পাহাড়ে মাটির উর্বরতার কারণে বিদেশি ফলের চাষও দিনে দিনে বাড়ছে। ফলে কমবে আমদানি নির্ভরতা।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া, প্রকৃতি ও পরিবেশ ফলজ বাগান সৃজনের জন্য যথেষ্ট উপযোগী হওয়ায় এখানকার উদ্যোক্তারা ঝুঁকছেন ফল চাষে। এসব ফলজ বাগান সৃজনের ফলে উদ্যোক্তরা যেমন লাভবান হচ্ছেন পাশাপাশি এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ফলে এ অঞ্চলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে।
খাগড়াছড়ি সদরের জংলী টিলা এলাকার ফলজ বাগানী সুভাশীষ চাকমা বলেন, ফলজ বাগান গড়ে ওঠার কারণে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমার বাগানে প্রতিদিন আটজন শ্রমিক কাজ করছেন। এতে আমি যেমন লাভবান হচ্ছি, তেমনি এলাকার বেকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
একই এলাকার ফলজ বাগানী অনিমেষ চাকমা রিংকু ও দিবাকর চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, যেহেতু খাগড়াছড়িতে কোনো শিল্প-কারখানা নেই। কর্মসংস্থানেরও তেমন ব্যবস্থা নেই। সেখানে ফলজ বাগান গড়ে ওঠার কারণে নিজেরা নিজেদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। এতে করে এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে মৌসুমী ফল একইসঙ্গে বাজারে আসায় বিপণনে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এতে করে ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত হয় কৃষক। এ অঞ্চলে ফলজ বাগান প্রসারিত করতে ফল সংরক্ষণের জন্য একটি হিমাগার স্থাপনের উপর গুরুত্বরোপ করেছেন উদ্যোক্তারা।
ভাইবোনছড়া এলাকার ফলজ বাগান উদ্যোক্তা সুজন চাকমা বলেন, খাগড়াছড়িতে দিনে দিনে ফলজ বাগান বাড়লেও ফল সংরক্ষণের জন্য এখানে কোনো হিমাগার নেই। এতে ফল বাজারজাত করতে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তাই সরকারকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। পাশাপাশি বাগান সৃজনে সহায়তার জন্য কৃষিবিভাগকে আরও এগিয়ে আসতে হবে।
খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. সফর উদ্দিন বলেন, খাগড়াছড়িতে মিশ্র এবং একক এই দুই ধরনের ফলের বাগান রয়েছে। চলতি অর্থবছরে খাগড়াছড়িতে ৬২টি মিশ্র ফল বাগান সৃজন করা হয়েছে। এ অঞ্চলে ফলের বাগান সম্প্রসারণের জন্য সরকার সচেষ্ট এবং সেই অনুযায়ী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ কাজ করছে।
খাগড়াছড়ি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুন্সী আব্দুর রাশিদ আহমদ বলেন, গত ১০ থেকে ১৫ বছরে মিশ্র ফলের বাগান পাহাড়ের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন এনেছে। এমন সফলতায় ক্রমেই মিশ্র ফলের বাগান চাষ বাড়ছে জানিয়ে ভবিষ্যতে ফলের বাগান পাহাড়ের অর্থনীতিতে আরও জড়ালো ভূমিকা রাখবে বলে যোগ করেন তিনি।
দ্রুত খাগড়াছড়ির অনাবাদি পাহাড়গুলোতে আরও ব্যাপকভাবে বিভিন্ন ধরনের ফলজ বাগান সৃজন করে এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করবে সরকার এমনটাই প্রত্যাশা এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৮ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৯
এডি/এএটি