ঢাকা, শনিবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বঙ্গবন্ধুর সেই স্মৃতিই সম্বল ভাষাশহীদ জব্বারের পরিবারের

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯
বঙ্গবন্ধুর সেই স্মৃতিই সম্বল ভাষাশহীদ জব্বারের পরিবারের

ঢাকা: সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও শফিউরের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ১৯৫২’র ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথ। মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে ভাষাশহীদদের সেই আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি।

অহংকার ও গৌরবের এই আন্দোলনে মাতৃভাষাপ্রেমী মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা ছিল অগ্রণী।

আবার ভাষা শহীদদের পরিবারের দায়িত্বও নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

ভাষাশহীদ আবদুল জব্বারের মা শাফাতুন নেছাকে ১৯৭৩ সালে রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও এলাকার তেজকুনিপাড়ায় সাড়ে ৫ শতাংশ জমি দিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর অবদান সেই একখণ্ড জমিই ভাষাশহীদ জব্বারের পরিবারের বিশাল প্রাপ্তি এবং পরম সম্বল।

সেই জমিতে পরবর্তীতে আধাপাকা একটি বাড়ি করে নিজের পরিবার নিয়ে থাকছেন ভাষাশহীদ জব্বারের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বাদল (৬৯)। অর্থনৈতিক দৈন্যতায় আজও বাড়িটির কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি।

বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতে ভাষাশহীদদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রতিবছরই দেখা করতেন। তাদের প্রত্যাশা- বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও যেন ২১ ফেব্রুয়ারিতেই তাদের সাক্ষা‍ৎ দেন এবং ডেকে কথা বলেন।

রাষ্ট্রীয়ভাবে যেন ভাষাশহীদের পরিবারকে সম্মানিত এবং সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

সপ্তাহখানেক আগে রাতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ১৬৫/এ/১ তেজকুনিপাড়ার বাড়িতে বসেই বাংলানিউজের কাছে নিজেদের এমন দাবি তুলে ধরেন নুরুল ইসলাম।

আক্ষেপ করে বলছিলেন, ময়মনসিংহ জেলা এবং গফরগাঁও উপজেলা প্রশাসন থেকে শুধুমাত্র ২১ ফেব্রুয়ারি ছাড়া বছরের আর কোনোদিন তাদের খোঁজ নেওয়া হয় না। সরকারিভাবে মাসিক ১০ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়া হয়।

রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই দাবিতে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের অগ্নিঝরা দিন ২১ ফেব্রুয়ারি। সেদিন কারফিউ ভঙ্গ করে ছাত্র-জনতার মিছিল বের হয়। ওই মিছিলের ওপর গুলি চালানো হলে নিহত হন ভাষাশহীদ জব্বার।

তার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার রাওনা ইউনিয়নের পাঁচুয়া গ্রামে। .ভাষাশহীদ জব্বারের পারিবারিক সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে পাঁচুয়া গ্রামে একটি শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়। দুই বছর পর ২০০৭ সালে গ্রামটিকে ‘জব্বার নগর’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

এছাড়া সেখানে একটি পাকা সড়ক তৈরির পাশাপাশি জেলা পরিষদ ৪৪ লাখ টাকায় শহীদ জব্বার স্মৃতি পাঠাগার ও জাদুঘর নির্মাণ করে।

আর পারিবারিক উদ্যোগে জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার সীমান্তঘেষা শিমুলকুচি গ্রামে শহীদ মিনার নির্মাণ করে ভাষাশহীদ জব্বার ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম কোনোমতে পরিচালনা করা হচ্ছে।

ভাষাশহীদ জব্বারের ছেলে নুরুল ইসলাম বাদল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ওয়ারেন্ট কর্মকর্তা। দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে স্বস্ত্রীক থাকেন রাজধানীর তেজকুনিপাড়ার ওই বাড়িতে।

তিনি জানান, ১৯৭৩ সালে ৯০ বছরের জন্য ভাষাশহীদ জব্বারের মাকে বঙ্গবন্ধু রাজধানী ঢাকায় সাড়ে ৫ শতাংশ জমি লিজ দিয়েছিলেন।

১৯৯২ সালে জমিটির দলিল হয় এবং ৩০ বছর পর পর এটি নবায়ন করতে হয়। প্রায় ৪০ বছর আগে সেখানে কোনোমতে আধাপাকা একটি বাড়ি নির্মাণ করেন নুরুল ইসলাম।

তবে দীর্ঘদিনেও বাড়িটির উন্নয়ন করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাদলের বড় মেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী লুৎফুন নাহার শোভা (৪৫)।

ভাষাশহীদ আবদুল জব্বারের পরিবারের সদস্যরা।  ছবি: বাংলানিউজ

তিনি বলেন, ‘আমাদের বাড়ির অবস্থা কাহিল। বৃষ্টির সময় ঘরে পানি পড়ে। অনেকটাই বস্তির মতো পরিবেশে থাকতে হয়। আমাদের এই কষ্ট দেখার কেউ নেই। ’

ভাষাশহীদ জব্বারের এই নাতনি বাংলানিউজকে আরো বলেন, বাবা চেয়েছিলেন ডেভেলপার কোম্পানির কাছে এই জমি দিতে। সেই লক্ষ্যে ঢাকা জেলা প্রশাসনের কাছে ২০১৫ সালে আবেদনও করা হয়। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

পরবর্তীতে দুই থেকে তিন বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আরেকটি আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত সুরাহা হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আরেকটি দাবি জানান ভাষাশহীদ জব্বারের ছেলে নুরুল ইসলাম। পাঠ্যপুস্তকে ভাষা শহীদদের জীবনী বিস্তারিতভাবে আশা উচিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, প্রাথমিক স্তরে তৃতীয় শ্রেণিতে চার শহীদের জীবনী থাকলেও সেটা সংক্ষিপ্ত পরিসরে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরেও ভাষাশহীদদের পরিপূর্ণ জীবন ইতিহাস তুলে ধরা উচিত। তাহলে আজকের শিক্ষার্থী এবং নতুন প্রজন্ম তাদের সম্পর্কে জানতে পারবে। আমরা আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

নুরুল ইসলাম বলেন, ২০০০ সালে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এরপর আর তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়নি। আমরা চাই, বছরে অন্তত একদিন আমাদের ডেকে তিনি কথা বলবেন। এতে আমরা অন্তত মানসিকভাবে শান্তি পাবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯
এমএএএম/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।