জবানবন্দিতে বাসচালক নূরুজ্জামান নূরু (৩৯), হেলপার লালন মিয়া (৩২) ও নূরুজ্জামানের খালাতো ভাই বোরহান মিলে যাত্রী তানিয়াকে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যা করেন বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেলে অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল-মামুনের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন লালন মিয়া।
মঙ্গলবার বিকেলে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে লালন মিয়াকে কিশোরগঞ্জ আদালতে নিয়ে আসে পুলিশ।
এর আগে, গত শনিবার (১১ মে) কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল মামুনের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন বাসচালক নূরুজ্জামান নূরু।
পুলিশ সুপার (এসপি) মো মাশরুকুর রহমান খালেদ বাংলানিউজকে বলেন, গত শনিবার একই আদালতে বাসচালক নূরুর দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সঙ্গে লালন মিয়ার জবানবন্দির মিল রয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মো. সারোয়ার জাহান জানান, তিনজন মিলেই ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে বলে লালন মিয়া আদালতে স্বীকার করেছে। তবে জবানবন্দির কপি এখনও হাতে আসেনি। তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান যাচ্ছে না।
গত বুধবার (৮ মে) কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল মামুন পাঁচ আসামির প্রত্যেকের আটদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আসামিরা হলেন- গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সালুয়াটেকি গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে বাসচালক নূরুজ্জামান নূরু (৩৯), একই উপজেলার বীরউজলী গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে বাসের হেলপার লালন মিয়া (৩২), একই উপজেলার লোহাদী গ্রামের নজর আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম রফিক (৩০), কটিয়াদী উপজেলার ভোগপাড়া এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে খোকন মিয়া (৩৮) ও বাজিতপুর উপজেলার নীলক্ষি গ্রামের মৃত আব্দুস শহীদ ভূঁইয়ার ছেলে বকুল মিয়া ওরফে ল্যাংড়া বকুল (৫০)।
এর আগে, মঙ্গলবার (৭ মে) দিনগত রাতে নিহত তানিয়ার বাবা গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত বেশ কয়েকজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন বাজিতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
মঙ্গলবার বিকেলে ওই তরুণীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. রমজান মাহমুদ বাংলানিউজকে জানান, ময়নাতদন্তে ধর্ষণ ও আঘাতজনিত কারণে ওই তরুণীর মৃত্যুর আলামত মিলেছে। এছাড়া ডিএনএ ও প্যাথলজিক্যাল টেস্টের জন্য আলামত সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে।
তিনি জানান, ওইদিন তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি মেডিকেল বোর্ড তরুণীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। পরে রাতেই তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে তানিয়ার বড় ভাই মরদেহ বুঝে নেন।
গত সোমবার (৬ মে) রাতে শাহিনুর আক্তার ওরফে তানিয়া ঢাকা থেকে বাসে করে বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর যাচ্ছিলেন। পথে উপজেলার গজারিয়া-জামতলী এলাকায় তিনি গণধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
এ ঘটনায় বাসের চালক নূরুজ্জামান ও হেলপার লালন মিয়াসহ পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ।
নিহত তানিয়া উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এদিকে, গত রোববার (১২ মে) বিকেলে কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ময়নাতদন্তে ধর্ষণ ও মাথার পেছনে আঘাতজনিত কারণে ওই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
তানিয়া ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড বিষয় নিয়ে গত রোববার (১২ মে) বিকেলে জেলা পুলিশের সম্মেলন কক্ষে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন প্রেস ব্রিফিং করেন।
ওই সময় তিনি বলেন, বাসের চালক নূরুজ্জামান নূরুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বক্তব্য যাচাই-বাছাই হচ্ছে।
এছাড়া, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত স্বর্ণলতা পরিবহনের বাসটি (ঢাকা মেট্রো ব-১৫-৪২৭৪) জব্দসহ বিভিন্ন আলামত ও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
তানিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান ডিআইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৯
একে