বুধবার (২ মে) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। সাম্প্রতিক সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী।
সম্প্রতি রাজধানীর রাস্তায় রাজীব হোসেন নামে এক কলেজশিক্ষার্থী দুই বাসের চাপায় হাত হারিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এবং রোজিনা আক্তার রোজী নামে এক গৃহকর্মী আরেক বাসের চাপায় পা হারিয়ে মারা যান। এছাড়া ফার্মগেট বাস স্টপেজে এক নারী এবং যাত্রাবাড়ীতে এক প্রাইভেটকার চালক গাড়ির চাপায় পা হারান। গুলিস্তানে বাসের চাপায় এক পায়ের চার আঙুল পিষে যায় এক ব্যবসায়ীরও।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘দুর্ঘটনাগুলো যখন ঘটে। তখন আপনারা এটা কখনো হিসেবে করে দেখেছেন, এই ঘটনা ঘটার জন্য যে পথযাত্রী, তার কতটুকু ভুল আছে? সে কতটুকু দায়ী আর যে চালক, তার কতটুকু দায়? এটা কিন্তু কখনও বিবেচনা করেন না। সবাই চালকের শাস্তি চাইছেন। ’
‘খুব ভালো কথা। চালক বেপোরোয়া অথবা চালক ঠিক মতো চালাচ্ছে না তার জন্য দুর্ঘটনা ঘটছে। এটাও যেমন সত্য, আবার এটা তো সত্য যে রাস্তায় চলার কতগুলো নিয়ম আছে। কিন্তু সেই নিয়মটা আমরা কতটুকু মানি?’
আরও পড়ুন
** ‘বলতে পারি না, নির্বাচনে না এলে ধরে জেলে নেবো’
** এখন আর কোটার দরকার নেই
** সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেককে অবশ্যই ফিরিয়ে আনবো
** সমঝোতা হলে প্রেস রিলিজেই ছাত্রলীগের নেতৃত্ব ঘোষণা
** লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড নারীদের উৎসর্গ করলেন প্রধানমন্ত্রী
** কমনওয়েলথ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রশংসা কূটনৈতিক সাফল্য
পথচারীদেরও ট্রাফিক নিয়ম জানা এবং মানার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে গাড়ি আসছে, দুই গাড়ির চাপা পড়ে মারা গেলো। দুই গাড়ির চাপার মধ্যে ঢুকলো কেনো? আপনি কাকে অপরাধ দেবেন? কাকে শাস্তি দেবেন? আমাকে বলেন, আমার কথাগুলো অনেকের হয়তো পছন্দ হবে না, আমি জানি। কিন্তু যেটা বাস্তবতা সেই কথাগুলো আমি বলছি। কারণ বিষয়গুলো আমি খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করি। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিদেশে থেকেছি, পায়ে হেঁটে চলেছি। বাসে চলেছি, টিউবেও (পাতাল রেল) চলেছি। কথাটা হচ্ছে যে, সেখানে ট্রাফিক রুল মানতে হয়। কিন্তু এখানে কি কেউ মানে? কেউ মানে না। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনি বাসে চড়ে যাচ্ছেন, আপনি হাতটা কেনো বাইরে ঝুলিয়ে রাখবেন? এটাতো নিষেধ আছে। যে কোনও মতেই আপনি আপনার হাত বাইরে রাখতে পারেন না। হাত বাইরে ঝুলিয়ে রাখলে আরেকটা গাড়ির চাপায় আপনার হাত যাবেই। আপনারা যার হাত গেলো, তার জন্য কান্নাকাটি করছেন, কিন্তু সে যে ট্রাফিক রুল মানলো না বা গাড়িতে চড়ার যে নিয়ম সেটাও মানলো না, সেটা কী করে দেখবেন?’
মোটরসাইকেল আরোহীদের হেলমেট পরার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অ্যাকসিডেন্ট হলেই দোষ কার, গাড়ির ড্রাইভারের। আপনি হেলমেট পরবেন না কেনো? গাড়িতে বসবেন সিট বেল্ট লাগাবেন না। দুর্ঘটনা ঘটলে দেখা যায়, যাদের সিট বেল্ট বাঁধা ছিলো না, তারা মারা গেলো, যাদের বাধা ছিলো তারা বেঁচে আছে। ’
‘দোষ কার রাস্তার দোষ, দোষ কার সড়ক পরিবহন মন্ত্রীর দোষ, দোষ কার ড্রাইভারের দোষ। কিন্তু যিনি বসে ছিলেন তিনি যে এভাবে আয়েশ করে বসেছিলেন, সেটা আর কেউ খেয়াল করে না। ’
প্রধানমন্ত্রী নিজে ট্রাফিক রুল মেনে চলেন জানিয়ে বলেন, কয়জন আপনারা সিট বেল্ট বেঁধে চলেন? কয়জন হেলমেট মাথায় চলেন? চলেন না। তো ড্রাইভার কে শাস্তি দিতে হবে। হ্যাঁ বুঝলাম দেবো। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা যারা রাস্তা পারাপার করে তারা নিয়মটা মানে কি-না, এই বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করেন। স্কুলে, টেলিভিশনের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করেন।
দুর্ঘটনা ঘটলে আইন হাতে তুলে নিয়ে চালককে মারধর করা যাবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে ধাক্কা খেয়ে একটা লোক পড়ে গেলো, ড্রাইভার ভয়ে গাড়ি থামায় না। তাকে ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। সেজন্য (দুর্ঘটনা ঘটলে) আরও জোরে গাড়ি চালিয়ে চলে যায় (চালকরা)। জনগণ আইন হাতে তুলে নেয়, এটা বন্ধ করতে হবে। দুর্ঘটনা ঘটলে গাড়ি থামাতে হবে। যে আহত হলো তাকে সাহায্য করতে হবে।
সরকার ডিজিটাল পদ্ধতিতে ট্রেনিং দিয়ে লাইসেন্স দেয় জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, সমস্যা হলো ড্রাইভাররা না চালিয়ে মাঝে মধ্যে হেলপাররা চালায়। এটাও বন্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৮
এমইউএম/এসকে/এইচএ/