ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আইন অনুসারে প্রটোকল সুবিধা চলমান রাখার নির্দেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১৯
আইন অনুসারে প্রটোকল সুবিধা চলমান রাখার নির্দেশ

ঢাকা: সংবিধান, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম) ও দেশের আইন অনুসারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রটোকল দিতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে কোনো ধরনের ব্যর্থতা ছাড়াই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুসারে তাদের প্রটোকল সুবিধা চলমান রাখতে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীর করা এক রিট নিষ্পত্তি করে বুধবার (৭ আগস্ট) বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশনা দেন।  
 
প্রত্যেক জেলা জজকে আদেশের অনুলিপি অবিলম্বে পাঠাতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জন প্রশাসন সচিবের কাছে এ অনুলিপি পাঠাতে বলা হয়েছে।  
 
আদালতে রিট আবেদনটি দায়ের করেন আইনজীবী শাহীনুর রহমান।
 
রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী একরামুল হক টুটুল, সৈয়দ মামুন মাহবুব ও তাপস কুমার বিশ্বাস। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
 
‘রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউ ভিভিআইপি বা ভিআইপি নন’ বলে আদালতের করা মন্তব্যকে কিছু কিছু গণমাধ্যম ‘হাইকোর্টের আদেশ’ বলে রিপোর্ট প্রকাশ করে। এসব প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করেন ওই আইনজীবী।
 
আদেশের পর একরামুল হক টুটুল সাংবাদিকদের বলেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিসহ সাংবিধানিক পদধারীদের এবং রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) অনুযায়ী যারা যারা প্রটোকল পাচ্ছিলেন, তাদের আগের মতোই প্রটোকল দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
 
আদেশে বলা হয়, ‘শুনানিতে আইনজীবী বলেছেন যে, (তিতাস ঘোষের ক্ষতিপূরণের রিটে) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ ‘দেশে কোনো ভিআইপি নেই’ বলে কোনো আদেশ দেননি। কিন্তু তারপরও কিছু অনলাইন গণমাধ্যম আদালতের আদেশ না দেখেই এ নিয়ে ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার করেছে। ’
 
আদালত বলেন, ‘এটা বোঝা উচিত যে আমরা (আদালত) মামলা বোঝার জন্য কিছু কথা বলি, কখনো তা বিষয়বস্তুর বাইরে গিয়েও বলা হয়। আমরা যা বোঝাতে চাই, সেই বার্তা কেউ কেউ বুঝতে ভুল করেন। তাই আদালতের রায় প্রকাশ পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শুনানিকালে করা মন্তব্যকে চূড়ান্ত হিসেবে ধরে নেওয়াটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে প্রকৃত সত্য জানতে রায় প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাই শ্রেয়। ’
 
‘এটা প্রত্যেকেরই মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, যখন একজন বিচারপতি তার চিন্তা নিয়ে আদালতে কথা বলেন বা মন্তব্য করেন, সেই মন্তব্যকে চূড়ান্ত ধরে নেওয়াটাই ঝুঁকিপূর্ণ। ’
 
আদালত আরও বলেন, ‘চূড়ান্ত রায়ে আদালত তার চিন্তা ও চেতনা প্রকাশ করার সুযোগ পেয়ে থাকে। সেই চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত এরকম একটি সাধারণ মন্তব্যকে কেন্দ্র করে জনগণ কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হবে না বলে প্রত্যাশা করি। ’
 
আদালত বলেন, ‘সাংবাদিকরা রাষ্ট্র ও সমাজের মুখপাত্র হিসেবে সংবাদ তুলে ধরেন। আমরা সাংবাদিকদের মর্যাদার সঙ্গে দেখি। এ কারণেই এটা প্রত্যাশা করি যে তারা খুবই দায়িত্বশীলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। যে দায়িত্বশীলতা আংশিক নয়, পুরো সত্য তুলে ধরবে। ’

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নড়াইল কালিয়া পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিতাস ঘোষ (১১) গুরুতর আহত হয়। ওই সময় তাকে খুলনার একটি হাসপাতালেভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তার পরিবার আইসিইউ সম্বলিত একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ২৫ জুলাই তাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যেরওনা হন।

রাত ৮টার দিকে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌ-রুটের শিবচরের কাঁঠালবাড়ি ১ নম্বর ভিআইপি ফেরিঘাটে পৌঁছায় অ্যাম্বুলেন্সটি। তখন কুমিল্লা নামে ফেরিটি ঘাটে যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় ছিল। সরকারের এটুআই প্রকল্পের যুগ্ম-সচিব আবদুল সবুর মণ্ডল পিরোজপুর থেকে ঢাকা যাবেন- তাই ওই ফেরিকে অপেক্ষা করার জন্য জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ঘাট কর্তৃপক্ষকে বার্তা পাঠানো হয়।

তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর ফেরিতে ওঠে অ্যাম্বুলেন্সটি। কিন্তু এর মধ্যে মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে মাঝপদ্মায় অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যায় স্কুল ছাত্র তিতাস।
 
এ ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে তিতাসের পরিবারকে তিন কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। এই রিট আবেদনের ওপর শুনানিকালে গত ৩১ জুলাই হাইকোর্ট বলেন, ‘পৃথিবীর সব জায়গায় অ্যাম্বুলেন্স, অগ্নিনির্বাপণে ফায়ার সার্ভিস ও নিরাপত্তার জন্য পুলিশের গাড়ি যেতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। আমাদের এখানে কি হয়? ভিআইপি কারা ও ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স দিয়েছেন কি?’

তখন আইনজীবী জহির উদ্দিন লিমন বলেন, ‘দেশে ভিভিআইপি শুধু রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। ’ আদালত বলেন, ‘ইয়েস। ’
তখন এ আইনজীবী বলেন, ভিআইপিরা শুধু নিরাপত্তা সুবিধা পাবেন। নৌ-পরিবহন আইন অনুসারে তারা ফেরি বা জাহাজে ওঠার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন, তবে কোনোভাবেই জাহাজ বা ফেরি থামিয়ে রাখতে পারবেন না।

এসময় আদালত বলেন, ভিআইপি থাকলেও অ্যাম্বুলেন্স অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগে যেতে দেওয়া হয়ে থাকে, কেননা এর সঙ্গে একজন মানুষের জীবনের প্রশ্ন জড়িত। এরা ভিআইপি নন। এরা সার্ভেন্ট অব দ্যা স্টেট (প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী)। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে আলাদাভাবে দেখা হয়। তাদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয় থাকে। এটা অন্য কারো ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। জরুরি সেবা অ্যাম্বুলেন্স, অগ্নিনির্বাপণে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেতে দেওয়ার বিধানও আছে।
 
এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর হাইকোর্টের একজন বিচারপতিকে প্রটোকল দিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে খুলনার প্রশাসনকে চিঠি দেয়। এই চিঠি নিয়ে কিছু গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ছাড়া অন্য কেউ ভিআইপি নয় বলে হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছেন। এরপরও হাইকোর্টের বিচারপতির জন্য ভিআইপি প্রটোকল চাওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট আবেদন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১৯
ইএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ