সড়কের রূপকার বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন তিনি। মুহূর্তেই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে খবরটি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।
মূলত সদ্য প্রয়াত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রথম মেয়র আনিসুল হকের প্রচেষ্টা প্রাণ ফিরে পেয়েছে সড়কটি। সড়কের পথচারীরাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। এই সড়কে প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর রিকশা চালান ময়মনসিংহের গাফরগাঁও পাঁচবাগ গ্রামের হাবিবুর রহমান। বসবাস করেন তেজগাঁও বেগুনবাড়ি বস্তিতে। মূলত ফার্মগেট থেকে সাতরাস্তা রুটে রিকশা চালান তিনি।
আগে প্রতিদিন ৩’শ থেকে ৪’শ টাকা ভাড়া মারতে দিনশেষ হতো এই সড়কে। এখন জটলা না থাকায় অনায়াসে ৬’শ থেকে ৭’শ টাকা ভাড়া মারেন হাবিব।
শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) সকালে অন্য রিকশা চালকের মাধ্যমে মেয়রের মৃত্যু সংবাদ শুনেছেন তিনি। তখন থেকেই ভাড়া মারা তো দূরের কথা মেয়রের সড়ক উচ্ছেদের স্মৃতি তার মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে। আর গভীর মমতা স্মরণ করছেন সদ্য প্রয়াত মেয়রকে।
সড়কে জটলা উচ্ছেদে মেয়রের অবদান প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অঝোরে কাঁদলেন রিকশা চালক হাবিব। একই সঙ্গে তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা সত্তোর্ধ্ব রিকশা চালক হাবিব।
মেয়রের স্মৃতি তুলে ধরে হাবিব বলেন, রাস্তা তো এখন পুরাপুরি রাজধানী (চকচকে)। সুন্দর ভালো পরিবেশ। কোনো জটলা নাই। কোনো সরকার যা পারেনি মেয়র তা কইরে দেখাইছে। মেয়র খুব ভালো লোক ছিলো।
সড়কের মাঝখানে ৫ থেকে ৬ জন ট্রাকচালক একত্রিত হয়ে বিভিন্ন ধরনের গল্প বলছেন। তাদের গল্পের প্রধান বিষয় মেয়র আনিসুলের অকাল প্রয়াণ। সড়কটি উচ্ছেদের সময় এই সব ট্রাক চালকের শত্রু ছিলেন মেয়র আনিসুল। আজ তাদের মুখেই মেয়র বন্দনা। ৮ থেকে ৯ বছর ট্রাক চালান সবুর আলী। এক সময় সড়কেই ট্রাক রাখতেন। এখন সড়কের পাশে নির্দিষ্ট স্থানে ট্রাক রাখেন তিনি।
সদ্য প্রয়াত মেয়র প্রসঙ্গে ট্রাক চালক সবুর বলেন, লোকটা খুব ভালো ছিলো। আমাদের পাঁচ জনের সাময়িক ক্ষতি হলেও লাখ লাখ মানুষের ভালো করছে। আল্লাহ উনাকে বেহেস্ত দান করুক।
সাতরাস্তা মোড়ে সড়ক ঘেঁষে ছোট দোকান দিয়ে আছেন মনজুর ইসলাম সেলিম। প্রায় ১০বছর এই সড়ক ঘেঁষে দোকান ব্যবসা জড়িত তিনি। সুতরাং জটলা থেকে শুরু করে বর্তমানে চকচকে সড়কের দৃশ্যপট তার সামনেই পরিবর্তন হয়েছে। মূলত মেয়রের দৃঢ় মনোবলের কারণেই সম্ভব হয়েছে।
সেলিম বলেন, ‘মেয়র সাব বাপের বেটা। উনি না থাকলে এই রাস্তা কেউ ভালো করতে পারতো না। উনি প্রথম প্রথম প্রায় প্রতি সকালে এই রাস্তায় আসতেন। সাতরাস্তা মোড়ে গাড়ি থেকে নেমে এই রাস্তা দিয়ে হাঁটতেন। রাস্তায় লাগানো ছোট ছোট গাছগুলোতে পানি দেয়া হয়েছে কি খবর নিতেন। অনেক সময় গভীর রাতেও উনি এই রাস্তায় আসতেন কেউ যাতে এলোপাতাড়ি ট্রাক ফেলে না রাখে। এই রাস্তা দিয়ে হাটার সময় সবাই মেয়রের জন্য দোয়া করবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৭
এমআইএস/এসএইচ