১০ এপ্রিল আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের এক মাস পূর্ণ হলো। এই এক মাসে মামলার আসামিরা ধরা পড়েছেন (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) পিবিআইয়ের জালে।
পিবিআই বলছে মামলার অগ্রগতি সন্তোষজনক। নুসরাতের পরিবার বলছে দ্রুত সময়ে চার্জশিট দিতে গিয়ে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীদের কেউ যেন বাদ পড়ে না যায় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। অপরদিকে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদরত নুসরাতের স্বজন ও সুহৃদদের মধ্যে সুবিচার পাওয়া নিয়ে এরইমধ্যে তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো. শাহ আলম বাংলানিউজকে জানান, ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩এর ৪(১)/৩০ এর আলোকে মামলা দায়ের করা করা হয়। পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশক্রমে পিবিআই মামলার তদন্ত গ্রহণ করে ১০ এপ্রিল।
মামলার তদন্ত গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমারের নির্দেশে ফেনী ইউনিটসহ পিবিআই হেড কোয়ার্টার্স, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম মেট্রো ও পিবিআই নোয়াখালী ইউনিট দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে দ্রুত সময়ে ঘটনার নির্দেশদাতা, পরিকল্পনাকারী, অর্থদাতা, মদদদাতাসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিদের গ্রেফতার করে।
তিনি বলেন, মামলায় এজহারনামীয় আটজনসহ মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন ১২ জন। মামলার আলামত হিসেবে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারী শাহাদাত হোসেন শামীম, জোবায়ের হোসেন ও উম্মে সুলতানা পপির পরিহিত তিনটি বোরকা, ঘটনায় কেরোসিন ঢালার কাজে ব্যবহৃত একটি গ্লাস সংশ্লিষ্ট আলামত হিসেবে সংগ্রহ করা হয়েছে। মামলার সুরতহাল প্রতিবেদন, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট, নুসরাতের মৃত্যুকালীন জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও কিছু আলামত বিশেষজ্ঞের মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। মামলার ডকেটিংসহ আনুষঙ্গিক কিছু কাজ শেষে শিগগিরই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।
মামলার এ তদন্ত কর্মকর্তা আরো বলেন, আলোচিত এ মামলায় এখন পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদদৌলা, কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, নুসরাতের সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্যাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষের ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহমেদ, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, মো. শামীম, কামরুন নাহার মনি, আবদুর রহিম ওরফে শরিফ, ইফতেখার হোসেন রানা, এমরান হোসেন মামুন, মহিউদ্দিন শাকিল, হাফেজ আবদুল কাদের ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ওই মাদরাসার সহ-সভাপতি রুহুল আমিন।
এ মামলায় ১২ জন আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। এরা হলো সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা, নুসরাতের সহপাঠী অধ্যক্ষের ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহমেদ, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, কামরুন নাহার মনি, আবদুর রহিম ওরফে শরিফ, ইফতেখার হোসেন রানা, এমরান হোসেন মামুন, মহিউদ্দিন শাকিল, ও হাফেজ আবদুল কাদের।
এদিকে এ হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে আরো কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এর মধ্যে রয়েছেন সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ইতোমধ্যে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে থানা থেকে। সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছে। নুসরাতের ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার দায়ে তার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে হয়েছে মামলা। ওসিকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন মহল।
এদিকে নুসরাতের পরিবারের বিপক্ষে ও ওসি মোয়াজ্জেমের পক্ষে পুলিশ সদর দপ্তরে চিঠি দেওয়ায় আলোচনায় উঠে আসছে ফেনীর পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকারের নাম। ঘটনায় অবহেলা করার দায়ে নুসরাতের পরিবারের অভিযোগের তীর ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পিকেএম এনামুল করিমের দিকে। এসব অভিযুক্তর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের দাবি করে আসছে বিভিন্ন প্রতিবাদী মহল।
যৌন নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থী জোটের আহ্বায়ক শিবলী হাসান বলেন, শ্লীলতাহানির মামলা করার পর পাশে না দাঁড়িয়ে স্থানীয় প্রশাসন উল্টো নুসরাত জাহান ও তার পরিবারকে ভয় দেখিয়েছিলো। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ, দায়ী সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
মামলার বাদী নুসরাত জাহান রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, আমরা এ পর্যন্ত মামলার অগ্রগতি নিয়ে আশাবাদী। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে চার্জশিট দিতে গিয়ে যাতে কোনো আসামির নাম বাদ পড়ে না যায় সে জন্য পিবিআইকে সচেতন থাকার অনুরোধ করছি।
নোমান আরো বলেন, চার্জশিট থেকে যদি কোন আসামি কিংবা পরিকল্পনাকারীর নাম বাদ পড়ে যায় তাহলে আদালতে চার্জশিটের বিরুদ্ধে না রাজি দেবো।
গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌননিপীড়ের দায়ে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।
বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৯
এসএইচডি/এএ