গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফের বহরে জেইএমের ওই হামলায় বাহিনীর ৪৫ জওয়ান প্রাণ হারান। ঘটনাটির পর দু’পক্ষই সীমান্তে সৈন্য-সামন্ত জড়ো করে গোলাগুলি করে।
বর্বরোচিত ওই হামলার পর দায় স্বীকার জেইএমের একাধিক নেতা অডিও ও ভিডিওবার্তায় ভারতের বিরুদ্ধে এ ধরনের আক্রমণ চলবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। এসব বার্তায় জইশ নেতারা ‘জিহাদ জিন্দাবাদ’, ‘শোদাই কাশ্মীর জিন্দাবাদ’ বলার পাশাপাশি ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলেও স্লোগান দেন।
অথচ জেইএমের হামলা চালানো এবং তাদের পাকিস্তানে থাকা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া যায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশীসহ সংশ্লিষ্টদের।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কোরেশী বলেন, ‘পুলওয়ামা হামলায় জেইএম জড়িত কি-না আমরা নিশ্চিত নই। এটা নিয়ে আমাদের মধ্যেও দ্বিধা-ধন্দ রয়েছে’।
‘দ্বিধা-ধন্দ কোথায়’ জানতে চাইলে কোরেশী বলেন, ‘জেইএমের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করা হয়েছে এবং তারা বলেছে ‘না’। তারা অস্বীকার করেছে। এটাই দ্বিধা। ’
‘কারা যোগাযোগ করেছে জইশ নেতাদের সঙ্গে’ জানতে চাইলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যারা তাদের পরিচিত তারা। সেখানে যারা আছে তারা। তারা কোনো দায় স্বীকার করেনি। তারা অস্বীকার করেছে। ’
‘কিন্তু জইশ তো প্রেস বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছে’ বলা হলে কোরেশী বলেন, ‘এ বিষয়ে পরস্পরবিরোধী রিপোর্ট আছে। এটাই দ্বিধার। ’
আরেকটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কোরেশী স্বীকার করে নেন জেইএমের প্রধান মাসুদ আজহার পাকিস্তানেই আছেন।
‘জইশ প্রধান মাসুদ আজহার কি এখন পাকিস্তানে আছেন? যদি থাকেন, তবে কি আপনারা তাকে ধরবেন?’- এমন প্রশ্ন করা হলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি পাকিস্তানেই আছেন, তবে অবস্থা খুব খারাপ। তার অবস্থা এতোই খারাপ যে ঘর থেকেও বেরে হতে পারছেন না। ’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোরেশী পাকিস্তানে জইশ নেতার অবস্থানের কথা বললেও তার ঠিক বিপরীত কথা বলেন দেশটির আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানে জইশ-ই-মুহম্মদের অস্তিত্ব নেই। ’ তার এ বক্তব্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয় গত ৬ মার্চ।
মাহমুদ কোরেশী বা মেজর জেনারেল আসিফ গফুরের বক্তব্যে ‘থলের বিড়াল’ লুকিয়ে রাখার চেষ্টা হলেও তা বের করে দেন পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ। তিনি এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে মাসুদ আজহারের নেতৃত্বাধীন জইশ-ই-মুহম্মদকে ভারতের মাটিতে আক্রমণের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো। সেই সাক্ষাৎকারের খবর ৬ মার্চই প্রকাশ হয় সংবাদমাধ্যমে।
সামরিক বাহিনী ও সরকারের বর্তমান নেতৃত্বের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য আর সাবেক নেতাদের এমন সরল স্বীকারোক্তি স্বভাবতই চাপে ফেলে দিয়েছে পাকিস্তানকে। সেজন্যই কি-না মাসুদ আজহারের দুই ভাই জেইএম’র নীতিনির্ধারক বলে পরিচিত আবদুল রউফ আজগর ও হামাদ আনসারিকে গ্রেফতার করেছে পাকিস্তান সরকার। যদিও মাসুদ আজহারকে ধরা হয়নি এখনো। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত চাপের মুখে পাকিস্তান মাসুদ আজহারকে না ধরে পার পাবে কি-না, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষায়।
জইশ-ই-মুহম্মদ ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠার পর তাদের উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডের কারণে ২০০২ সালে পাকিস্তানে নিষিদ্ধ হয়। নিষিদ্ধ হলেও সীমান্ত পেরিয়ে এসে একাধিকবার ভারতের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায় জঙ্গি গোষ্ঠীটির সদস্যরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৯
টিআর/এইচএ/