ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শহীদ মিনারে বায়ান্নর আবহ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯
শহীদ মিনারে বায়ান্নর আবহ ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার/ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি। শুধু একটি দিন নয়, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালি জাতির অস্তিত্ব। সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও পাকিস্তানি শাসকরা বাংলা মায়ের মুখের ভাষা কেড়ে নিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছিল ছাত্রসহ মুক্তিকামী জনতার। পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষার জন্য একমাত্র প্রাণ উৎসর্গকারী এ জাতির স্বাধীনতাসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রেরণা জোগায় এ আত্মত্যাগ।

ভাষা শহীদদের সেই মহান আত্মত্যাগের স্মরণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় নির্মিত হয় শহীদ মিনার। যেটা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হিসেবে পরিচিত।

প্রতি বছরের মতো এবারও একুশে ফেব্রুয়ারি শ্রদ্ধা জানাতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কর্তৃপক্ষ। আলপনা, দেওয়াল লিখনের মাধ্যমে সাজ-সজ্জায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুটিয়ে তোলা
হয়েছে বায়ান্নের আবহ।  
 
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বাংলানিউজকে বলেন, ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে আমরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। এখন আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। ‘অমর একুশে উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি’ এবং বিভিন্ন সাব-কমিটি তাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব শেষ করেছে। রাষ্ট্রাচার অনুযায়ী একুশের প্রথম প্রহরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীমূল প্রস্তুত করা হয়েছে।
 
সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরো শহীদ মিনার ঘিরে বেষ্টনী দেওয়া হয়েছে। চারপাশে নিরাপত্তার কর্মীরা অবস্থান করছেন। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা শহীদ মিনারের মূল বেদী পরিদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সার্বিক বিষয় তদারকি করছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালেয়ের আইন অনুষদ প্রাঙ্গণে র‌্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।  

শহীদ মিনার এলাকায় দেওয়াল লিখনপুরো এলাকাকে সিসিটিভির আওতায় এনে কন্ট্রোল রুম থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। তবে প্রতিবার ওয়াচ টাওয়ার করা হলেও এবার সেটি দেখা যায়নি। চারুকলার শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার রাতেই আলপনা আঁকার কাজ শেষ করেছেন। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসা লোকজনের প্রবেশ ও বের হয়ে যাওয়ার পথ নির্দেশ করে দেওয়া হয়েছে।
 
দেওয়াল লিখনে বায়ান্নর আবহ
শহীদ মিনারের বিপরীত পাশের বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনের দেওয়ালে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ভাষা ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস। লাল রঙের উপর সাদা রং ব্যবহার করে লেখা হয়েছে আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর বিখ্যাত গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি…, হাসান হাফিজুরের উক্তি ‘আবুল বরকত, সালাম, রফিকউদ্দিন, জব্বার, কি আশ্চর্য, কি বিষণ্ন নাম! একসার জলন্ত নাম। ’ কবি শামসুর রহমানের লেখা স্বাধীনতা তুমি শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উক্তি ‘আমি বাঙালি বাংলা আমার দেশ বাংলা আমার ভাষা’।  

এছাড়া কবি জসীম উদ্‌দীন, আবুল ফজল, ধীরেন্দ্রনাথদের ভাষা আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন উক্তি এখানে স্থান পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সৌন্দর্য বাড়াতে ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
 
শহীদ মিনার এলাকায় দেওয়াল লিখনশহীদ মিনারকেন্দ্রিক নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ ঢাকা মহানগরীর অন্য শহীদ মিনারগুলোতেও সুদৃঢ়, নিরবচ্ছিন্ন ও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘিরে থাকবে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়। সিসিটিভির আওতায় থাকবে এ এলাকার প্রতিটি ইঞ্চি।  

অরপদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখার জন্য ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
 
মহান একুশে ফেব্রুয়ারিতে ঢাবির কর্মসূচি
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, অফিসার ও কর্মচারীদের একটি প্রভাতফেরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবন প্রাঙ্গণে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শুরু হবে। প্রভাতফেরি সহকারে তারা আজিমপুর কবরস্থানে ভাষা শহীদদের কবরে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।  

অমর একুশের এই যৌথ মৌন মিছিলে অংশগ্রহণের জন্য সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, অফিসার ও কর্মচারীদের আগামী ২১শে ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সকাল সাড়ে ৬টার আগে কলাভবন প্রাঙ্গণে অপরাজেয় বাংলার সামনে সমবেত হওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। বাদ জোহর অমর একুশে হলে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত, বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদুল জামিয়া, সব হলের মসজিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকার মসজিদসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফেরাত/শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত/প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯
এসকেবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।