শনিবার (২৩ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে পাক্ষিক অনন্যা এ সম্মাননা দেয়। বিভিন্ন সময়ে কাজের মধ্য দিয়ে সমাজের বৈষম্য, নির্যাতন ও নানা বাধা-বিঘ্নের বিরুদ্ধে নারীর মানবিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে নিজেদের সক্ষমতা ও অগ্রগতিকে তুলে ধরছেন এই নারীরা।
কৃতি এই নারীদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী ও সংসদ সদস্য সুবর্ণা মুস্তাফা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক এমপি।
এসময় তাদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা ও সভাপতিত্ব করেন অনন্যার সম্পাদক ও প্রকাশক তাসমিমা হোসেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই সাধনার নৃত্যশিল্পী সুইটি দাস ও তার দল মনিপুরী নৃত্য প্রদর্শন করেন। এরপর সম্মাননাপ্রাপ্ত ১০ নারীর ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। তবে বিশেষ কাজে অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি ড. সায়েবা আক্তার ও শামসুন্নাহার। তাদের পক্ষে পরিবারের সদস্যরা এ সম্মাননা গ্রহণ করেন।
পাক্ষিক অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, দেশে নারী ব্যক্তিত্ব, যাদের এখন সমাজে নানা ভূমিকা রাখতে দেখা যায়, তাদের প্রায় বেশিরভাগ নারীকেই প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছে অনন্যা। এটা অনন্যার জন্য খুব গর্বের জায়গা। নারীদের প্রতি অনাচারের কথা নারীদেরই বলতে হবে। দাবি না তুললে, কথা না বললে, সমাজ থেকে অন্ধকার দূর হবে না।
সম্মাননা পাওয়ার পর ক্রিকেটার রুমানা আহমেদ বলেন, ক্রিকেটে আমরা নারী ও পুরুষ সমানভাবেই এগিয়ে যেতে চাই। আমরা হয়তো পুরুষ দলের মতো শক্তিশালী হইনি। কিন্তু আমরা এশিয়া কাপ জয় করে দেখিয়ে দিয়েছি আমরা পুরুষ দলের চেয়েও এগিয়ে আছি। তবে আমরা সবাই দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছি, এটাই গৌরবের।
পারভীন মাহমুদ বলেন, নারীর জন্য, দেশের যে কোন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে আমি কাজ করার চেষ্টা করেছি। পড়াশোনায় আমার ৭ থেকে ৮ বছরের গ্যাপ ছিল। কিন্তু আমি আমার লক্ষ্য থেকে সরে যাইনি। এ পথে আমার পরিবার আমার শাশুড়ি খুব সহযোগিতা করেছেন। আমি আগামীতেও কাজ করতে চাই। একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ সৃষ্টিতে সবাই মিলে যেনো এগিয়ে যেতে পারি।
উদ্যোক্তা আফরোজা খান বলেন, আমি দুপরে অফিসে খাবার সাপ্লাই দিচ্ছি। এক দেড় বছরের মধ্যেই মানুষের বিপুল সাড়া পেয়েছি। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বমান নিশ্চিত করা খুব কঠিন। কিন্ত আমি সেই বিশ্বমান নিশ্চিত করেছি।
নাজমুন নাহার বলেন, আমি কৃতজ্ঞ সৃষ্টিকর্তার প্রতি। বিশ্বের ১২৫টি দেশ ঘুরেছি। স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যে বিশ্বের ২০০টি দেশ ভ্রমণের প্রত্যাশা রয়েছে। আত্মপ্রত্যয় থাকলে পৃথিবী যেমন জয় করা সম্ভব, তেমনি অনন্যা পুরস্কারও সম্ভব।
মনিপুরী নৃত্য শিল্পী সুইটি দাস চৌধুরী বলেন, শিল্পীরা চর্চা করেন, শিল্পকে ভালোবেসে, কোনো কিছু পাওয়ার আশায় নয়। সেই কাজের জন্য এ পুরস্কার পাওয়া আমার জন্য অনেক বড় সম্মান।
সাংবাদিক লাইলী বেগম বলেন, নারী সাংবাদিক হওয়ার কথা ছিল না। প্রয়োজনের টানে আমি কাজ শুরু করি। মফস্বলে মেয়েদের সাংবাদিকতা করা খুব কঠিন। কিন্তু আমি সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।
১৯৯৩ সাল থেকে অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। প্রতি বছর নিজ নিজ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে দেশের ১০ জন বিশিষ্ট নারীকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত এই সম্মাননা পেয়েছেন ২৫০ কৃতি নারী।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৯
এইচএমএস/টিএ