ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

খুলনার লবনচরা মেইন রোড যেন মরুপথ!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৯
খুলনার লবনচরা মেইন রোড যেন মরুপথ! লবনচরা মেইন সড়ক, ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: ধুলা আর বালুতে ধূসর চারিদিক। ভর দুপুরে দূর থেকে মনে হয় সড়ক ও তার আশে-পাশে যেন কুয়াশা পড়ছে। যে কারণে চালকরা সড়কে গাড়ি চালাচ্ছেন লাইট জ্বালিয়ে। ধুলায় আচ্ছন্ন খুলনা মহানগরীর লবনচরা মেইন সড়কে চলতে হয় নাক-মুখ চেপে।

ক্ষোভ আর আক্ষেপে পথচারীরা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ লবনচরা মেইন সড়কে যেভাবে বালুময় হয়ে উঠেছে তাতে মনে হয় এ যেন মরুপথ।

এলাকাবাসী জানান, রাত বা দিন বলে কথা নেই, সব সময় ধুলা-বালু উড়ছে।

সবকিছু যেন কুয়াশায় ঢেকে আছে। ধুলা-বালুর অত্যাচারে অতিষ্ঠ পথচারী ও স্থানীয় দোকানিরা। ঘরের ভেতরও কারো স্বস্তি নেই। কয়েকঘণ্টার মধ্যেই আসবাবপত্রের ওপর ধুলার আস্তর পড়ে। পথচারীদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে দেহে প্রবেশ করছে ধুলা। রূপসা সেতু সংলগ্ন খোলা হোটেল-রেস্তোরাঁর খাবারের সঙ্গে ধুলার প্রভাব পড়ছে। সেতুর পশ্চিম দিক থেকে আসা দর্শনার্থীরা আসতে ভোগান্তিতে পড়েন।

তাদের অভিযোগ, পুটিমারি বাজার থেকে রূপসা সেতু পর্যন্ত লবনচরা মেইন রোড়ে ১২টি বালুর বেডের শত শত ট্রাক না ঢেকে বালি নিয়ে চলাচল করে। বাতাসে ট্রাক থেকে বালি উড়ে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ পানি ছিটিয়ে ধুলা ও বালু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর বালি ও ধুলা আবারও উড়তে থাকে।

মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখা গেছে, রূপসা নদীর পাড়ের লবনচরা মেইন সড়ক এলাকায় নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে একাধিক বালুর আড়ত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে - আবু বকর সিদ্দিকের মেসার্স মা-বাবার দোয়া, মো. সাহেবুর রহমার পিটু মোল্লার মোল্লা এন্টারপ্রাইজ, মানু মিয়ার চলাচল সংস্থার ২ টি বেড, জাকির হোসেন চৌধুরীর তানভীর এন্টারপ্রাইজ, মো. হাকিমের রাজু এন্টারপ্রাইজ। শহরের বিভিন্ন স্থানে বালু পৌঁছাতে ব্যবহৃত হচ্ছে ছোট, বড় ও ভারী যান। অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় ট্রাক খোলাভাবে বালু পরিবহন করছে। বালু ভর্তি ট্রাক চলার সময় বাতাসে বা ভাঙা রাস্তায় ঝাঁকুনিতে পড়ছে বালু। বেড়ে যাচ্ছে ধুলার পরিমাণ। যানবহন চলার সময় হালকা মৃদু বাতাসে বালু উড়ছে। রাস্তার পাশের দোকানগুলোর মালামাল ওপর ও পথচারী গায়ে লাগছে বালুর আবরণ। ধুলায় মাখামাখি হয়ে চলছেন পথচারীসহ স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা।

এ সড়ক সংলগ্ন এলাকায় রূপসা সেতু, র‌্যাব-৬ এর সদর দফতর, নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণ ঘাটি, লবনচরা টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, ওহাব জুট মিল, রেল সেতু, শেখ রাসেল ইকোপার্ক, পুটিমাটি বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রতিষ্ঠান।

লবনচরা বান্দা বাজারে দেখা গেছে, কয়েকজন দোকানদার তাদের দোকানের সামনে পানি ছিটাচ্ছে। কেউ আবার দোকানের জিনিসপত্র মুচছেন। বাজারের স্বপ্নপুরী সু নামক একটি দোকানের সাইনবোর্ড প্রায় ধুলায় ঢেকে গেছে।

দোকানটিতে দোকানি রুহুল বাংলানিউজকে বলেন, দিনে ৩/৪ বার দোকানের মালামাল মুছতে হয়। ধুলার থেকে একটু বাঁচার জন্য দৈনিক কতবার যে রাস্তায় পানি দিতে হয় তার ঠিক নেই। ধুলায় আর পারি না।

লবনচরা এলাকার রিকশাচালক মাসুদ হাওলাদার জানান, জামা-কাপড়ে ধুলা জড়ায়। মুখে বালু লাগে, মাথার চুল ধুলায় আঠা-আঠা লাগে, অনেক সময় চোখে বালু যায়।

আব্দুল্লাহ নামের এক পথচারী বলেন, এ সড়কে চলাচল যেন মরুপথ পাড়ি দেওয়া। ধুলা-বালুর রাজ্যে চলাচল করা বিষিয়ে তুলেছে জনজীবন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ইংরেজি ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক মো. সামিউল হক বলেন, বিশেষ প্রয়োজনে এ রাস্তায় এসে বিড়ম্বনায় পড়েছি। ধুলার কারণে সড়কটিতে ঝুঁকি নিয়ে পথচারী ও যানবাহন চলছে। সড়কটি দিয়ে চলাচলের সময় ধুলায় কিছুই দেখা যায় না, এমনকি নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয় চালক ও যাত্রীদের।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দৈনিক প্রায় ৩শ’ ট্রাক বালি নিয়ে বালি ভরে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে। কোনো কোনো ট্রাক চার-পাঁচবারও চলাচল করে। এসব ট্রাকের কাগজপত্র, নেমপ্লেট নেই। অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক। বেপরোয়া এসব ট্রাকে চাপা পড়ে কয়েকজন মারাও গেছেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, ধুলাবালির কারণে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। নানা রোগের উপসর্গ ধূলা-বালু। আর এরমধ্যে বসবাস মানে মৃত্যুকে ডেকে আনা। এছাড়া এলার্জিজনিত ঠান্ডা, কাশি, চোখের সমস্যাও হতে পারে।

খুলনা জেলা সিভিল সার্জন আ স ম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সাধারণত শ্বাসনালীতে তো ধুলা-বালি ঢোকে এতে শ্বাসকষ্টজনিত রোগগুলো বেশি হয়। ধুলা শরীরে প্রবেশ করলে লান্স ডিজিজ, লান্স ফাইব্রোসিস, অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি হতে পারে। এমনকি অনেকদিন ধরে ধুলা-বালি শরীরে প্রবেশ করলে লান্স ক্যান্সারও হতে পারে।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) ট্রাফিক বিভাগের ইন্সপেক্টর রেজাউল বাশার বলেন, আউট সাইডে আমাদের কম যাওয়া হয়। ওই সড়কের যে অবস্থা, সেখানে আমরা মাঝে মাঝে যাই। বলতে গেলে সপ্তাহে এক বা দুইবার যাই। তখন একটা ব্যবস্থা নিয়ে আসি। হয়তো একসঙ্গে বিশ-ত্রিশটা মামলা দিয়ে আসি। মামলা দেওয়ার পর এক দুইদিন ভালো থাকে। পরে আবার যা অবস্থা তাই হয়ে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৯
এমআরএম/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।