ঢাকা, সোমবার, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘সরল বিশ্বাস’ নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না: দুদক চেয়ারম্যান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৫ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৯
‘সরল বিশ্বাস’ নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না: দুদক চেয়ারম্যান প্রেসক্লাবে ‘দুর্নীতি দমন আইন ও বিচার বিভাগের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ/ ছবি- জি এম মুজিবুর

ঢাকা: ‘সরল বিশ্বাস’ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না জানিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, ডিসি সম্মেলন শেষে আমি যে কথা বলেছি, আপনাদের কাছে তার ভিডিও ক্লিপ রয়েছে। আপনারা দেখবেন, আমি কোথাও দুর্নীতির শব্দ উচ্চারণ করিনি। তাই এ বিষয় নিয়ে আমি ব্যাখ্যা দিতেও প্রস্তুত নই।

শনিবার (২০ জুলাই) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘দুর্নীতি দমন আইন ও বিচার বিভাগের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।  

হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশের সভাপতি মনজিল মোরসেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, বিচাপতি মো. নিজামুল হক ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু।

 

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সরল বিশ্বাসে দুর্নীতির বিষয়ে যারা লিখেছেন এ দায় তাদের, আমার নয়। আমার সৎ সাহস আছে, ভুল করলে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারবো।  

তিনি বলেন, আমরা চাই, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশিত হোক। সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ প্রতিষ্ঠানটি কোনো ব্যক্তির নয়, রাষ্ট্রের।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। স্বীকার করতে কোনো দ্বিধা নেই, আমাদের সক্ষমতার অভাব আছে।  

তিনি বলেন, দুদকে স্থানীয়ভাবে তদন্ত কর্মকর্তা ৩০০ এর বেশি নয়। এরমধ্যে একজন উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) যদি সচিবের তদন্ত করে তাহলে কীভাবে হয়?

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এমন কোনো নথি নেই, যেখানে ফ্রড বা জালিয়াত পাওয়া যায় না।  

দুদক কর্মকর্তাদের বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ আমাদের টাইমলাইন মানতে রাজি না। এখন যদি আমি অ্যাকশন নেই, তাহলে ৪৭৪ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে হয়। এজন্য আমি বিধি সংশোধন করে ১৫ দিনের জায়গায় ৪৫ দিন করেছি। এমনকি ৩০ দিনের জায়গায় ১৮০ দিন করেছি। তারপরও তদন্ত শেষ হয় না। নানা ধরনের অজুহাত, আপত্তি দেখানো হয়। এটা পাওয়া যায়নি, ওটা পাওয়া যাচ্ছে না, নানা ধরনের সমস্যা।  

ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমাদের আস্থার সংকট রয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। একদিনে আস্থা ফিরে আসবে ন। আমরা কাজ করে যাচ্ছি, আমাদের কাজ করে এগিয়ে যেতে হবে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য।

তিনি বলেন, দুদক আকাশ থেকে উড়ে আসেনি। এখানে যারা কাজ করেন, তারা বিদেশ থেকে আসেনি। এদেশের মানুষ তারা। আর আমরা এ সমাজেরই অংশ। সমাজের অন্যান্য জায়গায় যা হয়, এখানেও তা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অস্বীকার করবো না, আমরা যাদের ধরি তাদের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই চুনোপুঁটি।

এর কারণ উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দেশের ৮০ ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে। গ্রামের সাধারণ মানুষগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কার কাছে? আমি নাম নাই বা বললাম। ওইসব অফিস-আদালতেই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এজন্যই চুনোপুঁটির সংখ্যা বেশি।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, ছোট গাছ যেভাবে সহজে উপড়ে ফেলা যায়, বড় গাছ সেভাবে উপড়ে ফেলা যায় না। তাই বলে যে, আমরা বড় গাছ ধরছি না, তা কিন্তু নয়। চুনোপুঁটিদের ব্যাপারে বক্তব্য হচ্ছে। আমরা ছোট মাছের পাশাপাশি বড় মাছও ধরছি।

বর্তমানে সরকারি দলের প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন এমপি-মন্ত্রী আমাদের অনুসন্ধানে রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে এক দলের ১৫ জন, আরেক দলের ১২ জন রয়েছেন। উভয় দলের ব্যবসায়ীদের ২৫ জন এবং ঊর্ধ্বতন আমলাদের মধ্যে সচিব থেকে শুরু করে যুগ্ম সচিব পর্যন্ত মোট ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা অনুসন্ধান চালাচ্ছি। তবে ধীরে ধীরে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এমন কিছু করতে চাই না, যেখানে হাত দিলে হাত ফিরে আসবে। পুড়ে যেন না যায়।

মানিলন্ডারিং প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এখন পর্যন্ত ২০০ মানিলন্ডারিং মামলার মধ্যে ২২টি নিষ্পত্তি হয়েছে। এসব মামলার শতভাগ সাজা হয়েছে। তারপরও সমাজে একটা বার্তা দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি বিষয়টি কঠিন। নিজের মধ্যে মূল্যবোধ সৃষ্টি ও মাইন্ড সেট করতে না পারলে, দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব নয়। এজন্য ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পড়ুয়াদের নিয়েই আমরা কাজ করছি।  

সমন্বিত প্রয়াস ছাড়া দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব না। আমাদের মূল্যবোধ সম্পন্ন বাচ্চাদের দিয়ে তৈরি করতে হবে তাহলেই দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।  

মনজিল মোরসেদ বলেন, দুদক সম্পর্কে জনগণের মধ্যে ধারণা আছে, সংস্থাটি বিরোধীদের দুর্নীতি খুঁজে বেড়ায়। সরকারের কোনো লোককে নোটিশ দেওয়ার পরও ছয় মাসেও সে নোটিশের জবাব দেয় না। তাই এ বিষয়গুলো দুদককে ক্লিয়ার করতে হবে। তবে নতুন কমিশন গঠনের পর পরিবর্তন এসেছে। তারা চুনোপুঁটি ধরছে। কিন্তু শুধু চুনোপুঁটি ধরলেই হবে না, বড়দেরও ধরতে হবে।

তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংক নিয়ে কিছুই করতে পারছে না দুদক। তারেক জিয়ার অর্থ ফেরত এনেছে। কিন্তু আরো অনেকেই টাকা পাচার করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আইন সবার জন্য সমান। কিন্তু তা হচ্ছে না।

সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু বলেন, দুর্নীতিবাজদের সাজা নিশ্চিত করতে হবে। দুদককে ঢেলে সাজাতে হবে। বিচার বিভাগের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।  

তিনি বলেন, আইন পরিবর্তন করে বিদেশে যারা বাড়ি-গাড়ি করেছেন, তাদের ধরে এনে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম বলেন, দেশে সামাজিক মূল্যবোধ নেই, ধর্ষণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এটি অশনি সংকেত। দুদককে বলেছি, দুর্নীতি বন্ধে স্কুল থেকে শুরু করতে হবে, পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হব। সমাজে নৈতিকতা ফেরাতে হবে, না হলে আইন করে লাভ নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৯, আপডেট: ১৮২৩ ঘণ্টা
এসএমএকে/আরবি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।