ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বগুড়ায় টুং টাং শব্দে মুখরিত কামারপাড়া

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৯
বগুড়ায় টুং টাং শব্দে মুখরিত কামারপাড়া বগুড়ায় কামারপাড়া কাজে ব্যস্ত দুই কামার। ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কামারশিল্প প্রায় বিলুপ্ত। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। উল্টো প্রযুক্তির দাপটে ক্রমেই মার খাচ্ছে এ শিল্প। বছরের ১১ মাস কামারশালায় তেমন একটা কাজ থাকে না বললেই চলে। এ কারণে জীবিকার তাগিদে অনেকেই এ পেশা বদলাতে বাধ্য হয়েছেন বা হচ্ছেন। আবার অন্য কোনো পেশার কাজ জানা না থাকায় বেকার হয়ে পড়ছে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকেই।

প্রতি বছর ঈদুল আজহা আসার আগের এক দেড় মাস কামারশালায় ব্যস্ততা দেখা যায়। এবারো তার ব্যতিক্রম না।

আসন্ন ঈদুল আজহা সামনে রেখে কামারপাড়ার কামারশালারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। যেন দম ফেলার ফুসরত নেই তাদের।

কারণ ঈদের বেশ কয়েকদিন আগেই কোরবানির পশু জবাইয়ের কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি তৈরির কাজ সম্পন্ন করতে হবে। অর্ডারের কাজ ছাড়া বাকি জিনিসগুলো আগে বানানোর কাজ শেষ করতে না পারলে পুরোটা বিক্রি করা যাবে না। এতে তৈরি করা জিনিসপত্র আটকে যাওয়ার ভয় থাকে। আর এমনটা হলেই মন্দার যুগে তাদের লোকসান গুণতে হবে।  

বগুড়া শহরের গন্ডগ্রাম, চেলোপাড়া, মাদলা, কলোনি জোড়া ব্রিজসহ কয়েকটি এলাকার কামারশালার কাজে নিয়োজিত কামারদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা যায়।  

কামারশালায় পশু কোরবানির জন্য ছুরি, চাপাতি, ছোট-বড় দা ও বটিসহ নানা ধরনের সরঞ্জামাদি তৈরিতে ব্যস্ত গৌরাঙ্গ চন্দ্র। বগুড়ায় কামারপাড়া কাজে ব্যস্ত এক কামার।  ছবি: বাংলানিউজকাজের ফাঁকে গৌরাঙ্গ চন্দ্র বাংলানিউজকে বলেন, বাপ-দাদার আমলে কামারশিল্পের বেশ চাহিদা ছিল। এ কারণে বংশ পরম্পরায় তিনি নিজেকে এ কাজের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেন। এ পেশাতেই তার বর্তমানে প্রায় চার যুগ চলছে। এখন অন্য কোনো কাজ করার মতো অবস্থাও নেই। তাই কোনো রকম দিনাতিপাত চলে যাচ্ছে। তবু আগুনের লেলিহান শিখায় কামারশালায় লোহা পোড়াতে বাধ্য তিনি-যোগ করেন গৌরাঙ্গ।  

এ সব কথার ফাঁকেই আগুনের লেলিহান শিখায় রক্ত বর্ণ ধারণ করছিল লোহা খণ্ড। তা কয়লার ভেতর থেকে বের করে হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর পর পানিতে  ভেজানো হলো। এভাবেই যে কোন জিনিস তৈরির প্রক্রিয়া পুরোপুরি সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কাজ চলে কামারশালায়। পরে কাঙ্খিত জিনিসটি তৈরি হওয়ার পর তা ধার দেওয়া হয়। শানের ঘষায় শানিত হয় সেই কাঙ্খিক জিনিসটি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এখন প্রত্যেকটি কামারশালায় টুং টাং শব্দে মুখরিত।

কামারশালার কাজল কুমার বাংলানিউজকে জানান, কামারশালার আগের সেই স্বর্ণ যুগ আর নেই। বর্তমানে যুগটা প্রযুক্তির ছোঁয়ায় যন্ত্র নির্ভর হয়ে পড়েছে। এতে তাদের তৈরি করা পণ্যের চাহিদাও একেবারে তলানীতে নেমে এসেছে। এ কারণে বছরের ১১ মাস তাদের তৈরি করা পণ্য একেবারে কম বিক্রি হয়। তবে কোরবানির ঈদ এলে চিত্রটা অনেক পাল্টে যায়।

তিনি আরও জানান, অনেকেই কোরবানির পশু জবাইয়ের বড় ছুরি, চাপাতি ও চামড়া ছাড়ানোর চাকু নতুন করে বানিয়ে নেন। আবার অনেকেই বাড়িতে থাকা এসব সরঞ্জামাদি মেরামত করে নেন।  

এছাড়া নিজেরাও চাহিদা অনুযায়ী ঈদ কেন্দ্রিক জিনিসপত্র বানিয়ে দোকানে রাখেন। প্রত্যেক বছর এ সময়টাতে তাদের কাজের পাশাপাশি বেশ ভালো বেচাবিক্রি হয় (যোগ করেন কাজল)।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৯
এমবিএইচ/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।