ফলে ছোটখাট বিরোধ নিরসনে জেলা-উপজেলার আদালতে আসার সংখ্যাও কমতে শুরু করেছে।
বিচার পদ্ধতি সহজ ও ভোগান্তি ছাড়া হওয়ায় উকিল মোক্তারের পরিবর্তে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ওপর আস্থা রাখছেন এলাকাবাসী।
কমলাপুর ইউনিয়নে গ্রাম আদালতে ২০১৭ সালের জুন থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ইউনিয়নে গ্রাম আদালতে পটুয়াখালী সদর উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ ১১৬টি মামলা পরিচালনা করেছে।
যার মধ্যে ৭৩টি মামলা বিধি-৩১, প্রাক-বিচার ও শুনানির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করেছে এবং নিষ্পত্তিকৃত মামলা থেকে উদ্ধার হওয়া জমি মূল্যমানসহ ও মোট ১১ লাখ ৮২ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করে বিচার প্রার্থীদের দিয়েছেন।
সেবা গৃহীতা মাদ্রাসাছাত্র তোফাজ্জল হোসেনকে চাকরি দেয়ার নাম করে টাকা নিয়েছিলেন চর মৈশাদী এলাকার রাসেল শরীফ। কোনোভাবে তিনি তার টাকা আদায় করতে পারছিলেন না। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসের দিকে প্রকল্পের জনসচেতনা বৃদ্ধিমূলক র্যালির মাধ্যমে তিনি প্রথম জানতে পারেন গ্রাম আদালত সম্পর্কে এবং অবশেষ তিনি গ্রাম আদালতে মামলা দায়ের করেন এবং মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে টাকা ফেরত পান।
আবেদনকারী তোফাজ্জল বলেন, গ্রাম আদালত না থাকলে কোনোদিনই এই টাকা উদ্ধার করতে পারতাম না। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেব বলেন, আরো বেশি মানুষকে গ্রাম আদালতের সুবিধা দিতে হলে অবশ্যই ব্যাপক প্রচারণার প্রয়োজন রয়েছে।
২০১৭ সালের এপ্রিল মাস থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ইউএনডিপি এবং বাংলাদেশ সারকারের স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নকৃত বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্পের (২য় পর্যায়) কার্যক্রম শুরু হয় এবং প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে সহযোগিতা করছে ওয়েব ফাউন্ডেশন।
এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পটুয়াখালী জেলার ৪টি উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণের কার্যক্রম চলছে। পাশাপাশি বাদী-বিবাদীর মধ্যে শান্তিপূর্ণসহ অবস্থান বিরাজ করছে। যা সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে একদিকে সাধারণ জনগণের যেমন সচেতনতা তৈরি হয়েছে। অপরদিকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য বিচারকগণ বিচারপ্রার্থীকে বিচারিক সেবা দিচ্ছে।
কমলাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম মৃধা বলেন, আমরা উভয়পক্ষের কথা এবং সাক্ষীদের বক্তব্য শুনে বিচারিক প্যানেলে আলাপ-আলোচনা করে কাগজ দেখে সুষ্ঠু সমাধান দিই। নিজে কথা খুলে বলতে পেরে দ্রুত বিচার পেয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষ এই গ্রাম আদালতের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছে।
ইউএনডিপি পটুয়াখালী জেলার ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর সৈকত মজুমদার বলেন, দরিদ্র মানুষ ও অবহেলিত নারীদের সঠিক বিচার নিশ্চিত করতে গ্রাম আদালত সংশিষ্ট চেয়ারম্যান, মেম্বারও সদস্যদের প্রশিক্ষণসহ নানা সহায়তা করে যাচ্ছে। এভাবে করতে পারলে যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কার করছি আশা করি সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।
পটুয়াখালী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লতিফা জান্নাতী বলেন, গ্রামের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ছোট ছোট বিরোধ হলে ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য উচ্চ আদালতে বা থানায় না গিয়ে গ্রাম আদালতে অভিযোগ দিচ্ছে এবং অল্প খরচে ও সময়ে ন্যায় বিচার পাচ্ছে। আমরা নিয়মিতভাবে গ্রাম আদালত মনিটরিং ও পরিদর্শন করছি। গ্রাম আদালত সহকারীও প্রকল্প বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে অনেক কাজ করে যাচ্ছে।
এছাড়া বিভিন্ন সময় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্পের (২য় পর্যায়) কার্যক্রমে আমাদের প্রতি নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে, আমরা সেই মোতাবেক কাজ করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৯
আরএ