ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জাতীয় তথ্য ভাণ্ডার চায় এনটিএমসি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯
জাতীয় তথ্য ভাণ্ডার চায় এনটিএমসি এনটিএমসি কার্যালয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক

ঢাকা: দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে সব তথ্য একই প্ল্যাটফর্মে আনতে চায় ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)। আবার রাষ্ট্রীয় তথা জনগণের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় এনে টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে 'টেলিকমিউনিকেশ ডাটাহাব' তৈরির কথাও ভাবছে সংস্থাটি।

'টেলিকমিউনিকেশন ডাটাহাব'র সঙ্গে 'জাতীয় ডাটাহাব'র সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে যে কোনো তথ্য যাচাইয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। এখান থেকে আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আলাদাভাবে সুবিধা পাবেন, যার জন্য নিজস্ব আলাদা ডাটাহাবের প্রয়োজন হবে না।

 

বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এনটিএমসি কার্যালয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এমন প্রস্তাবনার কথা তুলে ধরা হয়। এমন প্রস্তাবনারর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে অপরাধীরা ডিজিটাল মাধ্যমের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে আসছে। ভার্চুয়াল অপরাধ প্রতিরোধ করতেই এনটিএমসি গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটিকে আরো কতোটা সমৃদ্ধ করা যায় কিংবা তাদের ঘাটতিগুলোর বিষয়ে আলোচনা করতেই আজকের বৈঠক। তাদের কাজের সুবিধার জন্য কি কি প্রয়োজন আমরা শুনেছি।

দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সমৃদ্ধ করতে পর্যায়ক্রমে সব করণীয় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা তথা দেশ ও জনগণের নিরাপত্তায় এনটিএমসির সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জাতীয় পর্যায়ে সব তথ্যের সমন্বয়ে একটা কমন প্ল্যাটফর্ম করার প্রপোজাল রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। তাদের সেন্ট্রাল ডাটা হাব তৈরির প্রস্তাবনাটি আমাদের বিবেচনাধীন রয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করবো। তিনি সায় দিলে এটি বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রতিষ্ঠানটির সমন্বয় প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করতেই এনটিএমসি গঠন করা হয়েছে। সংস্থাগুলোর যার যখন প্রয়োজন এখানে আসছেন এবং তথ্য নিচ্ছেন। সবার মধ্যে চমৎকার সমন্বয় রয়েছে।

এনটিএমসি রাষ্ট্রীয় কাজ করছে। এখানে সবার তথ্য অবশ্যই গোপনীয় থাকছে। যার প্রতি আমাদের গোয়েন্দাদের সন্দেহ রয়েছে কিংবা যার বিরুদ্ধে অপরাধে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ রয়েছে তাদের সার্ভিলেন্সের আওতায় আনা হবে।

এমন নজরদারি সমালোচনায় কোনো বাধা সৃষ্টি হবে কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমালোচনা চলবেই। তবে মানহানিকর কিংবা মিথ্যে সমালোচনা হলে সংশ্লিষ্ট কেউ অভিযোগ করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সমন্বয়ের বিষয়ে এনটিএমসির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান বলেন, আমাদের এখানে বিটিআরসি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়সহ সব বাহিনীর প্রতিনিধি রয়েছে। একটা ভুয়া ফেসবুক আইডির জন্য যদি লোকাল থানা সরাসরি ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাহলে সেটা ফলপ্রসূ হবে না। সবার চাহিদা আমাদের পাঠালে, আমরা সবার তথ্য একসঙ্গে করে কেন্দ্রীয়ভাবে যোগাযোগ করি। ফলে বেশ কিছু আইডি ইতোমধ্যে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দিয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির অপরাধ অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।

নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে বেশকিছু ফোনালাপ ফাঁসের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই পক্ষের আলাপের মধ্যে কোনো পক্ষ ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেও এমনটা করতে পারে। এসব কখনোই কোনো গোয়েন্দা সংস্থা বা এনটিএমসি থেকে হয়নি।
এনটিএমসি জানায়, বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের তথ্য প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান সম্প্রসারণ বিবেচনায় কেন্দ্রীয় মনিটরিং ও সরকারের কার্যক্রমকে সুসংহত করার লক্ষ্যে ইন্টিগ্রেটেড লফুল ইন্টারসেপশন সিস্টেম (আইএলআইএস) বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।  

এছাড়া, কেন্দ্রীয়ভাবে 'জাতীয় ডাটাহাবে' জাতীয় পরিচয়পত্র, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স (বিএফআইইউ), মোবাইল ব্যাংকিং, শিক্ষাবোর্ড, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে যুক্ত করা হবে।

টেলিকমিউনিকেশন ডাটাহাবের সঙ্গে জাতীয় ডাটাহাবের সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে যে কোনো তথ্য যাচাইয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। এখান থেকে আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থা পৃথকভাবে সুবিধা পাবে যার জন্য নিজস্ব আলাদা ডাটাহাবের প্রয়োজন হবে না।

ভার্চুয়াল জগতে অপপ্রচার রোধে সার্বক্ষণিক মনিটরিংসহ ব্লকিং ও ফিল্টারিংয়ের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে এনটিএমসি। ফলশ্রুতিতে এ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি ছাড়া তৈরি ৭৫২টি ফেসবুক আইডি, প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ভুয়া ৭১টি ফেসবুক লিংক বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া, জঙ্গি তৎপরতায় ব্যবহৃত ৫৪টি ওয়েবসাইট বন্ধ করা হয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নামে ভুয়া ৫৭৮টি ফেসবুক আইডি, ২৭০টি ফেসবুক পেজ, ৮টি ফেসবুক গ্রুপ, নৌবাহিনীর নামে ভুয়া ১৫টি ফেসবুক পেজ, ৬টি গ্রুপ, নির্বাচন কমিশনের নামে ৮টি ভুয়া ফেসবুক আইডি, তিনটি পেজ ও ১৪টি গ্রুপ বন্ধ করা হয়েছে। জঙ্গি তৎপরতা প্রচারণার অভিযোগে বন্ধ করা হয়েছে ১৪১টি ফেসবুক আইডি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯
পিএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।