সেখান থেকে জেএমবি নেতা সারোয়ার জাহানের কাছে হামলায় ব্যবহৃত ৩৯ লাখ টাকা পাঠান তারা। যে অর্থগুলো আসে মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশ থেকে।
শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. শরিফুল ইসলাম ওরফে খালিদ ওরফে রাহাত ওরফে সাইফুল্লাহ ওরফে নাহিদ ওরফে আবু সোলাইমানকে (২৭) গ্রেফতার করে র্যাব। শরীফুল হলি আর্টিজান মামলার এজারভুক্ত পলাতক সর্বশেষ আসামি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।
শনিবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।
শরীফুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, ১৯৯১ সালে জন্মগ্রহণ করা শরীফুল বাগমারা পাইলট হাইস্কুল থেকে ২০০৮ সালে এসএসসি এবং রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ থেকে ২০১০ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ‘এ প্লাস’ পায়। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০-১১ সেশনে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়। সে ২০১৩ সালে অনার্স ৩য় বর্ষে অধ্যয়নের সময় আহসান হাবিব শোভনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে যুক্ত হয়।
প্রথমদিকে তারা জেএমবির সঙ্গে জড়িত না হলেও রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জকেন্দ্রিক বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত সমমনাদের নিয়ে গঠিত একটি উগ্রবাদী গ্রুপ পরিচালনা করতো। মাদ্রাসাকেন্দ্রিক জঙ্গিবাদের ধারণা থেকে বেরিয়ে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতদের নিয়ে উগ্রবাদী গ্রুপ গড়ে তোলে এবং অনলাইনে উগ্রবাদ প্রচারণা করতো তারা। পরবর্তীতে শোভনের মাধ্যমে জেএমবি নেতা তামীম চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয় হয় শরীফুলের।
তারা ২০১৩ সালে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে ইন্টারনাল যোগাযোগ করে এবং ২০১৪ সালে জঙ্গিবাদের বিভিন্ন মতাদর্শের লোকজনকে এক করার কাজ করে। শোভন ও শরীফুল একই মেসে থাকতো। সে সময় তামীম চৌধুরী রাজশাহী এলাকায় গেলে তাদের মেসে রাত্রিযাপন করতো। জেএমবি নেতা সারোয়ার জাহান ও তামীম চৌধুরীকে একসঙ্গে যুক্ত করতে শরিফুলের বিশেষ ভূমিকা ছিলো।
২০১৫ সালে রিপনের বগুড়ার বাসায় সারোয়ার জাহান, তামিম, সাদ্দাম, মারজান ও সাকিব মাস্টার একত্রে মিটিং করে। মিটিংয়ে শরিফুল উপস্থিত ছিলো এবং সংগঠনের মিডিয়া উইংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে।
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, হলি আর্টিজান হামলার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে গাইবান্ধার একটি আস্তানায় একটি বৈঠক হয়। পরবর্তীতে ঢাকায় বিভিন্ন বৈঠকেও শরীফুল অংশগ্রহণ করেছিল।
হলি আর্টিজান হামলার আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দীর্ঘ এক মাস ধরে স্থানীয় জঙ্গি সদস্যদের মাধ্যমে রেকি করে রেজাউলের বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল শরিফুলের নেতৃত্বে অধ্যাপক রেজাউলকে হত্যা করা হয়।
এরপর ঢাকায় ২-১ দিন অবস্থান করার পর আমিরের নির্দেশে আত্মগোপনে চলে যায় শরীফুল। এ সময় অপর জঙ্গি নেতা রিপন তার সঙ্গে ছিল। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তারা সর্বমোট ৩৯ লাখ টাকা সারোয়ার জাহানের কাছে পাঠায়, যা হলি আর্টিজানে হামলায় ব্যবহৃত হয়েছে। যে অর্থগুলো মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশ থেকে তাদের কাছে এসেছিল বলে জানায় শরিফুল।
মুফতি মাহমুদ খান আরো বলেন, ২০১৭ সালের শেষদিকে আত্মগোপন থেকে প্রকাশ্যে আসে শরীফুল এবং ২০১৮ এর শুরুর দিকে আসে রিপন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানে জেএমবির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই মারা গেছে এবং অনেকে গ্রেফতার হয়েছে। এ অবস্থায় স্তিমিত হয়ে যাওয়া সংগঠনের সদস্যদের পুনরায় উজ্জীবিত করে এবং নতুন সদস্য সংগ্রহের মাধ্যমে জেএমবিকে পুনঃসংগঠিত করার চেষ্টা করেছিল তারা।
গত সপ্তাহে হলি আর্টিজান মামলার আরেক আসামি রিপনকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার শরিফুলকে গ্রেফতার করা হয়।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা বলেন, গত এক বছর ধরে শরীফুল ও রিপন নেতৃত্বহীন একটি সংগঠনকে হামলার জন্য প্রস্তুত করার চেষ্টা করছিল। রিপন গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে দ্রুতই নিজের অবস্থান পরিবর্তন করছিল শরীফুল। যেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সে হয়তো খুব সহজেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আত্মগোপনে চলে যেতে পারতো। তাদের নেতা হিসেবে অবশ্যই হয়তো একজন আছে। আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি এবং গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৯
পিএম/জেডএস