জানা যায়, প্রায় ৮ মাস আগে ভূমি অধিগ্রহণ এবং অপসারণ (ইউটিরিটি) ব্যয় সংশ্লিষ্ট অধিদফতরে হস্তান্তর করা হলেও এসব কাজে তেমন অগ্রগতি নেই। দ্রুত গতিতে সড়কটি নির্মাণে সওজ বিভাগ চেষ্টা করলেও এসব প্রতিকূলতার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।
সিরাজগঞ্জ সওজ সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের এপ্রিলে এডিবির অর্থায়নে নলকা-সিরাজগঞ্জ-সয়দাবাদ মহাসড়ক প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। তিন প্যাকেজের প্রকল্পটির ব্যয় হবে ২৬৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৬.৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চন্ডিদাসগাঁতী-কাটাওয়াপদা চারলেন মহাসড়কের প্রস্থ হবে ১৮ মিটার। চারলেনের উভয়পাশে ৯.৭ মিটার প্রস্থের লিংক রোড হবে ৭ কিলোমিটার করে।
সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম প্রামানিক বাংলানিউজকে বলেন, গত বছরের জুন মাসে প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ, বিদ্যুতের পোল, গাছ ও স্থাপনা অপসারণ (ইউটিরিটি) ব্যয়ের টাকা সংশ্লিষ্ট দফতরকে দেওয়া হয়। এরমধ্যে, ভূমি অধিগ্রহণে ৬৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা দেওয়া হয় জেলা প্রশাসনকে। বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণ ও প্রতিস্থাপনে নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানিকে (নেসকো) ২ কোটি ৮৬ লাখ, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে ১ কোটি ৬৯ লাখ, পানির লাইন অপসারণে সিরাজগঞ্জ পৌরসভাকে ২ কোটি ১৮ লাখ, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানিকে ৩ কোটি ৮০ লাখ ও বিটিসিএলকে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা দেওয়া হয়।
ভূমি অধিগ্রহণে মহাসড়কের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমির দাগ-খতিয়ান, নকশা ও মাপ-জরিপ করে ভিডিও ফুটেজসহ জেলা প্রশাসনের এলএ শাখায় দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের মাসিক সমন্বয় সভায় একাধিকবার আলোচনাও করা হয়েছে। তারপরও অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া এগোচ্ছে না। গত দেড় মাসে দুটি চিঠি দেওয়া হয়েছে যার কোনো ফলোআপ হয়নি।
তিনি আরও বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও নেসকো কর্তৃপক্ষকে বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণের জন্য দফায় দফায় বলা হলেও কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। ৯ মাস আগে এসব কাজের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রাস্তার পাশে গাছ কাটার জন্য বন বিভাগকেও বারবার চিঠি দেওয়া হলেও তারা কাজ করছেন না। পানির লাইন সরিয়ে নিতে কার্যকরী উদ্যোগ নিচ্ছে না পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। এসব প্রতিকূলতার কারণে প্রকল্পটির কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম মাসুদ বাংলানিউজকে বলেন, বৈদ্যুতিক পোল ও লাইন অপসারণ ও প্রতিস্থাপনের জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এরমধ্যে, সওজ আমাদের ২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা দিয়েছে। যেখান দিয়ে লাইনটা যাবে সেখানে মাটি ভরাট হয়নি। এখনো গর্ত কিংবা পুকুর রয়েছে। লাইন যাবে রাস্তার পাশ দিয়ে, গর্ত দিয়ে যাবার কোনো সুযোগ নেই। সওজ কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে রাস্তার পাশে গর্তগুলো ভরাট করেল বৈদ্যুতিক পোল সেখানে শিফট করা হবে।
সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর মহা-ব্যবস্থাপক কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, পল্লী বিদ্যুতের অধিকাংশ খুঁটি অপসারণ ও প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। কিছুটা বাকি রয়েছে অল্প সময়ের মধ্যে সেটা অপসারণ করা হবে।
গাছ কাটাকে দীর্ঘ প্রক্রিয়া উল্লেখ করে পাবনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। আগামী ২/৩ মাসের মধ্যেই গাছগুলো কাটা শেষ হবে। এ রুটে গাছের ৩২টা লটের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে বিক্রিও হয়ে গেছে। এরমধ্যে ২৪টি লট কাটা হয়েছে। আটটি লট বাকি হয়েছে। আমরা ঠিকাদারকে চাপ দিচ্ছি। তবে তাদের আর্থিক সমস্যা থাকার কারণে দ্রুত গাছগুলো কাটা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও আমরা ঠিকাদারদের চাপ দিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া সওজ কর্তৃপক্ষ বলার পর আরও একটা লটের গাছ আমরা মার্কার করেছি এবং সেগুলো টেন্ডারে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে একটি টেন্ডার হয়ে গেছে আরেকটা টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
জমি অধিগ্রহণ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ইফতেখার উদ্দিন শামীম বাংলানিউজকে বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় কোনো জটিলতা নেই। এটা স্বাভাবিক গতিতে চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৯
এনটি