ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

টাংগুয়ার হাওরে নৌ মালিকদের হাতে জিম্মি পর্যটকরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৯
টাংগুয়ার হাওরে নৌ মালিকদের হাতে জিম্মি পর্যটকরা

সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জে টাংগুয়ার হাওর। বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট হিসেবে পরিচিত এ হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পর্যটকদের সংখ্যা। প্রতিদিন আসছেন শত শত পর্যটক। বিশেষ করে সরকারি ছুটি বা বন্ধের দিন (শুক্র ও শনিবার) স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে টাংগুয়ার হাওরে আসা পর্যটকদের ভিড় জমে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য পর্যটকরা এলেও বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক ট্যুরগ্রুপ ও নৌ মালিকের সিন্ডিকেটের কারণে তা অনেকটা বাধাগ্রস্ত হয়। নৌকার ভাড়া নির্ধারিত মূল্যের চাইতে বেশি আদায় করে নৌ-মালিকরা।

দিন দিন বেড়েই চলেছে নৌকা ভাড়া। বিগত কয়েকদিন স্থানীয় প্রশাসন নৌকা ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেও সেটি মানছেন না তারা। আর এখন বেশি পর্যটক আসায় ভাড়ার নৈরাজ্য আরও বেড়ে গেছে। পর্যটক বেশি এলে নৌকার চাহিদা বেড়ে যায়, ফলে এই সুযোগে নৌ মালিকরা ভাড়াও বাড়িয়ে দেন।

স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জান যায়, গেল ১০ আগস্ট নৌ মালিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে একটি সুনির্দিষ্ট নৌকা ভাড়া ঠিক করা হয়। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ ইমতিয়াজের নির্দেশনায় প্রতিটি নৌকায় নির্দিষ্ট ভাড়ার চার্ট লাগানো হলেও তা মানতে রাজি না নৌ মালিক ও অনলাইন ভিত্তিক ট্যুরগ্রুপ গুলো। এতে করে প্রশাসনের নির্ধারিত ভাড়া তোয়াক্কা না করেই মনগড়া নৌকা ভাড়া নিচ্ছে তারা। শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি থাকায়
পর্যটকদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া নিয়ে তাদের সৌন্দর্য উপভোগের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে এইসব গ্রুপগুলো। তাই দিন যতোই যাচ্ছে নৌ মালিক ও বিভিন্ন গ্রুপগুলো তাদের ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়ায় টাংগুয়ার হাওরে কমতে বসেছে পর্যটক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপ ও বড় বড় নৌ মালিকদের সহায়তায় প্রশাসনের ভাড়া মানতে রাজি না তারা। তাদের দাবি প্রশাসন তাদের সঙ্গে কোনো বৈঠক না করেই নৌকা ভাড়া নির্ধারণ করেছে।
তাছাড়া অনলাইন ট্রাভেল গ্রুপ টিজিবির নৌকা সিন্দাবাদ তরীর দুই দিন আর একরাতের ভাড়া ১৮ হাজার উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়। যা প্রশাসন নির্ধারণ করা চেয়ে বেশি। একই সঙ্গে টাংগুয়ায় চলাচলকারী বেশ কয়েকটি নৌকা
ভাড়া হাঁকছেন প্রশাসন নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অনেক বেশি।

এব্যপারে সিন্দাবাদ তরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কিরণ নামের একজন দাবি করেন, তাদের নৌকা সবচেয়ে বড় এবং এর ভাড়া দুই দিন একরাতে ১৬ হাজার টাকা। কিন্তু উপজেলা প্রশাসনের নির্ধারিত ভাড়ার দামের সঙ্গে মিল কেন নেই সেই প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, এ ভাড়ার চার্ট আমাদের জন্য নয়, ছোট নৌকার ভাড়া এমন। আমাদেরটার ভাড়া ১৬
হাজার টাকা, আপনি চাইলে অন্য নৌকা দেখতে পারেন।

অন্যদিকে ভবঘুরে ট্যুর গ্রুপের মালিক পরাগ আহমেদ বলেন, আমরা ঢাকা থেকে পর্যটকদের একটি ইভেন্টের মাধ্যমে এখানে নিয়ে আসি। আমাদের নিজস্ব নৌকা রয়েছে। একটি নৌকায় ৪ জন মানুষ কাজ করে। তাছাড়া আমাদের নৌকায় বিভিন্ন রকমেরর সুযোগ সুবিধা রয়েছে। কিন্তু প্রশাসন যে ভাড়া নির্ধারণ করেছে তা অযৌক্তিক এবং এজন্য আমাদের নৌকা মালিকদের সঙ্গে কথা বলেননি। আমরা এই নৌকা ভাড়া মানি না। এটা আমাদের ব্যবসা আর সেটার ক্ষতি হলে আমাদের পথে বসতে হবে।

অন্যদিকে, তাহিরপুরের বিভিন্ন নৌঘাটসহ ৬টি স্পটে টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়েছে নির্ধারিত নৌকা ভাড়ার চার্ট। টাংগুয়ার হাওরে চলাচলকারী নৌকাগুলোকে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে নির্ধারণ করা হয়েছে নৌকা ভাড়া, যা উপজেলা প্রশাসনের
সঙ্গে নৌকার মালিকদের বৈঠকে চূড়ান্ত করা হয়।

সে হিসেবে সর্বাধিক ৪০ জন যাত্রী ধারণে সক্ষম নৌকার দু’দিন আর একরাতের ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ১২ হাজার টাকা। স্থানীয় নৌকার মালিকরা এটা মেনে নিলেও এ নির্দেশনা আমলে নিচ্ছেন না ঢাকা থেকে পরিচালিত নৌকার
মালিকরা। বরং উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের মনগড়া ভাড়া দাবি করে পোস্ট দিচ্ছেন।

এব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা কামাল মিয়া বলেন, প্রশাসনের নির্ধারিত ভাড়া যদি কার্যকর হয় তাহলে আমাদের টাংগুয়ার হাওরের পর্যটকদের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি হবে। কিন্তু যদি ইচ্ছামতো ভাড়া নেওয়া হয় তাহলে একদিন
পর্যটক শূন্য হয়ে যাবে আমাদের এই প্রিয় পর্যটন স্পটটি। প্রতিদিনই ফেসবুকে মনগড়া ভাড়া দেখি, কিন্তু প্রশাসন নির্ধারণ করা ভাড়া এখানের স্থানীয় নৌ মালিকরা ছাড়া ঢাকার বা তার বাইরের কোনো নৌ মালিক বা গ্রুপকে তা মানতে দেখি না।

এ ব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ ইমতিয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, প্রশাসনের নির্ধারিত ভাড়া যদি কোনো নৌ মালিক না মানেন, তাহলে তাকে জরিমানার সম্মুখিন হতে হবে। যদি কোনো পর্যটক প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেন তাহলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা ভূমি অফিসারের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৯
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।