রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নাশকতা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলার ছক কষেছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি। আর সেই লক্ষ্যে ওই আস্তানায় সশস্ত্র অবস্থানের পাশাপাশি বিস্ফোরকও মজুদ করেছিল জেএমবির সদস্যরা।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর বসিলা এলাকার ওই আস্তানায় অভিযান চালায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। আর এ অভিযানের মাধ্যমে জেএমবির নৃশংস পরিকল্পনা নস্যাৎ করতে সক্ষম হয় বাহিনীটি।
অভিযানের ঘটনায় ৫-৬ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেছে র্যাব। মামলার নথিতে এসব তথ্য উল্লেখ করেন বাদী র্যাব-২ এর ওয়ারেন্ট অফিসার আব্দুল্লাহ।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) মামলার এজাহার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে উপস্থাপন করে র্যাব। মহানগর হাকিম মইনুল ইসলাম মামলার এজাহার গ্রহণ করে তদন্ত করে আগামী ৩০ মে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, অভিযানের শুরুতে জঙ্গিরা গুলি ছুড়লে র্যাব সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছুড়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে আসে। গোলাগুলির সময় ওই বাড়ির পেছনের দিকের খাল পার হয়ে ৫-৬ জন সশস্ত্র জঙ্গি পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে র্যাবের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টের পেলে নিরাপদে দ্রুত পালানোর জন্য কম বসতির ও খাল পাড়ের ওই টিনশেড বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিল জঙ্গিরা।
র্যাব জানায়, গোয়েন্দা তথ্য ছিল বসিলার মেট্রো হাউজিংয়ের ওহাবের বাড়িতে আস্তানা গড়ে তুলে নাশকতার পরিকল্পনা করছিল জেএমবি সদস্যরা। তাদের পরিকল্পনা ছিল রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা ও জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) দিনগত রাত পৌনে ১টার দিকে গোয়েন্দা তথ্য আসে ওই বাড়িটিতে অবস্থান নিয়ে জেএমবি সদস্যরা নাশকতার পরিকল্পনা করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব সদস্যরা সাড়ে ৩টার দিকে ওই টিনশেড বাড়ির আস্তানায় যায়। সেখানে কেউ আছে কি-না জানতে দরজায় নক করা হয়। কিন্তু সাড়া না দিয়ে কিছুক্ষণ পর র্যাবকে লক্ষ্য করে বিস্ফোরক নিক্ষেপ এবং গুলি ছুড়ে জঙ্গিরা।
এরপর ওই আস্তানার ভেতরে অবস্থান করা জঙ্গিরা দুই দফা ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটায়। আত্মঘাতি বিস্ফোরণে দুই জঙ্গির দেহ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এ ঘটনায় আটক বাড়ির মালিক ওহাব, কেয়ারটেকার সোহাগ ও তার স্ত্রী মৌসুমী এবং মসজিদের ইমাম ইউসুফকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাবের কর্মকর্তারা জানান, একজন ভ্যানচালক ও আরেকজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীর পরিচয়ে সুজন ও সুমন নামে মাস দেড়েক আগে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল। সেখানে সন্দেহভাজন বিভিন্ন ব্যক্তির আসা-যাওয়া ছিল।
তবে মে মাসেই আবার তারা বাসাটি ছেড়ে দেওয়ার কথাও জানিয়ে দেয় সম্প্রতি। এর ফলে র্যাব কর্মকর্তাদের ধারণা, সম্প্রতি হয়তো তাদের বড় কোনো নাশকতার পরিকল্পনা ছিল।
অভিযান শেষে র্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ওই জঙ্গি আস্তানা থেকে দু’টি বিদেশি পিস্তল ও চারটি অবিস্ফোরিত ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) উদ্ধার করা হয়।
নিহতদের পরিচয়ের বিষয়ে তিনি জানান, বিস্ফোরণে মরদেহগুলো ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সিআইডির ফরেনসিক টিম মরদেহের ভিসেরা ও নমুনা সংগ্রহ করেছে। পরীক্ষার পর তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, নিহত দু’জন জেএমবির সক্রিয় সদস্য বলে জানা গেছে। তারা সুজন ও সুমন নামে বাড়ি ভাড়া নিলেও তাদের সঠিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অভিযানের সময় কয়েকজন জঙ্গি পালিয়ে গেছেন, তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান ও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪১৫ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৯
পিএম/আরবি/