ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অভাবে ঢাবিতে ভর্তি অনিশ্চিত দিনমজুর রাধানাথের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৭
অভাবে ঢাবিতে ভর্তি অনিশ্চিত দিনমজুর রাধানাথের অভাবে ঢাবিতে ভর্তি অনিশ্চিত দিনমজুর রাধানাথের 

লালমনিরহাট: সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ‘ঘ’ ইউনিটে ২৫তম স্থান অধিকার করলেও অভাবের তাড়নায় ভর্তি হতে পারছেন না দিনমজুর রাধানাথ রায়। 

রাধানাথ লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের শালমারা গ্রামের দিনমজুর কামিনী রায়ের ছেলে। জন্মের পর থেকেই অভাবের সঙ্গে লড়াই ও মানুষের সাহায্য নিয়ে এ পর্যন্ত পৌঁছেছেন।

 

এলাকাবাসী ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় ২০১৫ সালে দুরাকুটি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর বাবা-মায়ের সঙ্গে দিন মজুরের কাজ করে বেগম কামরুন নেছা ডিগ্রি কলেজ থেকে ৪.৮৩ নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হন।

পরে এলাকার মানুষের সাহায্য নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  ভর্তি যুদ্ধে অংশ নেন রাধা। সেখানে ‘ঘ’ ইউনিটে ২৫তম স্থানে অবস্থান হয় তার। শুধু ঢাবি নয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ‘এ’ ইউনিটে ১৩৫তম স্থান অধিকার করেন।

অভাবে ঢাবিতে ভর্তি অনিশ্চিত দিনমজুর রাধানাথের বর্তমানে ঢাবিতে ভর্তি হওয়া নিয়ে চিন্তিত মেধাবী এ ছাত্র। তিন মাস আগে বুকে ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন তার বাবা কামিনী রায়। যে মুহুর্তে টাকার প্রয়োজন ঠিক সেই সময় বাবার অসুস্থতা তাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। তার জীবনের প্রতিটি পদে অভাব নামক দানবটি তাড়া করে বেড়াচ্ছে। যদিও সমাজের বিত্তবানরা তার সব সময়ই এগিয়ে আসছেন।  

ঢাবিতে ভর্তি, বইপত্র কেনা সব মিলিয়ে অনেক টাকার প্রয়োজন। অপরদিকে, শয্যাশায়ী বাবার চিকিৎসা নিয়ে বড় বিপাকে ফেলেছে রাধাকে। তবুও ইচ্ছা শক্তি থেকে অনড় রাধা মায়ের সঙ্গে অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করছেন। দিনমজুরের টাকায় বাবার চিকিৎসা ও সংসার সচল রাখতেই শেষ। বসতভিটার তিন শতাংশ জমি ও একটি জীর্ণ ঘর তাদের একমাত্র সম্বল।

রাধানাথের মা আরতী রানী বাংলানিউজকে বলেন, ‘বড় অফিসার হবার জন্য রাধা রাত-দিন মানুষের জমিত কাজ করে আর বই পড়ে। কামলার (দিনমজুর) ছাওয়া কি বড় অফিসার হবার পায়?। ঢাকার বড় কলেজে (ঢাবি) পড়তে কত টাকা নাগে ভাই?’

অভাবে ঢাবিতে ভর্তি অনিশ্চিত দিনমজুর রাধানাথের 

রাধানাথ বাংলানিউজকে জানান, ইচ্ছা শক্তি ও মনোবল থাকলে অসাধ্যকে সাধন করা সম্ভব। জীবনের প্রতিটি পদে অর্থই বড় বাধা হলেও তাকে থামাতে পারে নি। মাঝপথে বাবার অসুস্থতায় চাপ বেড়ে যায়। তবে জীবনের শেষ যুদ্ধেও সফল হওয়ার চেষ্টায় অবিরাম সংগ্রাম করেই চলছেন তিনি।

রাধা বাংলানিউজকে বলেন, ‘ দোকানে কাজ করে নরেন্দ্র মোদি যদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, তবে দিনমজুরি করে কেন প্রশাসনিক ক্যাডার হওয়া যাবে না। ’

ওই গ্রামের ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, রাধা মেধাবী শিক্ষার্থী হওয়ায় বিভিন্ন সময় ওই পরিবারকে সাহায্য সহযোগিতা করা হচ্ছে। সুযোগ পেলে রাধা তার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে।

বেগম কামরুন নেছা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আমিরুল হায়াত আহম্মেদ মুকুল বাংলানিউজকে জানান, রাধা মেধাবী ও জেদী ছেলে। সে সুযোগ পেলে যেকোনো মূল্যে তার স্বপ্ন পূরণ করবেই। রাধার মেধাকে বিকশিত করতে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৭
এনটি/বিএস  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।