ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মিরপুরে কোটি টাকার চাঁদায় চলছে অবৈধ অটোরিকশা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৯
মিরপুরে কোটি টাকার চাঁদায় চলছে অবৈধ অটোরিকশা অটোরিকশার পেছনে মার্কা (লাল চিহ্নিত)। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: অবৈধ হলেও রাজধানীর মিরপুর এলাকার ছোট ছোট সড়কগুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্য, মিরপুর ১১, ১২ ও ১৩ নম্বর, পল্লবী, রূপনগর, শিয়াল বাড়ি, দুয়ারীপাড়া, ইস্টার্ন হাউজিং, লালমাটি, বাউনিয়াবাঁধ, জুটপট্টি এলাকায় প্রায় ৯ হাজার অটোরিকশা চলাচল করে। এই যানগুলো এভাবে সড়ক দাপিয়ে বেড়ানোর পেছনে চলছে কোটি টাকা চাঁদার কারবার। এই চাঁদা ক্ষমতাসীন দলের নেতা পরিচয়ধারীদের পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশের কারও কারও পকেটে যায় বলে অভিযোগ অটোরিকশার চালকদেরই।

জানা গেছে, পল্লবী, মিরপুর ১৩ নম্বরসহ আশপাশের এলাকায় ৬ হাজার অটোরিকশা চলাচল করে। রূপনগর ও আশপাশের এলাকায় চলে প্রায় ৩ হাজার রিকশা।

এই ৯ হাজার অটোরিকশার প্রত্যেকটি থেকে প্রতিমাসে ১২শ’ টাকা চাঁদা তোলা হয়। হিসাব অনুযায়ী, তাতে প্রতিমাসে ওঠে ১ কোটি ৮ লাখ টাকা। কোনো অটোরিকশাচালক যেন ফাঁক-ফোকরে চাঁদা না দিয়ে চলতে না পারে, সেজন্য মাসে মাসে কার্ড বা মার্কা দেওয়ারও নিয়ম তৈরি করা হয়েছে। এক মাসের চাঁদা দিলে পরের মাসের জন্য দেওয়া হয় কার্ড বা মার্কা। এই কার্ড বা মার্কা দেখলে রাস্তায় ট্রাফিক শৃঙ্খলায় নিয়োজিত কোনো কর্মকর্তাও অটোরিকশাগুলোকে ধরেন না। আবার মূল সড়কে কখনো এসে যদি কোনো অটোরিকশা ধরাও পড়ে, তবে সেগুলোকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য চলে দেনদরবার। এক পর্যায়ে ছাড়িয়ে নিয়েও যাওয়া হয়।

এলাকার অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইকবাল হোসেন খোকন ওরফে জাসদ খোকন নামে এক ‘প্রভাবশালী’ কার্ড বা মার্কা বিলি করেন অটোরিকশাগুলোর চালকদের মাঝে। জাসদ খোকনের কাছ থেকে পল্লবী ও আশপাশের এলাকার জন্য কার্ড বা মার্কা নেন আড্ডু ও সুজন নামে দু’জন। আর রূপনগর ও আশপাশের এলাকার জন্য কার্ড নেন হেদায়েত ও রাসেল নামে দু’জন। এরা প্রত্যেকেই ক্ষমতাসীন দলের লোক বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন নিজেদের।

যে মার্কাগুলো দেখা হয়, তারমধ্যেও আছে চাতুর্য। যেন একই মার্কা দুই মাসে না চালানো যায়। পল্লবীর অটোরিকশাগুলোতে দেখা যায়, ‘শহীদ মিনার’ মার্কা আছে, এই মার্কা দেওয়া হয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য। জানুয়ারি মাসে মার্কা ছিল ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’। রূপনগর, শিয়ালবাড়ি, দুয়ারী পাড়া, ইস্টার্ন হাউসিং এলাকায় ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য মার্কা দেখা যায় ‘২ ম’। জানুয়ারি মাসের জন্য মার্কা ছিল ‘১ ম’। এই মার্কা দেখেই ‘মাসোহারাভোগী’ ট্রাফিক কর্মকর্তা ও নেতারা বুঝতে পারেন, কোন অটোরিকশা কোন এলাকার এবং কোন মাসের চাঁদা দিয়ে চলছে। মিরপুরের একটি এলাকায় অটোরিকশার সারি।  ছবি: বাংলানিউজ

রূপনগরের রিকশাচালক কামাল শেখ বাংলানিউজকে বলেন, ‘যুবলীগের নেতা হেদায়েত ১২শ’ টাকা নিয়ে রিকশা মালিকদের টিকেট বা মার্কা দেয়। রিকশায় মার্কা ছাড়া রাস্তায় নামলে ডাম্পিংয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। তাই ভেতরে ভেতরে রিকশা চালাতে হয়। প্রধান সড়কে ওঠা যায় না। উঠলেই পুলিশ ধরে। তাদের ডিউটি রাতে শেষ হলে আমরা মেইন রোডে আসি। ’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইস্টার্ন হাউজিংয়ের আরেক চালক বলেন, ‘আমাদের মালিকদের কাছে টিকিট বিক্রি করে হেদায়েত ও রাসেল। এদিকের সব এলাকার টাকার ভাগ যায় পল্লবী থানা যুবলীগের সভাপতি তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পির কাছে। ’

মিরপুর ১১ নম্বর এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চালক বলেন, ‘পল্লবী ও মিরপুরের মধ্যে অটোরিকশার গ্যারেজ আছে প্রায় ২০০টি। প্রতিমাসে বদলায় রিকশার মার্কা। লালমাটি, বাউনিয়াবাঁধ, বেগুনটিলা, ঝুটপট্টি রিকশায় চাঁদা তুলে আড্ডু। এই টাকার ভাগ প্রশাসন ও বাপ্পির কাছে যায়। ’

আরও ৬ জন চালকের সঙ্গে কথা বলে এমন অভিযোগ শোনা যায়।

রূপনগরের এক গ্যারেজ মালিক বলেন, ‘হাজী হারুন এর অফিসের সামনে ২, ৩ ও ৫ নম্বর রোডে আছে রিকশার গ্যারেজে। সেখানে রিকশায় চার্জও দেওয়া হয়, সেজন্য টাকা নেওয়া হয়। রূপনগরের টাকা নিয়ে মাসিক কার্ড দেন যুবলীগ নেতা হেদায়েত। ’

বাউনিয়াবাঁধের একটি রিকশার গ্যারেজ মালিক বলেন, ‘আমার রিকশার জন্য টাকা দিয়ে মার্কা আনতে হয়। নইলে রাস্তায় রিকশা নামাতে পারি না। টাকা দেই বিহারী আড্ডুর পোলাপানের কাছে। হে এই দিক দেহে। সব অটোরিকশার টাকার ভাগ পায় বাপ্পি। ’

আড্ডু ও হেদায়েতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও দু’জনকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি। মিরপুরের একটি এলাকায় অটোরিকশার সারি।  ছবি: বাংলানিউজ

যোগাযোগ করা হলে পল্লবী থানা যুবলীগের সভাপতি তাজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পি অটোরিকশা থেকে চাঁদা তোলার কার্যক্রমে নিজের সম্পৃক্তা অস্বীকার করেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আল্লাহর কসম আমি এসবের একটি টাকাও ধরি না। আমার নাম ভাঙিয়ে টাকা তুলছে অন্যরা। এমন হলেতো, রাজনীতি করা ছেড়ে দিতে হবে আমাকে। আমি এসবের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। ’

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার কোন অফিসার চাঁদা নেয়, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩২ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৯
এমএমআই/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।