জানা যায়, একই অর্থবছরে মেরামত করা চাঁদপুর-ভাতহাড়িয়া হাট সড়কটি। বছর যেতে না যেতেই সড়কটির বিভিন্নস্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।
অপরদিকে, ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নির্মাণ করা একই উপজেলার শিমলা আরএইচডি-রানীরহাট সড়ক, ধানগড়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়-ঘুরকা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সড়ক, ভুইয়াগাঁতী-ধুবিল সড়ক, ধুবিল-আমসড়া সড়ক ও ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নিমগাছী-সলঙ্গা সড়কসহ অর্ধশতাধিক পাকা সড়কের বেহাল অবস্থায়। শুধু রায়গঞ্জ উপজেলাই নয়, সিরাজগঞ্জ সদর, তাড়াশ, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলার আঞ্চলিক সড়কগুলোরও একই অবস্থা। পাকা সড়কগুলোর পাশাপাশি মাটির রাস্তাগুলোর অবস্থা আরও নাজুক। শুষ্ক মৌসুমে ধুলোয় মাখামাখি আর বৃষ্টি হলেই কাদায় পরিপূর্ণ এ সড়কগুলোতে হেঁটে চলাই দুষ্কর হয়ে পড়ে।
সম্প্রতি সরেজমিনে রায়গঞ্জের পাঙ্গাসী, ধুবিল, ধামাইনগর, সোনাখড়া, উল্লাপাড়ার সলঙ্গা, রামকৃষ্ণপুর ও হাটিকুমরুল এবং তাড়াশের মাধাইনগর, নওগাঁ, দেশীগ্রাম ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের সড়কের নানা অব্যবস্থাপনার চিত্র ফুটে ওঠে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নদী-জলাশয়ের উত্তোলিত বালু, পুকুর খনন ও জমির টপসয়েল কাটার মাটি এবং ভাটার ইট পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত ভারী ভারী ট্রাক চলাচলের কারণেই ধ্বংস হচ্ছে গ্রামীণ সড়কগুলো। এসব বালু, মাটি ও ইট পরিবহন কাজে ১৫ থেকে ২০ টন ওজনের ড্রাম ট্রাক ব্যবহার করা হচ্ছে।
রায়গঞ্জের এরান্দহ গ্রামের কৃষক সোহরাব আলী, ভ্যান চালক ছাইদুল, তাড়াশ উপজেলার বাসুদেবকোল গ্রামের সেলিম শেখসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যমুনা, করতোয়া, ফুলজোড়, ইছামতিসহ বিভিন্ন নদী ও জলাশয় থেকে বৈধ-অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, শস্য ভান্ডার খ্যাত এলাকাগুলোতে শত শত পুকুর খনন ও কৃষি জমির টপসয়েল বিক্রি চলছে অবাধে। এভাবে এ অঞ্চলে বালু ও মাটি বিক্রির ধুম পড়েছে। গ্রামের প্রভাবশালীদের কাছে মাটি বিক্রিই অন্যতম ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উত্তোলিত এই মাটি স্থানান্তরের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ১০ থেকে ২০ টন ওজনের ড্রাম ট্রাক। আর মাটি খননে ব্যবহার করা হচ্ছে ভারী ভারী বেকো। অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভারী ওজনের এসব যানবাহন চলাচলের কারণে ধ্বংস হচ্ছে গ্রামীণ পাকা, অর্ধপাকা ও কাঁচা সড়ক।
অপরদিকে, জেলায় দেড় শতাধিক বৈধ ও অবৈধ ভাটার মাটি এবং ইট সরবরাহ করা হচ্ছে এসব পথ দিয়েই। এতে চাপ পড়ছে গ্রামীণ সড়কগুলোর ওপর। এ কারণে ধ্বংস হচ্ছে গ্রামীণ পরিবেশ ও বাড়ছে জনদুর্ভোগ। এ বিষয়ে ব্রহ্মগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম ছরওয়ার লিটন, ঘুড়কা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান সরকার ও ধুবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান ইমাম তালুকদারসহ বাংলানিউজকে বলেন, ইউনিয়নের বেশিরভাগ সড়কই কাঁচা। টিআর ও কাবিখা এবং কর্মসৃজন প্রকল্পের বরাদ্দ দিয়ে এসব রাস্তা মেরামত করা হয়। কিন্তু মাটিবাহী বড় বড় ট্রাক এবং ইটভাটার ট্রাক চলাচল করে রাস্তাগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে। এ বিষয়ে দফায় দফায় উপজেলা প্রশাসনের মাসিক মিটিংয়ে অবগত করা হলেও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
নলকা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা-হাটিকুমরুল মহাসড়কের ফুলজোড় নদীর পাশের রাস্তাটি একেবারেই ভয়াবহ অবস্থা। বছরখানেক আগে রাস্তাটি সংস্কার করে এলজিইডি। কিন্তু রাস্তার পাশে নদী থেকে উত্তোলিত বালু স্তুপ করে রাখা এবং ওই বালু পরিবহনের জন্য ভারী ট্রাক ব্যবহার করায় রাস্তাটি একেবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের রাস্তা দিয়ে যানবাহন ও মালামালসহ সর্বোচ্চ ৯.৭ টন ওজনের যানবাহন চলাচল করার নিয়ম। এরবেশি ওজনের যান চলাচলের বিধান নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বিধি-বিধান না মেনেই ভারী যানবাহন চলাচল করে রাস্তাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
তিনি আরও বলেন, রাস্তাগুলোর মেয়াদ থাকে চার বছর। কিন্তু অতিরিক্ত ভারী যানবাহন চলার কারণে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে গেলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৯
এনটি