ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

সিঙ্গাপুরেও মরতে বসেছে প্রিন্ট সংবাদপত্র

জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৮
সিঙ্গাপুরেও মরতে বসেছে প্রিন্ট সংবাদপত্র প্রিন্ট থেকে অনলাইনে ঝুঁকছে বিশ্বের বিখ্যাত সংবাদপত্রগুলো।

‘গত এক বা দু’বছর ধরে আমি আমার সহকর্মীদের একথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আসছি যে, আমরা কোনো সংবাদপত্র কোম্পানি নই-আমরা হচ্ছি একটা মিডিয়া কোম্পানি। চিন্তাভাবনার কাঠামো বদলে ফেলাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এখন।’

দিনকে দিন কাগজে ছাপানো পত্রিকার দিন ফুরিয়ে আসছে। আয় ফুরিয়ে আসছে।

ক্রমে ক্রমে কাগুজে পত্রিকার অস্তিত্বের সুতায় পড়েছে টান। নিউজ উইক থেকে শুরু করে দৈনিক দ্য টাইমস-সবখানে হাহাকার। ব্যবসায় ধস নামছে। বিজ্ঞাপনের আয়ে ধস নামছে। অনেক পত্রিকা হয়ে গেছে ও যাচ্ছে ডিজিটাল। প্রিন্ট ভার্সন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক পত্রিকার।

সেই অশনি হাওয়ার ধাক্কা এশিয়ার নগর-অর্থনীতির স্বর্গরাজ্য সিঙ্গাপুরেও এসে লেগেছে।  

সিঙ্গাপুর প্রেস হোল্ডিংস বা এসপিএইচ (SPH)। বিশ্বখ্যাত ইংরেজি দৈনিক দ্য স্ট্রেট টাইমস (Straits Times) এর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। তাদের ব্যবসা, আয়, প্রচারসংখ্যা আর সুনাম সবকিছু এই সেদিনও তা ছিল ঈষর্ণীয় পর্যায়ে! কিন্তু তাদেরও সেদিন বুঝি বাসি হতে চলেছে।  

বিশ্বব্যাপী ছাপানো পত্রিকার আয়ের যে ধস-যে ওয়ার্ল্ডওয়াইড ডাউনটার্ন বা পতন শুরু হয়েছে, তার বদ হাওয়া এসে লেগেছে তাদের গায়েও। ৩ লাখ ৮৩ হাজার প্রচার সংখ্যার নন্দিত সংবাদপত্রটির আয় রাতারাতি কমতে শুরু করেছে। যা এর কর্তৃপক্ষকে যারপরনাই ভাবিয়ে তুলেছে।  

গত বছর এসপিএইচ কর্তৃপক্ষ দুঃসময়ের যে আলামত দেখেছে, তা আসলেই দুশ্চিন্তার। গতবছর তাদের বিজ্ঞাপনের আয় কমেছে ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ। সার্বিক আয় ১৩ শতাংশ। আর ২০১৭ সালে অর্থবছর শেষের সার্কুলেশন খাতে আয় কমেছে ৫ শতাংশ। লাভও কমে গেছে অনেকটা ভূমিধসের মতো, ৩৩ শতাংশ।  

এসব মনখারাপ করা ঘটনা সব এক সঙ্গে ঘটছে। তাই এসপিএইচ কর্তৃপক্ষ ব্যাপক লোকবল ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। গত অক্টোবরে তারা ছাঁটাই করেছে ২৩০ জনকে। আর বৈদেশিক সংবাদদাতার সংখ্যা তারা ৪০ জনে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চারটি ভাষায় ১১টি সংবাদপত্র, সাময়িকী, এবং বেতারকেন্দ্র মিলিয়ে এখনো কর্মরত আছে ১২০০ জন।

বলে রাখা ভালো, সিঙ্গাপুরে যা এখন ঘটছে তা অনেক আগেই ঘটে গেছে উত্তর আমেরিকায় ও ইউরোপে। তাদের জন্য এটা তাই নতুন কোনো খবর নয়। পশ্চিমের উন্নত দুনিয়ায় প্রিন্ট মিডিয়ার এখন মরণ দশা। তার ধাক্কা এখন সবখানেই লাগছে।  

এখন প্রশ্ন হচ্ছে,  এসপিএইচ নতুন এই সংকটকে কীভাবে মোকাবেলা করবে? সবকিছু ঢেলে সাজিয়ে তারা পারবে কি পরিস্থিতি সামাল দিতে? তাদের আয়ে মূর্তিমান দৈত্যের মতো ভাগ বসাচ্ছে ফেসবুক আর গুগল।

এসপিএইচ’র ডেপুটি সিইও অ্যান্থনি তানের (Deputy CEO Anthony Tan) কথায় সেই উদ্বেগই ঝরে পড়ল।  

তিনি জানাচ্ছেন, গত ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে এসব ঘটে চলেছে। এক কথায় সবার ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে ফেসবুক আর গুগল। এশিয়ায়ও ক্রমশ তাদের আগ্রাসী উপস্থিতি দিনকে দিন বেশি বেশি করে অনুভূত হচ্ছে।

দুঃসংবাদের এখানেই শেষ নয়, গত এক বছরে তাদের শেয়ারের দামও পড়ে গেছে এক চতুর্থাংশ। এতোদিন এসপিএইচে’র একচেটিয়া আয় এশিয়া অঞ্চলের আর সবার ঈর্ষার কারণ ছিল। আর এখন তাতে লেগেছে ভাটার টান। লাগবে নাই-বা কেন? কারণ লোকে এখন ডিজিটাল মঞ্চেই বেশি সময় কাটাতে পছন্দ করে, চায়ের পেয়ালা নিয়ে আয়েশ করে ছাপানো কাগজ পড়বার মতো সময় বা বিলাসিতা এখন আর মানুষের নেই।

এ কারণে প্রচারসংখ্যাও কমছে হু-হু করে। আর এসপিএইচে’র মতো বাঘা প্রতিষ্ঠানও তার কামড় টের পাচ্ছে হাড়ে হাড়ে।

তো এখন কী করবে তারা, এসব জানতে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসভিত্তিক ওয়েবসাইট নিয়েম্যানল্যাব (Niemanlab) এর সাংবাদিক কেন ডক্টর  (KEN DOCTOR) কথা বলেন এসপিএইচে’র ডেপুটি সিইও অ্যান্থনি তানের সঙ্গে তার অফিসে। তখন ক্রিসমাস সবে শেষ হয়েছে। দীর্ঘ সে কথোপকথন। সেখানে তান কোম্পানির স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা ইত্যাদি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন।  

পড়ুন দ্বিতীয় পর্ব>>
** প্রযুক্তি ছাপানো সংবাদপত্রকে ঠেলে দেবে চিরমৃত্যুর গহ্বরে

বাংলাদেশ সময়: ১১০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৮
জেএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।