হাসপাতালের হিসাব বিভাগের তথ্য মতে, গত দুই অর্থবছরে অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানি তেল সরবাহকারী পাম্পে বকেয়া পড়েছে ২১ লাখ টাকা। এ কারণে চলিত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে পাম্প কর্তৃপক্ষ তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।
জানা যায়, ১০০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালটিতে গড়ে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৫০০ রোগী চিকিৎসা সেবা নেয়। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ থাকায় রোগীদের বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ও ভাড়া মাইক্রোবাসে করে রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুর ও ঢাকায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে হচ্ছে স্বজনদের। এতে করে কয়েকগুন বেশি খরচ গুনতে হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা অসহায় মানুষদের।
জেলা শহরের নতুন বাজার এলাকা থেকে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা মো. সহিদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে দুইটি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। তেলের সংকট দেখিয়ে ২৯ দিন ধরে
অ্যাম্বুলেন্স দুটি বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালে সাধারণ জনগণ যারাই আসছে তারা এই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত যেন এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স দুটি চালু করা হয়।
রোগীর স্বজন আতিক হোসেন বাংলানিউজকে জানান, দিনের বেলায় হয়তো বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স বা মাইক্রোবাস ভাড়া করে রোগীকে ফরিদপুর নেওয়া যায়। কিন্তু গভীর রাতে রোগীর অবস্থা খারাপ হলে আর কোনো ব্যবস্থা নেই। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স যখন মানুষ ভাড়া করে তখনই তো তার ভাড়া পরিশোধ করা হয়। তাহলে তেলের টাকা বাকি পরে কিভাবে ?
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. মাইনউদ্দিন মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, তেলের টাকা বাকি পড়ায় পাম্প আর তেল দিচ্ছে না। তাই কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ রেখেছে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দেখে আমার নিজেরও খারাপ লাগছে।
আরেক অ্যাম্বুলেন্স চালক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি মাসে প্রায় দুটি অ্যাম্বুলেন্স দেড় থেকে দুই শতাধিক জরুরী রোগী রেফার্ড হয়ে ফরিদপুর ও ঢাকায় যায়। হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুর ভাড়া ৬৬০ টাকা ও রাজবাড়ী থেকে ঢাকার ভাড়া ২ হাজার ৫০০ টাকা। যেখানে প্রাইভেট গাড়ির ভাড়া রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুরে ২ হাজার ও ঢাকায় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা মো. মোফাজ্জেল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, গত ১৭-১৮ অর্থ বছরে তেলের পাম্পে বাকি ১৪ লাখ ৩২ হাজার ২৫৬ টাকা ও ১৮-১৯ অর্থ বছরে বাকি ৬ লাখ ৬৯ হাজার ২২০ টাকা। দুই অর্থ বছরে মোট তেলের টাকা বাকি পড়েছে ২১ লাখ ১ হাজার ৪৭৬ টাকা। এ বিষয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (অর্থ) বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি জেলার স্থানীয় তেলের পাম্পে অনুরোধ করে বলা হয়েছিলো যে জনস্বার্থে তেল সরবরাহ চালু রাখেন। কিন্তু তেলের পাম্প তাদের তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় অ্যাম্বুলেন্স দুটি বন্ধ রয়েছে।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দীপক কুমার বিশ্বাস বাংলানিউজকে জানান, রাজবাড়ী থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অনেক রোগী রেফার্ড হয়ে থাকে। এজন্য অনান্য জেলার তুলনায় রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স বেশি চলাচল করে। এতে করে তেলের পরিমাণ ও বেশি লাগে। পাম্পে তেলের টাকা বাকি পড়ায় তেল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত আমরা এর সমাধান করতে পারবো বলে আশা করছি।
তবে জরুরি রোগীদের সেবায় ফায়ার সার্ভিস ও মাতৃমঙ্গল কেন্দ্রসহ অনান্য সরকারি দপ্তরের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের ব্যবস্থার কথা জানান আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আলী আহসান তুহিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৭ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৯
এনটি