গরমের দুঃসহ উত্তাপে অবশ্য সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। পেটের টানে রাগী রোদ্দুর মাথায় নিয়েই ছুটতে হচ্ছে তাদের।
নিম্নবিত্তরা ডাব বা ঠাণ্ডা পানীয়র হিসাব মেলাতে না পারলেও তাদের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে সড়কের পাশের আখের শরবত। বিক্রি বেড়েছে নগরীর ফাস্টফুডের দোকানগুলোতেও। সেখানে কোমলপানীয়, জুস ও আইসক্রিম রয়েছে চাহিদার শীর্ষে।
ষড়ঋতুর দেশে আষাঢ় ও শ্রাবণ এ দু’মাস বর্ষাকাল। সেই হিসেবে আষাঢ়ের ১৬ তম দিন চলছে। সোমবার (০১ জুলাই) রাতেও বৃষ্টির দেখা মিললেও সকাল গড়াতেই তাপ কমেনি ন্যুনতমও। প্রচণ্ড তাপদাহে শিশু থেকে শুরু করে বয়স্করাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আবার এমন গরমে ওষ্ঠাগত নগর জীবনে অশান্তির মাত্রা যোগ করেছে তীব্র যানজট।
জানা যায়, গত দুই সপ্তাহ ধরে দিনের বেলায় নগরীতে ঘর থেকে বের হলেই যেন আগুনের ছেঁকা লাগার মতো অবস্থা। জরুরি প্রয়োজনে দুপুরে ঘর থেকে যারা বের হচ্ছেন, তারা দরদর করে ঘেমে রীতিমতো হাঁপিয়ে বাড়ি ফিরছেন। তপ্ত আগুনের হল্কায় মাথার তালু গরম হয়ে যাচ্ছে রিকশা চালকদের।
নগরীর এক মোড় থেকে অন্য মোড়ে যেতেই আগুনের হল্কায় ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন তারা। এতে করে তাদের স্বাভাবিক কাজকর্মও চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তারা বাড়তি ভাড়া হাঁকাচ্ছেন। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষজন ভাড়ার ফাঁকে সময় পেলেই গাছের ছায়ায় জিরিয়ে নিচ্ছেন। আবার কেউ রিকশায় বসেই ঘুমোচ্ছেন।
নগরীর নতুন বাজার এলাকার একটি চা স্টলে বসে কথা হলো রিকশা চালক আব্দুস সালামের (৪০) সঙ্গে। জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলা থেকে নিত্যদিন নগরীতে রিকশা চালিয়ে উপার্জন করেন তিনি। তার সঙ্গে এ স্টলে বসেই বিশ্রাম নিচ্ছিলেন আরো ক’জন রিকশা চালক।
খটমটে রোদে ত্রাহি অবস্থার কথা জানিয়ে বাংলানিউজকে আব্দুস সালাম নামে এক চালক জানান, সকাল থেকেই সূর্যের দাপটে দু’চারটি ভাড়া টানতেই শরীর ক্লান্ত হয়ে গেছে। দুপুরের কাঠফাটা রোদে তো নিজেকে টেকানোরই সাধ্য নেই।
‘একদিন কোনোমতে দিনমান রিকশা চালালে পরের দিন আর রিকশা নিয়ে বের হওয়ার মতো শরীরের অবস্থা থাকে না। ফলে একদিনের আয়ের টাকায় দু’দিনের খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়। এমন কঠিন অবস্থার মধ্যেও পেটের তাগিদেই রিকশা নিয়ে ছুটতে হয়। ’
রোজই তাপমাত্রার পারদ এমন চড়ার কারণে বিকেলের দিকেই নগরীর ব্রহ্মপুত্র নদ ছোঁয়া জয়নুল উদ্যান, বিপিন পার্ক ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বোটানিক্যাল গার্ডেনে নগরীর মানুষজন নির্মল বাতাসের আশায় জড়ো হচ্ছেন। তাদেরই একজন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সারোয়ার আলম (৩৫)।
নিজের শিশু সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে সোমবার (০১ জুলাই) নগরীর জয়নুল উদ্যানে এসেছেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, গরমের তীব্রতায় ছোট-বড় সবারই তো হাঁসফাঁস অবস্থা। আবার এমনিতেই শিশুদের গরম একটু বেশি। এ গরমে একটু শীতল পরিবেশের জন্য ছেলেকে নিয়ে এখানে এসেছি।
শহরের দুর্বিষহ এ জীবনে আরও আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। অনেক এলাকায় রাত ১০টার পর থেকেই বিদ্যুৎ হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। তখন নাগরিক বাসিন্দারা বাড়ির ছাদে বা বাসার সামনে পায়চারি করে সময় কাটান।
নগরীর নাটকগোর্লেন এলাকার বাসিন্দা রাসেল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, গোটা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে এ এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মাত্রা বাড়ছে। রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে ঘরের ভেতরও সেদ্ধ অবস্থা থেকে বাঁচতে হাতপাখাই একমাত্র সঙ্গী।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০১৯
এমএএএম/এসএ/