নির্ভুল ভেবে গ্রহণ করেছিলাম। তাছাড়া বিকুল চক্রবর্তী সন্তানও আমাদের স্কুলে পড়ে।
আগে মোহাজিরাবাদ স্কুলের শিক্ষকরাও তারা না পড়ে শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করেছেন বলে স্বীকার করেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দিলীপ কুমার বর্ধনের কাছে টাকার বিনিময়ে এহেন নিম্নমানের বই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, বই বিক্রির বিষয়টি সম্পূর্ণ অবৈধ হয়েছে।
‘আপন আলোয় বিশ্বভুবন’ বইটির সর্বশেষ সংস্করণের কৃতজ্ঞতা স্বীকারের ৫ নম্বর সারিতে খুঁজে পাওয়া যায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নাম। আপনার সহযোগিতায় এই ভুলে ভরা বইটি প্রকাশিত হয়েছে?–এমন প্রশ্নে তিনি হঠাৎ করে বলে ওঠেন, দেখেন আমার নামটিও ভুল! আমি আমার নাম দিলে শুদ্ধ নামটাই দিতাম।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিকুলের ভুলে ভরা বই শিক্ষার্থীদের হাতে
১০ টাকা বিনিময়ে বিতর্কিত এ বইটি তুলে দেওয়া বিষয়ে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবাশশেরুল ইসলাম বলেন, আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষকে বলবো যাদের কাছে থেকে ১০ টাকা নেওয়া হয়েছে, সব টাকা ফেরত দিয়ে অবশিষ্ট বইগুলো উদ্ধার করতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর০ ৬, ২০১৭
বিবিবি/এএ