শনিবার (৩১ মার্চ) বেলা সাড়ে ৩টা থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের ডাকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ অনশন শুরু হয়। অনশনে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
অনশনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, বিভাগের চার শিক্ষার্থীকে হারিয়ে আজ আমরা শোকে বাকরুদ্ধ। এসব শিক্ষার্থীর চিকিৎসার জন্য প্রায় ৬ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ৫০ হাজার টাকা কুয়েট প্রশাসন দিয়েছে। বাকি টাকা কুয়েট শিক্ষার্থীসহ দেশ-বিদেশের সাবেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে। তারপরও তাদের বাঁচানো যায়নি।
‘আমাদের একটা দাবি ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে কুয়েট প্রশাসন ১ কোটি টাকা করে সর্বমোট চার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এই ক্ষতিপূরণের টাকা রোববার দুপুর ১টার মধ্যে প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে বণ্টন করতে বাধ্য থাকবে। এই টাকা পরিবারের হাতে না যাওয়া পর্যন্ত আমরা অনশন পালন করবো। ১ কোটি টাকা করে হস্তান্তর না করা হলে রোববার আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবো। ’
কুয়েটের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৩ তম ব্যাচের সাবেক জিএস ইয়াসির আরাফাত বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে শনিবার দুপুরে সিন্ডিকেটের ৬০ তম (জরুরি) সভা ডাকা হয়। মিটিংয়ে সিন্ডিকেটের মেম্বাররা সিদ্ধান্ত নেন ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে অনুদান এবং প্রত্যেক পরিবারের সদস্যদের তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের সবার পরিবারের সদস্যরা খেটে খাওয়া মানুষ এবং দুইজনের বাবা নাই। তৌহিদের বাবা প্যারালাইজড। বিশ্ববিদ্যালয় কাদের চাকরি দেবে?
‘আমরা এ সিদ্ধান্ত মানি না এবং আমাদের প্রস্তাবিত দাবি প্রত্যেক পরিবারকে কমপক্ষে ১ কোটি টাকার সাহায্য না দেওয়া পর্যন্ত আমাদের আমরণ অনশন অব্যাহত থাকবে। ’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এদিকে সহপাঠী হারিয়ে অনশনকারীদের মধ্যে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৫তম ব্যাচের সামিউল হক শামু ও ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের রিস্কি সন্ধ্যায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
তাদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান কুয়েটের সাবেক ছাত্র ইয়াসির আরাফাত।
এ পরিস্থিতিতে সন্ধ্যায় পুনরায় সিন্ডিকেটের জরুরি সভা বসেছে বলে জানা গেছে।
গত ২৫ মার্চ (রোববার) রাত ১টায় ময়মনসিংহের ভালুকায় বিস্ফোরনের ঘটনাটি ঘটে। কুয়েটের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শেষবর্ষের চারজন শিক্ষার্থী গত ১০ মার্চ থেকে মাস্টারবাড়িতে একটি টেক্সটাইল মিলে শিক্ষানবীশ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আগামী ৫ এপ্রিল যাদের শিক্ষানবীশ কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা থাকলেও গত ২৫ মার্চ একটি ৬ তলা ভবনে বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তৌহিদুল ইসলাম। আর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শাহীন মিয়া, হাফিজুর রহমান এবং দীপ্ত সরকার।
চার শিক্ষার্থীর নিহতের ঘটনায় শনিবার থেকে বিশ্ববিদ্যায়ে তিনদিনের শোকপালন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৮/আপডেট: ১৯০২ ঘণ্টা
এমআরএম/এমএ