ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গাড়িতে ডিম ছুড়ে ডাকাতি!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০১৯
গাড়িতে ডিম ছুড়ে ডাকাতি! আটক ডাকাতেরা-ছবি-বাংলানিউজ

ঢাকা: দিনে ভিন্ন ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকলেও সন্ধ্যা নামতেই একত্রিত হতেন রাজধানীর দিয়াবাড়ী এলাকায়। ১০-১২ জন মিলে ইয়াবা ব্যবসার সিন্ডিকেটের পাশাপাশি গড়ে তোলেন সংঘবদ্ধ ডাকাত দল। এ এলাকায় বেড়াতে আসা কিংবা চলাচলরত লোকদের টার্গেট করে মোবাইল, টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নিতেন দলের সদস্যরা।

দিয়াবাড়ী হয়ে চলাচলরত প্রাইভেট গাড়ির গতিরোধ করে নির্ধারিত সড়কটি ভাঙা রয়েছে জানিয়ে নির্জন কোনো পথে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন। পেছন থেকে ইট বা পাথর ছুড়ে চালককে গাড়ি থামাতে বাধ্য করতেন, কখনও গাড়ির সামনের গ্লাসে ডিম ছুড়ে মারতেন ফলে চালক কিছুই দেখতে পেতেন না।

গাড়ি থামালে অস্ত্রসহ ভয়-ভীতি দেখিয়ে কিংবা শারীরিকভাবে নির্যাতন করে ডাকাতি করতো এই চক্রের সদস্যরা।

রোববার (৩ মার্চ) দিনগত রাতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব-১) স্কোয়াড কমান্ডার (সিপিসি-২) সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল দিয়াবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই চক্রের মূলহোতাসহ নয়জনকে আটক করে।

আটকেরা হলেন- আসলাম আলম স্বাধীন (২৫), আশরাফুল ইসলাম সনি ওরফে বিশু (২৬), রবিন (২৫), শামীম ইসলাম (২২), নাজমুল হাসান (২১), নিজাম উদ্দিন অপু (২৫), মিজানুর রহমান (২৩), তাইমুল ইসলাম (১৯) ও মামুন (১৯)।

এসময় তাদের কাছ থেকে একটি বন্দুক, দুই রাউন্ড কার্তুজ, দুইটি চাপাতিসহ বিভিন্ন অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

সোমবার (৪ মার্চ) দুপুরে কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম।

আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে পরস্পরের যোগসাজসে দিয়াবাড়ী এলাকায় ডাকাতি চালিয়ে আসছিল। ওই এলাকায় ঘুরতে আসা লোকজনকে সন্ধ্যার পর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব কেড়ে নিতো। এছাড়া ওই রোডে চলাচলরত প্রাইভেটকারকে টার্গেট করতো চক্রটি। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী চক্রের সদস্যরা ওঁৎ পেতে থাকতো এবং কোনো প্রাইভেট গাড়ি দেখলেই তার গতিরোধ করে রাস্তার কাজ চলছে বা ভাঙা বলে নির্জন রোডে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতো। সেই সড়কে আগে থেকেই ডাকাত দলের অন্য সদস্যরা প্রস্তুত থাকতো।

এছাড়া, চলন্ত গাড়ি থামানোর জন্য রশি ও রোড ব্লকার ব্যবহার করতো। কোনো কোনো গাড়ির পেছন থেকে পাথর বা ইট ছুড়ে চালককে গাড়ি থামাতে বাধ্য করতো। কখনও গাড়ির সামনের গ্লাসে ডিম ছুড়ে মারতো। এর ফলে চালক কিছুই দেখতে না পেয়ে গাড়ি থামাতে বাধ্য হতেন। আর সেই সুযোগে অস্ত্র দেখিয়ে বা ভয়-ভীতি দেখিয়ে কখনও শারীরিকভাবে নির্যাতন করে সবকিছু লুট করে পালিয়ে যেতো চক্রটি।

আটক স্বাধীন এই চক্রের মূলহোতা উল্লেখ করে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক আরও বলেন, তিনি মূলত একজন ইয়াবাসেবী এবং ব্যবসায়ী। গত জুনে ইয়াবাসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল এরপর আবার ইয়াবাসহ তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জামিনে বের হয়ে তিনি আবারো একই কাজে জড়িয়ে পড়েন। স্বাধীনের নেতৃত্বে ১০-১২ জন মিলে সংঘবদ্ধ এই ডাকাত চক্রটি গড়ে তোলেন। যার সদস্যরা দিনে ভিন্ন ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকলেও সন্ধ্যার পর দিয়াবাড়ী এলাকায় ডাকাতি করে আসছিলো।

চক্রের সদস্যরা এ কাজে প্রত্যেকে আলাদা মোবাইল ব্যবহার করতো। নির্ধারিত টার্গেট অনুযায়ী প্রত্যেকের মধ্যে ভয়েজ মেসেজ চালাচালি করে একত্রিত হতো বলেও জানান তিনি।

সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, দিয়াবাড়ী এলাকায় আরও দু’টি ডাকাত দল সক্রিয় রয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাদের গ্রেফতারে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বাপ্পী মুন্সি নামের এক ভিকটিম জানান, গত ১ মার্চ সন্ধ্যা ৭টায় উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর রোড হয়ে সাইকেলসহ যাচ্ছিলেন তিনি। পথে তার সাইকেল থামিয়ে মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে কাছে থাকা নিজ কোম্পানির এক লাখ টাকা ও মোবাইল কেড়ে নেয়। আটকদের মধ্যে মামুন প্রথমে তার সাইকেলের গতি রোধ করে বলে চিহ্নিত করেন বাপ্পী।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৯
পিএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।