সোমবার (৯ এপ্রিল) সকালে উপাচার্য তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ অভিমত জানান। রোববার (৮ এপ্রিল) বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ঢাবি ক্যাম্পাস ও শাহবাগ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় আন্দোলনকারীরা।
ঢাবি উপাচার্য বলেন, গতকাল রাতে যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে, এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে বলে আমি মনে করি না। এরা প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসী একটি গোষ্ঠী, লাশের রাজনীতির জন্য তারা এই তাণ্ডব চালিয়েছে।
উপাচার্যের ভাষ্যে, বিডিআর বিদ্রোহের হামলাকারীদের মতোই মুখোশ পরে তারা এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। তাদের হামলার ধরন দেখেই বোঝা গেছে, তারা কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী নয়, এরা প্রশিক্ষিত একটি দল।
সরকারের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দাবিটি নিয়ে আলাপ আলোচনা করেছেন জানিয়ে ড. আখতারুজ্জামান বলেন, সরকারের পক্ষ থেক আমাকে বলা হয়, বিষয়টি সরকার সক্রিয়ভাবে দেখছে। এই কথাটি আমি যখন শিক্ষার্থীদের বলতে আসি, তখনই রাত ১টার দিকে লোহার রড দিয়ে আমাকে এবং আমার পরিবারের ওপর প্রাণনাশের জন্য হামলা করা হয়।
আরও পড়ুন
** ঢাবি-শাহবাগে স্বাভাবিক যান চলাচল
** টিএসসি থেকে দোয়েলচত্বরে আন্দোলনকারীরা, টিয়ারশেল নিক্ষেপ
** হামলাকারীরা ছাত্র হতে পারে না, বহিরাগত: ঢাবি ভিসি
** আন্দোলনকারীদের আলোচনায় বসার আহ্বান
** স্লোগান মুখর শাহবাগ-টিএসসি, পুলিশের টিয়ারশেল
** শাহবাগে থেমে থেমে সংঘর্ষ, টিয়ারশেল-রাবার বুলেটে আহত ৩০
** সব বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা
** শাহবাগে কাঁদানে গ্যাস: প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ খুলনায়
** কোটা সংস্কার দাবি: আন্দোলনকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস
** সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত কোটা সংস্কারের আন্দোলন
** আন্দোলনকারীদের ফুল উপেক্ষা করে সরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ
** কোটা পদ্ধতির সংস্কার চেয়ে শাহবাগে অবরোধ
** কোটা পদ্ধতির সংস্কার চেয়ে শিক্ষার্থীদের গণপদযাত্রা
‘আশেপাশে কয়েকজন যদি আমাকে না বাচাঁতো, তাহলে আমি হয়তো আপনাদের সামনে বসে কথা বলতে পারতাম না। আমার প্রাণনাশের উদ্দেশ্যেই এই হামলা করা হয়। আর হামলার আলামত নষ্ট করতেই বাসভবনের সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুরসহ সেখানকার সরঞ্জামাদি চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুরো ভবনের সবকিছু তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। ’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, এই ঘটনায় মামলা করা থেকে শুরু করে সকল আইনি প্রক্রিয়া সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হবে। কারণ উপাচার্য এবং তার বাসভবন সরকারি সম্পত্তি, হামলার বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্বও সরকারের।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলবে বলেও জানান উপাচার্য।
হামলার পরপরই উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেছিলেন, যারা হামলা করেছে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হতে পারে না। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নয়, মুখোশধারী-বহিরাগত। আর কারা হামলা করেছে, তা আপনারা জানেন, দেখেছেন।
কোটা সংস্কারের দাবিতে রোববার বিকেলে গণপদযাত্রা কর্মসূচি শুরু করে ঢাবি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), ঢাকা কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে তারা অবরোধ করে শাহবাগ মোড়। রাস্তা থেকে তাদের হটিয়ে দিতে রাতে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে বেশ কিছু শিক্ষার্থী আহত হন।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ তুলে মধ্যরাতেই রাস্তায় নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ছাত্রীরা। এতে উত্তাল হয়ে পড়ে গোটা ক্যাম্পাস। এসময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক শাহবাগে এসে সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন।
কিন্তু এরমধ্যেই ঢাবি ক্যাম্পাসে উপাচার্যের বাসভবনে ওই হামলা চালানো হয়। সেসময় দু’টি মাইক্রোবাস ও মসজিদের সামনে মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগও করা হয়। পরে আন্দোলনকারীদের হটিয়ে দিতে আরও কড়া অবস্থানে যায় পুলিশ। আন্দোলনকারীরা দোয়েল চত্বরে অবস্থান নিলে সেখান থেকেও তাদের হটিয়ে দেওয়া হয়। সকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিরুদ্ধে মিছিল করে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৮
এমএসি/এইচএ/