এই দুরবস্থার মধ্যেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার ২ নং কপিলমুনি ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে কাজ করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
ফলে প্রতিনিয়ত সেবা নিতে আসা এ ইউনিয়নের ২২ গ্রামের সাধারণ মানুষ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
এই বুঝি ভেঙে পড়লো ছাদ। বৃষ্টি হলে ছাদ চুইয়েও পড়ছে পানি। এতে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে মূল্যবান অনেক ফাইলপত্র। বিভিন্ন জটিলতায় আটকে আছে নতুন কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প। ফলে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়েই অফিস করছেন চেয়ারম্যানসহ পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এলাকাবাসী বলছেন, আজও সেই কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নবঞ্চিত পাইকগাছা উপজেলার ২ নং কপিলমুনি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন। প্রায় ৫ যুগ ধরে এই ভবনটিতে অসংখ্য মানুষের সেবা নিশ্চিত হলেও ভবনের সেবায় এগিয়ে আসেনি কেউ। সারাদেশে দৃষ্টিনন্দন ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণ হলেও কপিলমুনিতে তার ব্যতিক্রম।
জানা যায়, জেলার পাইকগাছা উপজেলার বাণিজ্যিক শহর কপিলমুনি বাজারের উপর ১৯৬০ সালে মাত্র ৫ শতক জমিতে কপিলমুনি ইউনিয়ন পরিষদের ভবন স্থাপিত হয়। দ্বিতল ভবনটির দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়ছে, মাথার উপর ছাদ তাও ভেঙে পড়ছে। দোতলায় ৪টি কক্ষ, যার মেঝেতে খোয়া ও বালি উঠে গেছে অধিকাংশ জায়গায়, কোনো কোনো জায়গায় ঢালাইয়ের নষ্ট রড বেরিয়ে উঁকি মারছে। নিচতলার ৩টি কক্ষ পরিত্যক্ত যেখানে বর্তমানে সাপ, পোকামাকড়ের বসবাস। জানালাগুলো তাও ভেঙে গেছে। তারপরও ২২ গ্রামের মানুষ নিত্যসেবা নিচ্ছেন এই ইউনিয়ন পরিষদ ভবন থেকে। একেবারেই যেন বাধ্য হয়ে তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, সচিব ও সাধারণ মানুষ নিত্যকাজ মেটাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, একটি আধুনিক ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য ২৫ শতক জমি প্রয়োজন হয়, কিন্তু সেখানে রয়েছে মাত্র ৫ শতক, যার ফলে আটকে রয়েছে আধুনিক ভবন নির্মাণের কাজ। জরাজীর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটি এরইমধ্যে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
ইউপি ভবনে সেবা নিতে আসা মো. হাসান বলেন, সব জায়গায় দৃষ্টিনন্দন ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ হলেও আমাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিত্যক্ত ভবনে সেবা নিতে আসতে হয়। জানি না কখন কোন দুর্ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে কপিলমুনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কওছার আলী জোয়ার্দার বাংলানিউজকে বলেন, পরিত্যক্ত জরাজীর্ণ ভবনে বর্তমানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইউপি সদস্য, সচিব ও গ্রামপুলিশ নিয়ে পরিষদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আধুনিক ভবনের জন্য আমরা জমি দেখছি। সুবিধামত জমি না পাওয়ায় আধুনিক ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজে বিলম্ব হচ্ছে। বর্তমান ভবনটি বসারও উপযোগী নয়। তবু বাধ্য হয়ে সেখানে কাজ করতে হচ্ছে। জানি না কখন কোন দুর্ঘটনা ঘটে।
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, আমি চেয়ারম্যানের আগে ইউপি সদস্য ছিলাম। প্রায় ২০ বছর ধরে ভবনের এ রকম দুরবস্থার মধ্যেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে চলেছি। জানি না কবে নতুন ভবন করে সেখানে কাজ করতে পারবো?
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুলিয়া সুকায়না বাংলানিউজকে বলেন, আধুনিক ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণে ২৫ শতক জমির প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে জরাজীর্ণ ভবনটি যেখানে আছে সেখানে মাত্র ৫ শতক জমি। যে কারণে নতুন ভবনের জন্য জমির প্রয়োজন। ইউনিয়ন পরিষদটি বাজারের উপর হওয়ায় এর আশেপাশে নতুন ভবনের জায়গা পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে গেলেও স্থানীয়রা অনেকে সরাতে দিতে চাচ্ছে না। যে কারণে জরাজীর্ণ ভবনের পরিবর্তে আধুনিক কমপ্লেক্স নির্মাণে বিলম্ব হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৯
এমআরএম/জেডএস