ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পাহাড়ি ফুটবলকন্যা মনিকার বিশ্বজোড়া খ্যাতি!

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৩ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৯
পাহাড়ি ফুটবলকন্যা মনিকার বিশ্বজোড়া খ্যাতি! মনিকা চাকমা

খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ির দুর্গম এলাকা বলা হয় লক্ষ্মীছড়ি উপজেলাকে। সব দিক থেকে পিছিয়ে থাকা উপজেলাটি কি-না এখন দেশে পরিচিত নাম। কারণ জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় মনিকা চাকমার বাড়ি এখানে। মনিকার ফুটবল কৃতিত্বে স্থানীয়দেরও গর্বের শেষ নেই। গর্ব হবেই না বা কেনো। নিজ জেলার সন্তানের নান্দনিক খেলায় যে মাতোয়ারা ফুটবল বিশ্ব।

সর্বশেষ বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ নারী আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে চোখ ধাঁধানো গোল করে ফুটবল বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে মনিকা। যে গোলের স্বীকৃতি দেয় ফিফা।

ফিফার ফ্যানস ফেভারিটের সৌজন্যে বিশ্বের কোটি ভক্ত উপভোগ করেছে মনিকা চাকমার সেই গোল। যে গোলটিকে ফিফা দিয়েছে ম্যাজিকেল গোলের তকমাও।

তবে তার খেলার এই দীর্ঘ পথ মোটেও সহজ ছিল না। কৃষক বিন্দু কুমার চাকমা ও রবি মালা চাকমার পাঁচ মেয়ের মধ্যে মনিকা সবার ছোট। বাবার চাওয়া ছিল শেষের সন্তানটি ছেলে হবে। কিন্তু মেয়ে হওয়ায় তাকে দত্তক দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু মায়ের কারণে তা আর হয়নি। ছোটবেলা থেকে ফুটবলের প্রতি ছিল মনিকার দুর্বলতা। কিন্তু বাবা তা পছন্দ করতেন না। বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ফুটবলে মেতে থাকতো মনিকা। খেলায় সঙ্গী ছিলেন বড় বোন অনিকা চাকমা। যদিও একটা পর্যায়ে অসুস্থতার কারণে অনিকা আর খেলা চালিয়ে যেতে পারেননি।

বাংলানিউজকে অনিকা চাকমা বলেন, শুরুর দিকে বাবা আমাদের খেলাধুলা পছন্দ করেনি। আমাদের খেলা দেখে এক স্যার একটা ফুটবল কিনে দিয়েছিলেন। বাবা যখন জুমে যেতো, তখন ঘরের সামনের মাঠে মনিকাসহ খেলতাম। একটা পর্যায়ে মনিকা আর আমি রাঙামাটি চলে যাই। সেখানে থাকা অবস্থায় আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমার আর খেলা হয়ে উঠেনি।

লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের পথ শেষ হলে তারপর হাঁটা শুরু। ১৫ মিনিট হাঁটা শেষ হলে পৌঁছে যাবেন মনিকার বাড়িতে। আর বৃষ্টি হলে কাদা পানির রাস্তার কারণে যাওয়া-আসা দুটোই বন্ধ।

২০১১ সালে লক্ষ্মীছড়ির মরাচেঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হয়ে প্রথম বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলে মনিকা। ২০১২ সালে চট্টগ্রামে বিভাগীয় পর্যায়ে খেলতে গেলে রাঙামাটি মগাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিরসেন চাকমার নজড়ে আসে সে। পরিবারকে বুঝিয়ে বিরসেন মনিকাকে নিয়ে যান রাঙামাটি। সেখানে মগাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় সে। ২০১৩ সালে স্কুলটির হয়ে বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলে জাতীয় পর্যায়ে রানার্সআপ হয় তারা। তারপর ধাপে ধাপে রাঙামাটি ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠ শেষে সে এখন ঘাগড়া কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
বাবা বিন্দু কুমার চাকমা ও মা রবি মালা চাকমার সঙ্গে মনিকামনিকার বাবা বিন্দু কুমার চাকমা ও মা রবি মালা চাকমা অনেকটা একই সুরে জানালেন মনিকার কারণে তাদের পরিচিতির কথা। তারা বলেন, আগে আমাদের খুব বেশি মানুষ চিনতো না। এখন বাজারে বা অন্য কোথাও গেলে সবাই বলে, মনিকার বাবা যাচ্ছে, মনিকার মা যাচ্ছে। আপনারা মনিকার জন্য প্রার্থনা করবেন, সে যেনো দেশের নাম উজ্জ্বল করতে পারে।

লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ ইকবাল বাংলানিউজকে বলেন, পিছিয়ে পড়া লক্ষ্মীছড়ির কোনো গর্ব থাকলে, সে হচ্ছে মনিকা চাকমা। তার সাফল্যে আমরা উপজেলাবাসী গর্বিত। যেকোনো প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসন মনিকার পাশে থাকবে বলেও জানান তিনি।

যাকে নিয়ে এতো আলোচনা, এতো জয়জয়কার, সেই মনিকা চাকমা মানুষের প্রশংসায় গা ভাসাচ্ছে না। এই পাহাড় কন্যা জানালেন দলের হয়ে ভালো খেলাটা খেলে যেতে চান।

সে বলে, আমি আমার দেশের নাম উজ্জ্বল করতে চাই। ফুটবল খেলার জন্য আমাদের দেশকে সবাই যেনো চিনে। মেসি, নেইমারের মতো যেনো আমাদের পরিচয় হয়।

দেশের নারী ফুটবলের সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে এবং সরকারের সুনজর থাকলে হয়তো মনিকার চাওয়া পূর্ণ হবে। এছাড়া নিজের মেধা দিয়ে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মনিকা আলাদা অবস্থান তৈরি করবে বলে প্রত্যাশা স্থানীয়দের। সেখানে যেনো পাশে থাকে জেলার অপর দুই নারী খেলোয়াড় আনাই-আনুচিংও!

বাংলাদেশ সময়: ০২৩০ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৯
এডি/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।