১২ নভেম্বর এলেই নির্দিষ্ট কিছু সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করে। মিলাদ মাহফিল, কোরআনখানি ও নিহতদের স্মরণে স্মৃতিচারণামূলক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
১৯৭০ সালের এইদিনে বেঁচে যাওয়া শহিদুল ইসলাম এখন বৃদ্ধ। ওইদিনের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে তার বাবা নুরুল হক মাস্টার, ভাই আবুল কালামসহ ১৮ জন কৃষিশ্রমিক নিহত হন। বাবা-ভাইয়ের মরদেহও খুঁজে পাননি তিনি।
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চর জাঙ্গালিয়া গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল স্মৃতিচারণ করে বলেন, ভয়াল ওই দিনে কমলনগরের চরকাদিরা ভুলুয়া নদী সংলগ্ন খামার বাড়িতে বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে ছিলেন তিনি। তারা তিনজন ছাড়াও আর ১৫জন কৃষিশ্রমিক ওই বাড়িতে ছিলেন। রাত ৮টার দিকে ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়। তীব্র বাতাসে ঘর ভেঙে পড়ে। এদিকে পানি বাড়তে থাকে। বাঁচার জন্য সবাই ভাঙা ঘরের চালায় অবস্থান নেন। তিনি একটা কাঠের বাক্সের ভেতরে ঢুকে দাঁড়িয়ে থাকেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে পানির ঢল নেয়ে আসে। চোখের সামনে ঢেউ ভাসিয়ে নেয় তার বাবা-ভাইসহ ১৭ জনকে। পরের দিন সকালে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূর থেকে অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়।
স্বজনহারা অনেকেই জানান, সেদিন রেডিওতে ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেওয়া হয়। কিন্তু উপকূলে পর্যাপ্ত রেডিও ছিল না। ওইদিন সকাল থেকেই গুঁড়ি-গুঁড়ি বৃষ্টি ছিল। সন্ধ্যায় থেকে হালকা বাতাস শুরু হয়। গভীর রাতে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২২ কিলোমিটার। পরদিন সকালে চারদিকে মরদেহ ভাসতে দেখা যায়।
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাস লক্ষ্মীপুরের রামগতির মেঘনা উপকূলীয় চরআবদুল্লাহ কমলনগরের ভুলুয়া নদী উপকূলীয় চরকাদিরাসহ নোয়াখালীর হাতিয়া, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় হানা দেয়। সেদিনের ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলের প্রায় ১০ লাখ লোকের প্রাণহানি হয়।
ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় নিয়োজিত ছিলেন লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার বাসিন্দা এএইচএম নোমান। তিনি জানান, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রামগতি চর আবদুল্লাহ ইউনিয়ন। জেলেপল্লি অধ্যুষিত এ ইউনিয়নটি ছিল প্রায় নারী শিশু শূন্য। সেদিনের হাজারো নির্মম ঘটনার স্বাক্ষী দেশের দক্ষিণ উপকূল।
বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৭
আরআর